X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পি কে হালদার ইস্যুতে ঢাকার চিঠির সাড়া দিচ্ছে না দিল্লি

নুরুজ্জামান লাবু
২০ জুন ২০২২, ২০:৩১আপডেট : ২০ জুন ২০২২, ২১:৩০

ভারতে গ্রেফতার হওয়া আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদার ইস্যুতে ঢাকার চিঠির আনুষ্ঠানিক জবাব দেয়নি দিল্লি। এ কারণে পি কে হালদারকে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি ঝুলে যেতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ভারতে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় পি কে হালদারের বিচার শেষ হতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে। এর আগে তাকে ফিরিয়ে আনার কোনও সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না।

হালদারকে গ্রেফতারের পরপরই বাংলাদেশ পুলিশের এনসিবি শাখা থেকে দিল্লি পুলিশের এনসিবি শাখায় একটি চিঠি দেওয়া হয়েছিল। একমাস পেরিয়ে গেলেও জবাব দেয়নি এনসিবি দিল্লি।

বাংলাদেশ পুলিশের এনসিবি শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক (বর্তমানে অ্যাডিশনাল ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মহিউল ইসলাম বলেন, আমরা একটা চিঠি দিয়েছিলাম। উত্তর আসেনি। বিষয়টি এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখছে। কূটনৈতিক চ্যানেল ব্যবহার করে তাকে ফেরানোর চেষ্টা চলছে।

গত ১৩ ও ১৪ মে টানা দুই দিনের অভিযানে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনার অশোকনগরে পি কে হালদার, তার দুই ভাই প্রীতিশ ও পাণেশ হালদারসহ অন্যতম প্রধান সহযোগী সুকুমার মৃধার বাড়িতে অভিযান চালায় ইডি।

১৪ মে পি কে হালদার, প্রীতিশ, উত্তম মিত্র, স্বপন মিত্র ও সুকুমার মৃধার জামাতা সঞ্জীব হাওলাদারকে গ্রেফতারের পর প্রথম দফায় তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

পরে তাদেরকে কলকাতার অর্থ ঋণ আদালতে দ্বিতীয় দফায় সোপর্দ করে আবারও কয়েকদফা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ভারতের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিরেক্টরেট অব এনফোর্সমেন্ট— ইডি।

পি কে হালদারসহ ভারতে গ্রেফতার হওয়া পাঁচ জনই বিভিন্ন নামে ওই দেশের আধার কার্ড, ভোটারকার্ডসহ জাল-জালিয়াতি করে নাগরিকত্বের কাগজপত্র তৈরি করে বাস করে আসছিলেন।

পি কে হালদার ভারতে গিয়ে শিবশঙ্কর হালদার, উত্তম কুমার মিস্ত্রি হয়েছেন উত্তম মিত্র, স্বপন কুমার মিস্ত্রি স্বপন মিত্র নামে জাল কাগজ তৈরি করেছিলেন।

বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন— দুদক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বিএফআইইউ-এর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই ইডি অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে।

দুদক সূত্র জানায়, পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে দুদক মোট ৩৫টি মামলা দায়ের করেছে। একটি মামলায় আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে। ওই চার্জশিটে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।

দুদক সূত্র আরও জানায়, ২০১৯ সালের শেষের দিকে পি কে হালদারের অর্থ লোপাটের বিষয়টি আলোচনায় আসার পর ওই বছরের ২৩ অক্টোবর দুদকের পক্ষ থেকে তার বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তবে এর আগেই তিনি দেশ ছেড়ে পালান।

তারপর থেকে দুদকের অনুসন্ধানে একের পর এক হালদারের অর্থ কেলেঙ্কারির তথ্য বেরিয়ে আসে। এসব অর্থ তিনি তার নিয়ন্ত্রণাধীন চারটি প্রতিষ্ঠান— ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও পিপলস লিজিং থেকে কাগুজে প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ঋণের নামে হাতিয়ে নিয়েছেন। সবগুলো প্রতিষ্ঠানেই তিনি তার আত্মীয়-স্বজন ও সহযোগী-সহকর্মীদের ব্যবহার করেছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রথম দিকে পি কে হালদার কানাডায় আত্মগোপন করে আছেন বলে জানা যায়। কিন্তু ভারতে তাকে গ্রেফতারের পর জানা গেছে প্রায় তিন বছর ধরে তিনি শিবশঙ্কর হালদার নামে ভারতেই আত্মগোপন করে ছিলেন। ভারতে তার নামে প্রায় তিনশ’ কোটি টাকার সম্পদ খুঁজে পেয়েছে ইডি। এছাড়া মালয়েশিয়াতেও তার বিলাশবহুল ফ্ল্যাট ও সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে।

পি কে হালদারকে গ্রেফতারের পর বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার তোড়জোড় শুরু হয়। এ নিয়ে গত ১৯ মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়। বৈঠকে দুদকের প্রতিনিধিসহ, বিএফআইইউ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা ছিলেন।

বৈঠকে পি কে হালদারকে কীভাবে দ্রুত সময়ে দেশে ফিরিয়ে আনা যেতে পারে সে বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি প্রয়োজনে একটি যৌথ প্রতিনিধি দল ভারতে গিয়ে পি কে হালদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে বলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে ওই বৈঠকের একমাস পেরিয়ে গেলেও অগ্রগতি নেই।

দুদকের মহাপরিচালক সাঈদ মাহবুব খান বলেন, পি কে হালদারকে ফেরাতে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে। আপাতত কোনও আপডেট নেই। কেউ আমাদের চিঠি দিয়ে আপডেটও দেয়নি। পি কে হালদারকে আসামি প্রত্যার্পণ এবং প্রত্যাবাসনের যে আইন রয়েছে, সেই আইন ব্যবহার করে ফিরিয়ে আনতে হবে। এটি এখন পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভর করছে।

দুদকের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, হালদারকে ফেরাতে প্রথম দিকে বেশ তোড়জোড় ছিল। কিন্তু ভারতে একাধিক মামলা হওয়ায় বিষয়টি ঝুলে যায়। ওই মামলার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে ফেরানো কঠিন। ভারতে সে যে বিপুল অর্থপাচার করেছিল সেটার অনুসন্ধানেও সময় লাগবে।

/এফএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় কোনও পরিবর্তন হবে না: ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট
ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় কোনও পরিবর্তন হবে না: ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট
ঘোড়াঘাটে মালবোঝাই দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত
ঘোড়াঘাটে মালবোঝাই দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত