X
শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
১২ আষাঢ় ১৪৩২

জামিনে বেরিয়ে আত্মগোপনে চলে যায় জঙ্গিরা

রিয়াদ তালুকদার
২৬ মে ২০২২, ১৭:২২আপডেট : ২৬ মে ২০২২, ১৭:৫৮

জামিনে বেরিয়ে জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা দেশে-বিদেশে আত্মগোপনে চলে যাচ্ছে। তারা দেশের কোথায় আত্মগোপনে রয়েছে, কীভাবে দেশের বাইরে যাচ্ছে, সেসব বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে। র‌্যাবের ক্রিমিনাল ডাটাবেজে জঙ্গিদের তথ্য লিপিবদ্ধ আছে। জামিনে বের হয়ে আত্মগোপনে থেকে যারা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে, তাদেরও চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। পুলিশের এলিট ফোর্স-র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এসব তথ্য জানিয়েছে।

র‌্যাব বলছে, তথ্য প্রযুক্তি থেকে দূরে থাকা, যেমন: মোবাইল ফোন ব্যবহার না করা, ইলেকট্রনিক কোনও ডিভাইসে কথাবার্তা না বলা, এমনকি বাসার বাইরে বেশি না বের হওয়া—এসব কারণে তারা অনেকটাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আড়ালে থেকে যায়।

র‌্যাব জানায়, গোয়েন্দা তথ্য এবং এলাকাবাসীর বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে তারা অভিযান পরিচালনা করে থাকে এবং বিভিন্ন সময় জঙ্গিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। ২ হাজার ৮০০ জন জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হলেও অনেকেই জামিনে বাইরে রয়েছে। যারা জামিনে বের হয়েছে, তাদের নজরদারিতে রাখা হচ্ছে।

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বোমা পুঁতে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা এবং রমনা বটমূলে বোমা হামলার মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি জঙ্গি সংগঠন হুজিবি’র প্রতিষ্ঠাতা আমির মুফতি আব্দুল হাইকে (৫৭) বুধবার (২৫ মে) গ্রেফতার করে র‌্যাব। বিভিন্ন মামলা থাকায় ২০০৬ সাল থেকে আত্মগোপনে ছিল মুফতি আব্দুল হাই।

র‌্যাব বলছে, সেই সময় থেকেই আব্দুল হাই কুমিল্লার গৌরীপুরে আত্মগোপনে চলে যায়। সেখানে তার শ্বশুরবাড়িতে থেকে শ্বশুরের কেরোসিন ও সয়াবিন তেলের ডিলারশিপের ব্যবসা দেখাশোনা করতো। সারা দিন ব্যবসা দেখাশোনা করতো এবং রাতে ওই দোকানেই ঘুমাতো।

দেশে কী পরিমাণ জঙ্গি সংগঠনের সদস্য জামিনে বের হয়ে বাইরে রয়েছে—এমন প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য নেই। র‌্যাবের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে যখনই এ ধরনের কোনও খবর গোয়েন্দা শাখা পায়, সেই অনুযায়ী খোঁজ-খবর নেয় এবং জামিনে বের হয়ে কেউ যদি আবারও জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ে বা নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা করে, তাদের বিষয়ে নজরদারি বাড়ানো হয়। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অনেকেই জামিনে বেরিয়ে আসে। জামিনে বাইরে রয়েছে অনেক জঙ্গি সদস্য। আমরা একাধিকবার অনেক জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছি, যারা নাশকতার পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত ছিল।’

গ্রেফতার আব্দুল হাই সম্পর্কে বলতে গিয়ে র‌্যাব জানায়, ১৯৮১ সালে ভারতের দেওবন্দ দারুল উলুম মাদ্রাসায় ভর্তি হয় আব্দুল হাই। ১৯৮৫ সালে সেই মাদ্রাসা থেকে মাস্টার্স সমতুল্য দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করে। ১৯৮৫ সালে সেই দেশের নাগরিক হিসেবে পাসপোর্ট তৈরি করে এবং পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে এসে এক বছর থাকার পর আবার সে দেশে চলে যায়। পরে সেই দেশ থেকে পাকিস্তানি ভিসা নিয়ে ট্রেনে পাকিস্তানের করাচিতে চলে যায়। সেখানকার একটি মাদ্রাসা থেকে দুই বছরের ইফতা কোর্স সম্পন্ন করে মুফতি টাইটেল অর্জন করে সে।

১৯৮৯ সালে ওই মাদ্রাসার একাধিক বাংলাদেশিসহ বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি মিরানশাহ বর্ডার দিয়ে আফগানিস্তানে মুজাহিদ হিসেবে গমন করে। সেখানে বাংলাদেশের কয়েকজন জঙ্গি সদস্য এবং পাকিস্তানি নাগরিক একটি ক্যাম্পে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানি এক হুজি নেতা এবং বাংলাদেশি এক জঙ্গির নেতৃত্বে একে-৪৭ রাইফেল এবং থ্রি নট থ্রি চালানোর প্রশিক্ষণ নেয়। পরে তারা আফগানিস্তানে গিয়ে তাদের পক্ষে যুদ্ধ করে। ১৯৯২ সালে মুফতি আব্দুল হাই বাংলাদেশে ফিরে আসে। আফগানিস্তানে থাকাকালীন হুজি বি অর্থাৎ হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামি বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে তার আমির নির্বাচিত হয়।

