X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

ছুটির দিনে শিশুদের ‘শেকড় সন্ধান’

আবিদ হাসান
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৯:৪৮আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২০:২৪

কর্মব্যস্ত ঢাকার কর্মজীবীদের প্রতিদিন সকালে ছুটতে হয় কর্মস্থলে, সন্ধ্যায় যানজট ঠেলে বাসায়। আর বাড়ির শিশু-কিশোরদের যেতে হয় স্কুল-কলেজে। ক্লাস শেষে ছুটতে হয় কোচিং, প্রাইভেট কিংবা টিউশন ক্লাসে। এভাবেই চলে প্রতিদিনের নাগরিক জীবন। তবে ছুটির দিনের পরিবেশ কিছুটা ভিন্ন। এদিন অনেকেই পরিবার, প্রিয়জন ও আপনজনদের নিয়ে ঘুরতে বের হন মানসিক প্রশান্তির খোঁজে। ঘুরতে যান ইতিহাস, ঐতিহ্য ধারণকারী দর্শনীয় স্থানগুলোতে। শিশু-কিশোরদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে জাতীয় জাদুঘরও। 

শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর শাহবাগে গিয়ে দেখা যায়, ছুটির দিনে বড়দের হাত ধরে জাতীয় জাদুঘরে ঘুরতে এসেছে নানান বয়সের শিশু-কিশোররা। মূল ফটকেই মাস্ক পরায় জোর দেওয়া হচ্ছে। মাস্ক না থাকলে প্রবেশে বাধা দিচ্ছেন নিরাপত্তা কর্মীরা।

টিকিট কেটে অভিভাবকদের নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করছে উচ্ছ্ল শিশুরা। রাজধানীর বিদ্যানিকেতন শিশু অ্যাকাডেমির চতুর্থ শিক্ষার্থী আফরা তানজু জাদুঘরে এসেছে বাবা-মায়ের সাথে। তানজুর ভাষায়, ‘আমার ঘুরতে ভালো লাগে, কিন্তু ক্লাস ও আব্বুর অফিসের কারণে ঘুরতে যেতে পারি না। ছুটি পেলেই আব্বু-আম্মুর সাথে ঘুরতে বের হই। আজ জাদুঘরে এসেছি, খুব ভালো লাগছে।’

ছবি: বাংলা ট্রিবিউন

তানজুর বাবা বেসরকারি কর্মকর্তা সৈয়দ আহাদ খান বলেন, কর্মব্যস্ত জীবনে পরিবারকে তেমন সময় দেওয়া হয় না। ছুটি পেলেই তাদের সাথে নিয়ে ঘুরতে বের হই। ভালো সময় কাটানোর চেষ্টা করি।

নটরডেম কলেজের একাদশ শ্রেণি শিক্ষার্থী আরিফ নাওয়াজ বলেন, ঘুরতে যেতে ভালো লাগে। তবে যেখানে ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সংমিশ্রণ রয়েছে, সেসব জায়গায় যেতে বেশি ভালো লাগে। নতুন নতুন জিনিস শেখার সুযোগ হয়, বইয়ে অর্জিত জ্ঞান পূর্ণতা পায়।'

জাদুঘরে কতটা জ্ঞান অর্জন হয়, খোঁজ নিতে ওয়েবসাইটে ঢুঁ মেরে জানা গেলো জাতীয় জাদুঘরের ‘ইতিহাস ও ধ্রুপদী শিল্পকলা’, ‘জাতিতত্ত্ব ও অলংকরণ শিল্পকলা’, ‘সমকালীন শিল্পকলা ও বিশ্বসভ্যতা’, ‘প্রাকৃতিক ইতিহাস’, ‘জনশিক্ষা’ ও ‘সংরক্ষণ রসায়নাগার’ নামে ছয়টি কিউরেটরিয়াল বিভাগ রয়েছে। বিভাগগুলোর একাধিক গ্যালারিতে রয়েছে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্মারক।

