‘প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন: গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (৩১ আগস্ট) অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এবং ইমএমকে সেন্টারের সহায়তায় ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে ছিল এই আয়োজন।
সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন আয়োজক সংস্থার চেয়ারপারসন মহুয়া পাল। তিনি বলেন, ‘প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তারা সুযোগ পেলে সাফল্য অর্জন করতে পারে।’
অনুষ্ঠান সঞ্চালক ও প্রবন্ধ উপস্থাপক অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আলবার্ট মোল্লা বলেন, ‘প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাতটি বিভাগের ১৬টি জেলার ৫০ জন প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তাকে ব্যবসা উন্নয়নে সহযোগিতা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দক্ষতা উন্নয়ন ও ই-কমার্স প্লাটফর্মে যুক্ত করার মাধ্যমে তাদের সহযোগিতা করা হবে। এ লক্ষ্যে ৫০ জন প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তাকে তিন দিন করে দুইটি ব্যাচে দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এছাড়া উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণের জন্য বিভিন্ন ই-কমার্স প্লাটফর্মে তাদের যুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তাদের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘ব্যবসা পরিচালনায় দক্ষতার অভাব, ই-কমার্স ব্যবসা সম্পর্কে ধারণার অভাব, প্রযুক্তিগত ধারণার অভাব, ব্যবসা শুরু ও সম্প্রসারণে মূলধনের অভাব, পরিবারের সহযোগিতা না পাওয়া, ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন, টিআইএন ও অন্যান্য সনদ পেতে বাধা, সরকারি ও বেসরকারি ঋণ প্রদানকারী সংস্থা বা ব্যাংক থেকে ঋণ পেতে বৈষম্য, সরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, প্রশিক্ষণ ও মূল্যায়ন পদ্ধতি সব ধরণের প্রতিবন্ধী নারীদের জন্য প্রবেশগম্য না হওয়ায় প্রতিবন্ধী নারীরা পিছিয়ে রয়েছেন। এছাড়া প্রতিবন্ধী নারীদের উৎপাদিত পণ্যের ওপর ক্রেতাদের আস্থার অভাব রয়েছে। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা ও প্রকল্প থাকলেও এ সব সুবিধায় প্রতিবন্ধী নারীরা যুক্ত হতে পারেন না। উদ্যোক্তা উন্নয়ন বিষয়ক নীতিমালায় প্রতিবন্ধী উদ্যোক্তাদের বিষয়ে কোনও উল্লেখ নেই। যেমন-এসএমই নীতিমালা-২০১৯-এ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিষয়টি অনুপস্থিত।’
বাধাগুলো দূর করতে গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তাদের বিষয়ে নেতিবাচক ধারণা দূর করতে গণমাধ্যম বিভিন্ন প্রচারমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে। সফল প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তাদের কার্যক্রম গণমাধ্যমে তুলে ধরতে পারে। প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তাদের চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারে। নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বিশ্লেষণধর্মী এবং তথ্যবহুল প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারে।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তাদের সাফল্যের কথা আমাকে বিস্মিত করেছে। প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তাদের স্বপ্ন সফল হওয়া কঠিন নয়, শুধু প্রয়োজন সহযোগিতা। আমাদের দায়িত্ব তাদের বিষয়গুলো সমাজের সামনে তুলে ধরা। আমি মনে করি, রাষ্ট্রের উচিত তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া। সাংবাদিক বন্ধুরা যেন প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তাদের সাফল্যের কথা আরও বেশি করে প্রচার করেন সেই উদ্যোগ গ্রহণ করবো।’
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির জয়েন্ট সেক্রেটারি শাহনাজ শারমীন বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, ‘প্রতিবন্ধী নারীদের তিনটি বিষয় উল্লেখযোগ্য– তিনি পারেন, নারী হিসেবে পারেন এবং প্রতিবন্ধী নারী হিসেবে পারেন। একজন সাংবাদিক পারেন একজন প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তার উৎপাদিত পণ্যের বিক্রি বাড়াতে। কারণ, প্রচারেই প্রসার। তাই তাদের বিষয়গুলো নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা করা প্রয়োজন।’
ইএমকে সেন্টারের সমন্বয়কারী (উদ্যোক্তা উন্নয়ন) আয়শা সিদ্দিকা বলেন, ‘উদ্যোক্তা হওয়া সহজ নয়। কিন্তু প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তারা তা প্রমাণ করেছেন। এই কঠিন কাজটি করে যাওয়ার জন্য প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানাই।
প্রতিন্ধী নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে নাটোর থেকে আরেফা পারভীন, সাতক্ষীরা থেকে অষ্টমী মালো, ময়মনসিংহ থেকে চুমকি বিশ্বাস এবং শেফালী আক্তার এবং ঢাকা থেকে কামরুন নাহার তাদের ব্যবসা চালাতে যে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন তা তুলে ধরেন এবং বাধা উত্তরণে গণমাধ্যম কর্মীদের সহায়তা কামনা করেন। সভায় সাংবাদিক, দাতা সংস্থার প্রতিনিধি, সংস্থার কর্মী ও প্রতিবন্ধী নারী উদ্যোক্তাসহ মোট ৫২ জন অংশগ্রহণ করেন।
