ফেসবুকে মার্কিন নারী সেনা কর্মকর্তার ছবি ব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎকারী চক্রের ১৫ বিদেশি নাগরিককে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
শুক্রবার (২৮ আগস্ট ) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসীম শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
কারাগারে যাওয়া আসামিরা হলো— নুবেকহুকাওয়া দারা (৩০), চাওয়ামা জন ওকচুকাওয়া (৪০), উচেনা দামিয়ান এমসিয়ানি (৩০), চিসম অ্যান্থনি এনওয়েনেজ (৩৫), সিমন ইফচুকাওদে ওকাফর (৩০), হেনরি ওসিতা ওকচুকাওয়া (৩১), ইফেয়ানি জনপল চিনওজে (৩২), ওকেকে পিটার (৩২), এমেকা ডোনানটস (৪৮), গোজেই অনয়েদো (৪৭), পিটার চিকা আকপু (৪৮), ওবিন্না সানডে (৪০), নওয়ান্না ইয়ং (৩৪), জারামিয়া চুকয়ুদি এজোবি (৩৪) ও স্টিফেন ওজিমা ইবিয়াকোজে (৩৪)।
আদালতের সংশ্লিষ্ট থানার সাধারণ নিবন্ধন (জিআর) শাখা থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
আদালতের সূত্র জানায়, শুক্রবার রাজধানীর পল্লবী থানার মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক জিহাদ হোসেন আসামিদের আদালতে হাজির করেন। মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক এ আদেশ দেন।
এরআগে বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) রাজধানীর পল্লবীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অর্গানাইজড ক্রাইমের একটি টিম। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৯টি ল্যাপটপ, ২২টি মোবাইল ও ৫টি হিসাবের ডায়েরি উদ্ধার জব্দ করা হয়। গ্রেফতার ব্যক্তিরা সবাই নাইজেরিয়ার নাগরিক।
শুক্রবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ রেজাউল হায়দার।
তিনি বলেন, ‘ফেক ফেসবুক আইডি ও হোয়াটসঅ্যাপে মার্কিন নারী সেনা কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের মানুষের সঙ্গে ব্যক্তিগত ছবি পাঠিয়ে বন্ধুত্ব তৈরি করে এই চক্রটি। এরপর মেসেজে জানায়, সে ইয়েমেন, আফগানিস্তান বা সিরিয়াতে আছে। তার কাছে কয়েক মিলিয়ন ডলার রয়েছে, কিন্তু ওই দেশে যুদ্ধ চলায় যে কোনও সময় তার এই সম্পদ নষ্ট হতে পারে। তাই ঘনিষ্ট বন্ধু হিসেবে এসব ডলার বা সম্পদ সে গিফট করতে চায়। যদি সে বেঁচে থাকে তা ফেরত নেবে। এমন প্রলোভন দিয়ে প্রথমে বন্ধুদের ঠিকানাসহ মোবাইল নম্বর নেয়। পরে ওই ঠিকানায় বন্ধুদের মেসেঞ্জারে বা হোয়াটসঅ্যাপে গিফট প্যাকেটের ছবি এবং একটি এয়ারলাইন্সে গিফট প্যাকেট বুকিংয়ের রিসিট কপি পাঠায়। এর দু’দিন পর ভুক্তভোগীর মোবাইলে ফোন করে ভিডিও কলে এয়ারপোর্ট কাস্টমস অফিসে থাকা গিফট প্যাকেট দেখায় এবং ভ্যাট বাবদ বিভিন্ন ধাপে টাকা নিতে থাকে।
সিআইডির কর্মকর্তারা জানান, সম্প্রতি ফরহাদ হোসেন তালুকদার নামে এক সরকারি চাকরিজীবী প্রতারণার শিকার হয়েছেন৷ তার কাছ থেকে বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে সোয়া ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই চক্রটি। পরবর্তীতে সংবাদমাধ্যমে জানতে পেরে আর টাকা না পাঠিয়ে সিআইডিকে বিষয়টি জানান তিনি।
সিআইডি সূত্র জানায়, প্রতারক চক্রের সদস্যরা ভুক্তভোগী ফরহাদের কাছে আবারও টাকা চেয়ে ফোন করলে সিআইডি'র একটি দল হাতনাতে কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয়দারীকারী এক প্রতারককে প্রথমে গ্রেফতার করে। পরে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বাকিদের গ্রেফতার করা হয়।
সিআইডির একজন কর্মকর্তা জানান, এই চক্রটি দীর্ঘ ধরে ভারত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দুবাই, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের মানুষকে গিফট দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করে আসছে। প্রত্যেক দেশেই এই চক্রটির সঙ্গে দেশীয় এজেন্ট কাজ করে।
সিআইডির ওই কর্মকর্তা জানান,গত ২ ও ২১ জুলাই এরকম আরও দুটি প্রতারক চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়েছিল। ওই দুটি প্রতারক চক্রের সঙ্গে এদের অর্থ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এরা দেশের বিভিন্ন স্থানে আলাদা আলাদা অবস্থান করলেও একই চক্রের হয়ে কাজ করে।
আরও পড়ুন:
মার্কিন সেনা কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণা, ১৫ বিদেশি গ্রেফতার