X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

বেতন কাটা বন্ধের দাবি বিমান শ্রমিক লীগের

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৭ অক্টোবর ২০২০, ২৩:২৯আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০২০, ০১:৩৭

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স করোনাভাইরাসের মহামারিতে আর্থিক সংকটের কারণে মার্চ মাস থেকে কর্মীদের ১০ থেকে ৫০ শতাংশ বেতন কম দিচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। তবে বেতন কাটা বন্ধ করা এবং মার্চ থেকে কেটে রাখা টাকা কর্মীদের ফেরত দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিমান শ্রমিক লীগ (সিবিএ)। এই দাবিসহ বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিই’র কাছে আরও ১১ দফা দাবি পূরণের আবেদন করেছে শ্রমিক লীগ।

বিমান শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. মশিকুর রহমান ও  সাধারণ সম্পাদক মো. মন্তাছার রহমানের সই করা আবেদনে বলা হয়েছে— করোনাকালীন সরকারের বিভিন্ন অফিস আদালত বন্ধ বা সীমিত পরিসরে চললেও জাতীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এক মুহূর্তের জন্যও বন্ধ হয়নি। বর্তমানে গ্রাউন্ড ও কার্গো হ্যান্ডলিং খাতসহ বিমানের মাসিক আয় প্রায় ২০০ কোটি টাকার বেশি। বিপরীতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাবদ ব্যয় সাড়ে ১৭ কোটি টাকা (কেটে রাখার পর)। বেতন-ভাতা কেটে না রাখলে এ খাতে ব্যয় হবে ২৪ কোটি টাকা। মাত্র সাড়ে ৬ কোটি টাকা কেটে রাখার ফলে সব স্তরের বিমানকর্মীদের মাঝে যে অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা ও হতাশা তৈরি হয়েছে, তা দীর্ঘমেয়াদে কোম্পানির অর্থনৈতিক লাভের চেয়ে প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে।

সিবিএর দাবি:

১) সব স্তরের বিমানকর্মীদের বেতন-ভাতা কেটে রাখা বন্ধ করতে হবে। মার্চ থেকে কেটে রাখা সমুদয় অর্থ ফেরত দিতে হবে। বন্ধ করে দেওয়া দৈনিক আহার ভাতা বকেয়াসহ পুনরায় চালু করতে হবে।

২) মহামারির মধ্যে অমানবিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া মেডিক্যাল সেবা পুনরায় চালু করতে হবে এবং বকেয়া চিকিৎসা খরচ প্রদান করতে হবে। স্বাস্থ্যবিমার প্রিমিয়াম নিয়মিত পরিশোধের মাধ্যমে বিমানকর্মীদের হাসপাতালের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ফ্রন্টলাইনার বিমানকর্মীদের পূর্ণ চিকিৎসা খরচ ও পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ এবং করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী বিমানকর্মীদের প্রত্যেক পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে। প্রত্যেক বিমানকর্মীকে মানসম্মত ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

৩)  সুষ্ঠু বিভাগীয় তদন্তে দোষী প্রমাণিত না হওয়ার পূর্বে কোনও শ্রমিক-কর্মচারীকে বিনা বেতনে ছুটিতে পাঠানো যাবে না। ইতোমধ্যে যাদের বিনা বেতনে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে, তাদের চাকরিতে ফেরত আনতে হবে।  বিভাগীয় তদন্তের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শ্রম আইন-এর ধারা ২৪ (ঘ) মেনে তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে।

৪)   বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইতোমধ্যে এক বছর অতিবাহিত হয়েছে এমন পে-গ্রুপ ৩(২), ৫ বছর অতিবাহিত হয়েছে ৩(১) এবং ১২ বছর অতিবাহিত হয়েছে পে-গ্রুপ ১-এর সব ক্যাজুয়াল শ্রমিক-কর্মচারীকে দ্রুত স্থায়ীকরণ করতে হবে।

৫)   সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী শ্রমিকদের অবসরের বয়স ৬০ বছর বাস্তবায়ন করতে হবে। যেসব শ্রমিক ইতোমধ্যে অবসরে গিয়েছেন, তাদের পেনশনের পাওনা অর্থ দ্রুত প্রদান করতে হবে।

