সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণায় থিসিস জালিয়াতি রোধে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। কমিটিকে আগামী তিন মাসের মধ্যে পিএইচডি গবেষণা জালিয়াতি রোধে নীতিমালার খসড়া তৈরি করে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
রবিবার (১৪ আগস্ট) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
কমিটির সদস্যরা হলেন, শিক্ষাবিদ ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক ভিসি ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ঢাবির কম্পিউটার বিজ্ঞানের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাইফুদ্দিন মো. তারেক, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. নাকিব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ, ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, বুয়েটের কম্পিউটার বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাজনীন ও একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোস্তফা আকবর।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. মনিরুজ্জামান লিংকন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
এর আগে ২০২০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ও সমমানের ডিগ্রি কীভাবে অনুমোদন করা হয়, তা অনুসন্ধান করার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) বিষয়টি অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।
এছাড়াও একটি জাতীয় দৈনিকে ‘ঢাবির শিক্ষকের পিএইচডি গবেষণার ৯৮ শতাংশ নকল’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠে আসা ঘটনার তদন্ত করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন আদালত।
পাশাপাশি সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বা গবেষকদের পিএইচডি বা সমমানের ডিগ্রি অর্জনের ক্ষেত্রে জালিয়াতিরোধে থিসিসের প্রস্তাব চূড়ান্ত করার আগে আইসিটি বিশেষজ্ঞ নিয়োগের মাধ্যমে থিসিস প্রস্তাব যাচাইয়ে পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সচিব, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে ‘ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি গবেষণার ৯৮ শতাংশই নকল’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘৯৮ শতাংশ হুবহু নকল পিএইচডি থিসিসের মাধ্যমে ২০১৫ সালে ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রি নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবুল কালাম লুৎফুল কবীর। ২০১২ সালে রাজধানীর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী-গবেষকের জমা দেওয়া একটি ‘স্টুডেন্ট পেপারস’-এর সঙ্গে লুৎফুল কবীরের নিবন্ধের ৯৮ শতাংশ হুবহু মিল রয়েছে। এটিসহ মোট ১৭টি জার্নাল, আর্টিকেল ও গবেষণাপত্রের সঙ্গে নিবন্ধটির বিভিন্ন অংশের উল্লেখযোগ্য মিল পাওয়া গেছে, যেগুলোর সবই লুৎফুল কবীরের অভিসন্দর্ভের (থিসিসে) আগে প্রকাশিত হয়েছে।’
পরে ওই প্রতিবেদনটি সংযুক্ত করে একই বছরের ২২ জানুয়ারি হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন আইনজীবী মনিরুজ্জামান লিংকন। রিটে পিএইচডি গবেষণা অভিসন্দর্ভের (থিসিস) অনুমোদনের আগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র (এনওসি) নেওয়ার বিধান করার নির্দেশনা চাওয়া হয়।