X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

এটা কেমন সেবা?

উদিসা ইসলাম
১৫ অক্টোবর ২০২১, ২১:৩৩আপডেট : ১৬ অক্টোবর ২০২১, ১২:১৬

জন্ম নিবন্ধনের ফরম পূরণ করে জমা দিলে একটা সিরিয়াল নম্বর ও সনদ গ্রহণের তারিখ দিয়ে দেওয়া হয়। সেই নিয়ম মেনে সনদ পাওয়ার নির্ধারিত তারিখের পরের দিন নির্দিষ্ট কক্ষে গিয়ে সালমা আখতার পড়েন অকুল পাথারে। কার কাছ থেকে সনদ পাবেন তা জানতেই লেগে যায় আধাঘণ্টা। তিনি যে তথ্যটা কারোর কাছে জানতে চাইবেন,সেই উপায়ও নেই।

এই করোনা মহামারির মধ্যে সব নিয়ম ভেঙে প্রতিটা টেবিলে কর্মকর্তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন জনা-পঞ্চাশেক মানুষ। আধাঘণ্টা পর সালমা জানতে পারেন— সনদ এখনও প্রস্তুত হয়নি। তাকে যেতে হবে কম্পিউটার রুমে। সেখানে গিয়ে বাধে আরেক গোল। নতুন সনদ নয়,তিনি তার সন্তানের হারিয়ে যাওয়া সনদ তোলার জন্য এসেছেন বলে অবহিত করলেও তাকে কেউ কোনও তথ্য দিতে পারলো না। এমনকি এখন করণীয় কী সেটাও একেকজন একেক রকম করে জানাতে থাকে। কেউ বলে আবেদন করার পর মোবাইল ফোনে একটি এসএমএস আসার কথা। সেটি না এলে সনদ পাবেন না। কেউ বলে,এখন অপেক্ষা করা ছাড়া কিছু করার নেই,বা কার কাছে জমা দিয়েছিলেন, তার সঙ্গে যোগাযোগ করে আবেদনটি খুঁজে বের করার ব্যবস্থা করতে হবে। ততক্ষণে পাশাপাশি দুই ঘরে এঘর-ওঘর করতে করতে দেড়ঘণ্টা পার হয়ে গেছে সালমার।

গৃহকর্মী রোমেনা এসেছেন জন্ম সনদ নিতে চতুর্থ দিনের মতো। কাজ থেকে ছুটি নিয়ে বারবার একই কাজে আসতে হচ্ছে বলে ক্ষোভ ঝাড়ছেন একা এক কোনে দাঁড়িয়ে। এই প্রতিবেদক তাকে ক্ষোভের জিজ্ঞেস করায় তিনি বলেন, ‘কেউ বলছে না কেন আমার নিবন্ধনের কাগজ হচ্ছে না। কার কাছি জিগামো। খালি বলে তিন দিন পরে আসেন। কত তিন দিন গেলো। আজগে বলেছি, এরপর ‍ঘুরাইলে বুঝবে।’

১৩ অক্টোবর বুধবার মিরপুর ১০ নম্বরে অবস্থিত জন্ম নিবন্ধন অফিসে গিয়ে দেখা গেলো হয়রানির নানা চিত্র। কোন জায়গায় গেলে কাজটা হবে সেটা জানানোরও কেউ নেই। কেউ সনদের খোঁজ করলে তাকে প্রস্তুত হওয়া শ’খানেক ফাইল ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। একের পর এক ব্যক্তি সেই ফাইলের সনদ ঘেটে দেখার কারণে প্রস্তুত হওয়া বেশ কয়েকটি সনদের কোনা ছিড়ে যেতে দেখা গেছে।

কাজটি কি এতটি জটিল? নিয়ম বলছে, নিবন্ধক কার্যালয়ের জন্য আপনার জন্মস্থান বা স্থায়ী ঠিকানা, বিভাগ, জেলা, প্রভৃতি ধাপ পার হয়ে ওয়ার্ড পর্যন্ত নির্বাচন করতে হবে। অনলাইনে জন্ম নিবন্ধনের আবেদন ফরম প্রথমে বাংলায় (ইউনিকোড) ও পরবর্তীতে ইংরেজিতে পূরণের পর প্রয়োজনীয় সম্পাদনা করে সংরক্ষণ বাটনে ক্লিক করলেই আবেদন পত্রটি সংশ্লিষ্ট নিবন্ধক কার্যালয়ে স্থানান্তিরত হয়ে যাবে। আবেদনকারীর আর কোনও সংশোধনের সুযোগ থাকবে না। অতঃপর পরবর্তী ধাপে প্রিন্ট বাটনে ক্লিক করলে আবেদন পত্রের মুদ্রিত কপি পাওয়া যাবে। সনদের জন্য ১৫ দিনের মধ্যে ওই আবেদন পত্রে নির্দেশিত প্রত্যয়ন সংগ্রহ করে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্রের সত্যায়িত কপিসহ নিবন্ধক অফিসে যোগাযোগ করলেই মিলবে সনদ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী বলেন, অনেক চাপ। একেক জনের একেক রকমের সমস্যা। তার ওপর আছে তদবির। বুথ সিস্টেম করে দিলে এবং সিরিয়াল অনুযায়ী সনদের কাজ করা গেলে হয়রানি কমবে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা সিটি করপোরেশন থেকে চেষ্টা করছি নিখুঁতভাবে সেবাটি দেওয়ার জন্য। কিন্তু নানা কারণে মাঠ পর্যায়ে অনেক সময় হয়ে ওঠে না। আমরা সেটা কভার করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কীভাবে সেবাটাকে আরও সহজ করা যায়, সেদিকে নজর দিচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা রেজিস্ট্রার জেনারেলের নীতিমালার বাইরে যেতে পারি না। আমরা প্রাণপণ চেষ্টা করছি জনগণের হয়রানিটা যাতে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখা যায়।’

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বানিয়ে ফেলুন ৪ স্বাদের লাচ্ছি
বানিয়ে ফেলুন ৪ স্বাদের লাচ্ছি
১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পেলো স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড-চ্যানেল আই কৃষি পুরস্কার
১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পেলো স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড-চ্যানেল আই কৃষি পুরস্কার
ফালুর বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট অনুমোদন
ফালুর বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট অনুমোদন
বিয়ের ১০ মাস পর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ স্বামীর বিরুদ্ধে
বিয়ের ১০ মাস পর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ স্বামীর বিরুদ্ধে
সর্বাধিক পঠিত
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