১৯৯২ সালে কক্সবাজারের উখিয়ার একটি মাদ্রাসায় যায়। সেখানে একটি ট্রেনিং ক্যাম্প চালু করে। পাশের দেশের এক জঙ্গি নেতা সেখানে অস্ত্র সরবরাহ করতো এবং গ্রেফতার হওয়া মুফতি আব্দুল হাই ও তার দুই সহযোগী সেখানে প্রশিক্ষণ দিতো। তারা চার বছর সেখানে অবস্থান করে এবং কৌশলে তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু রাখে। ১৯৯৬ সালে যৌথ বাহিনীর অভিযানে সেই ট্রেনিং ক্যাম্প থেকে ৪১ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘জঙ্গি কর্মকাণ্ডের কারণে যাদের বিভিন্ন সময় গ্রেফতার করা হয়, তাদের আদালতে সোপর্দ করা হলে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে বিভিন্ন সময় তারা জামিনে বেরিয়ে আসে। বেরিয়ে এসে অনেকেই আত্মগোপনে চলে যায়, আবার অনেকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। খোঁজ-খবর নিয়ে আমরা যখন জানতে পারি, জামিনে থাকা ব্যক্তিটি তার ঠিকানায় নেই, তখন নজরদারি বাড়াই। ভুল ঠিকানায় খোঁজ-খবর নিয়ে দেখা যায়, অনেকে সেখানে অবস্থান করছেন না, আত্মগোপনে চলে গেছে। আবার অনেক সময় দেখা যায়, অবৈধভাবে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গ্রেফতার আব্দুল হাই জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, হুজি বি জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম অনেকটাই স্তিমিত হয়ে আছে। অন্যান্য সংগঠনের কার্যক্রম চলছে। আব্দুল হাই নিজেকে মুফতি হান্নানের সিনিয়র নেতা মনে করে। জঙ্গি সংগঠনের অন্যান্য নেতার সঙ্গে তাদের মতের অমিল রয়েছে। জঙ্গি নেতা তাজউদ্দীন ও জাহাঙ্গীর আলম এখনও আত্মগোপনে পলাতক রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে রমনা বটমূলে বোমা হামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে।’

 

/আরকে/আইএ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
চমেক হাসপাতাল থেকে ২১ দালাল আটক, জেল-অর্থদণ্ড
চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়কে ডাকাতির চেষ্টা, বিদেশি রাইফেলসহ আটক ২
মাকে মারধরের প্রতিবাদ করায় কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা: দুই আসামি গ্রেফতার
সর্বশেষ খবর
শুনানিতে নারীকে মারধর বিএনপি নেতাদের, ভোক্তা অধিদফতরের কর্মকর্তাকেও লাঞ্ছিত
শুনানিতে নারীকে মারধর বিএনপি নেতাদের, ভোক্তা অধিদফতরের কর্মকর্তাকেও লাঞ্ছিত
ঢাবির মলচত্বরে তরুণীর ফাঁস নেওয়ার চেষ্টা
ঢাবির মলচত্বরে তরুণীর ফাঁস নেওয়ার চেষ্টা
কারাগারে অসুস্থ হয়ে ঢামেকে কামাল মজুমদার
কারাগারে অসুস্থ হয়ে ঢামেকে কামাল মজুমদার
এনবিআর কর্মকর্তাদের আন্দোলন: রাতেই সমাধানের আশা অর্থ উপদেষ্টা ও চেয়ারম্যানের
এনবিআর কর্মকর্তাদের আন্দোলন: রাতেই সমাধানের আশা অর্থ উপদেষ্টা ও চেয়ারম্যানের
সর্বাধিক পঠিত
৮ আগস্ট ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ ঘোষণা নিয়ে ক্ষোভ হাসনাত-সারজিসের
৮ আগস্ট ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ ঘোষণা নিয়ে ক্ষোভ হাসনাত-সারজিসের
মাসদার হোসেন মামলার রিভিউ আবেদনের রায় রবিবার
মাসদার হোসেন মামলার রিভিউ আবেদনের রায় রবিবার
মব না, এটি প্রেসার গ্রুপ: প্রেস সচিব
মব না, এটি প্রেসার গ্রুপ: প্রেস সচিব
পরীক্ষায় বাড়তি সময় না দেওয়ায় পরিদর্শককে মারধর ছাত্রদল নেতার, দিলেন হত্যার হুমকি
পরীক্ষায় বাড়তি সময় না দেওয়ায় পরিদর্শককে মারধর ছাত্রদল নেতার, দিলেন হত্যার হুমকি
দুদকের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ ভুল করেছেন: ডিজি আক্তার হোসেন
দুদকের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ ভুল করেছেন: ডিজি আক্তার হোসেন