পেনশন বিধিমালা মোতাবেক ১০০% পেনশন সমর্পণকারীরা অবসর পরবর্তী ১৫ (পনের) বছর জীবিত থাকলে মাসিক পেনশনধারীদের ন্যায় তাদের পেনশন প্রদান বাস্তবায়ন করতে হবে।

৬) এয়ারলাইন্স ব্যবসা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এবং আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিশ্চিত করতে অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক রুটগুলোতে উড়োজাহাজগুলোর সিটের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য দক্ষ, অভিজ্ঞ এবং পেশাগত কর্মকর্তাদের যথাযথ স্থানে পদায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

৭)   লিজে আনা উড়োজাহাজ ফেরত দিয়ে নিজস্ব উড়োজাহাজের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

৮)   নির্মাণাধীন আধুনিক তৃতীয় টার্মিনাল উপযোগী উন্নত গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা নিশ্চিত করার জন্য এখন থেকেই দক্ষ জনবল গড়ে তোলা ও আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

৯)    অধীনস্থ কর্মীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ পরিহারপূর্বক গ্রহণযোগ্য অফিস সংস্কৃতি অনুযায়ী সদাচরণ করতে হবে।

১০)  বাংলাদেশ শ্রমবিধি ৮৭ অনুযায়ী হ্যাঙ্গার কমপ্লেক্সে (১১০০ কর্মী) ক্যান্টিনের ব্যবস্থা করতে হবে। বলাকা ভবনের ক্যান্টিনটি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু করতে হবে।

১১)  বিমান শ্রমিক লীগ, সিবিএ’র নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বেনামি উড়োচিঠির সূত্র ধরে তদন্তের নামে হয়রানি বন্ধ করতে হবে। সুষ্ঠু ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রম পরিচালনায় কর্তৃপক্ষকে শ্রম আইন ১৯৫ ধারা অনুসরণপূর্বক অসৎ শ্রম আচরণ বন্ধ করতে হবে।

এ বিষয়ে সিবিএ সভাপতি মশিকুর রহমান বলেন, ‘৮ জন বিমানকর্মী করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। দেড় শতাধিক বিমানকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। বিমান সরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও অর্থনৈতিক চাপ সামাল দেওয়ার জন্য মার্চ থেকে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে মোট বেতনের ১০ থেকে ৫০ শতাংশ বেতন কেটে নিচ্ছে। দুর্যোগের সময় বিমানের নিজস্ব  চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে সেবা বন্ধ এবং সব ধরনের চিকিৎসার খরচ প্রদান বন্ধ করে দিয়েছে, যা সম্পূর্ণরূপে অমানবিক। দীর্ঘ ৭ মাস যাবৎ বেতন ভাতা কাটা হচ্ছে, অন্যদিকে কোভিড-১৯ প্রতিরোধী অতিরিক্ত স্বাস্থ্যসামগ্রী বাবদ খরচ, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির কারণে বিমানকর্মীরা এখন অর্থনৈতিক ও মানসিকভাবে চরম হতাশায় দিনাতিপাত করছেন। যা সরকারি মালিকানাধীন একটি আন্তর্জাতিক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য মোটেও শুভ লক্ষণ নয়।

/সিএ/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দুবাইতে বিশ্বের ২৩ নম্বর চীনের সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারের সঙ্গে ড্র করে ফাহাদের চমক
দুবাইতে বিশ্বের ২৩ নম্বর চীনের সুপার গ্র্যান্ডমাস্টারের সঙ্গে ড্র করে ফাহাদের চমক
বরিশালে পরিবহন শ্রমিকদের সংঘর্ষ, অর্ধশতাধিক থ্রি-হুইলার ভাংচুর
বরিশালে পরিবহন শ্রমিকদের সংঘর্ষ, অর্ধশতাধিক থ্রি-হুইলার ভাংচুর
জিরোনার মাঠে বার্সেলোনার নাটকীয় হারে চ্যাম্পিয়ন রিয়াল
জিরোনার মাঠে বার্সেলোনার নাটকীয় হারে চ্যাম্পিয়ন রিয়াল
‘ফাইভ স্টার’ ম্যানসিটি, চার গোল হাল্যান্ডের
‘ফাইভ স্টার’ ম্যানসিটি, চার গোল হাল্যান্ডের
সর্বাধিক পঠিত
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
লিথুয়ানিয়ার ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে: বেলারুশ
লিথুয়ানিয়ার ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে: বেলারুশ
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