ছবি: জাতীয় জাদুঘর ওয়েবসাইট

শিশুরা ‘ইতিহাস ও ধ্রুপদী শিল্পকলা’ বিভাগে প্রায় ৭৩ হাজার নিদর্শন দেখতে পারবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রাগৈতিহাসিক যুগের বিভিন্ন নিদর্শন, প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব বহনকারী মৃৎশিল্প ও অন্যান্য নিদর্শন, পাথরের তৈরি ভাস্কর্য ও স্থাপত্যশিল্পের নিদর্শন, তামা, ব্রোঞ্জ ও কাসার তৈরি ভাস্কর্য, পোড়ামাটির ফলক, লেখমালা, মুদ্রা, অলংকার, পাণ্ডুলিপি, দলিলপত্র, অনুচিত্র, লিপিকলা, প্রতিকৃতি, বরেণ্য ব্যক্তিবর্গের স্মৃতি নিদর্শন এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সাথে সম্পর্কযুক্ত নিদর্শন।

জাতিতত্ত্ব ও অলংকরণ শিল্পকলা বিভাগে রয়েছে বাংলাদেশের জনগণের আবহমান সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও জীবনধারা সম্পৃক্ত লোকজ এবং ধ্রুপদী আঙ্গিকের ঐতিহ্যমণ্ডিত শিল্পকর্ম সংগ্রহ। জাতিতত্ত্ব অংশে বাংলাদেশের জনজীবনের সাংস্কৃতিক ও প্রাত্যহিক কর্মে ব্যবহার্য দ্রব্যাদি, এ দেশে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীসমূহের জীবনযাত্রায় নিত্যব্যবহার্য সামগ্রী এবং বিভিন্ন সামাজিক আচার অনুষ্ঠানে ব্যবহার্য নিদর্শন স্থান পেয়েছে।

ছবি: জাতীয় জাদুঘর ওয়েবসাইট

অলংকরণ শিল্পকলা অংশে বাংলাদেশে তৈরি নিজস্ব কারুশিল্পসহ বাংলাদেশে প্রাপ্ত বিদেশি শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে। এরমধ্যে দৈনন্দিন ব্যবহারের দ্রব্যসামগ্রী, অস্ত্রশস্ত্র, ধাতব শিল্পকর্ম, অলংকার, দারুশিল্প, পোশাক-পরিচ্ছদ, নকশিকাঁথা, মৃৎশিল্প, পুতুল, নৌকার মডেল ও হাতির দাঁতের শিল্পকর্ম উল্লেখযোগ্য। এই বিভাগের ১৬টি গ্যালারিতে এসব নিদর্শন উপস্থাপন করা হয়েছে।

এছাড়াও সমকালীন শিল্পকলা ও বিশ্বসভ্যতা বিভাগে রয়েছে সমকালীন ও বিশ্বসভ্যতার চিত্রকলা, ভাস্কর্য, ছাপচিত্র, কারুশিল্প, ট্যাপেস্ট্রেসহ অন্যান্য অমূল্য শিল্পকর্ম সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রদর্শন। কিউরেটরিয়াল বিভাগগুলোর মধ্যে শিশুদের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় হলো প্রাকৃতিক ইতিহাস বিভাগ। এই বিভাগের ১০টি গ্যালারি মানুষ ও প্রাকৃতিক জগতের মধ্যে পারস্পরিক আন্তসম্পর্ক স্থাপনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এসব গ্যালারিতে রয়েছে শিলা ও খনিজ, প্রস্তরীভূত কাঠ, প্রবাল, প্রাণীর জীবাশ্ম, দুর্লভ প্রজাতির শামুক ও ঝিনুক, সামুদ্রিক মাছ, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় উদ্ভিদ, ফুল ও ফলের নমুনা, ভেষজ উদ্ভিদ ও মসলা জাতীয় নমুনা, ট্যাক্সিডার্মিকৃত সরীসৃপ, স্তন্যপায়ী প্রাণী, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, যেমন- ময়না, ঈগল, নীলকণ্ঠ, বাজপাখি এবং বিশালাকার হাম্পব্যাক তিমির কঙ্কাল। এছাড়াও ভূ-প্রাকৃতিক ও জীব জগতের পরিবর্তনসহ ভূ-তাত্ত্বিক সময়মান তালিকা, হারবেরিয়াম শিট, তৈলচিত্র, মডেল ও রঙিন আলোকচিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপিত প্রদর্শনী তথ্যবহুল ও আকর্ষণীয় করা হয়েছে। গ্যালারিতে উপস্থাপিত বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ, প্রাণী ও প্রস্তরীভূত কাঠ আমাদের হারানো ঐশ্বর্যকে স্মরণ করিয়ে দেয়। সুন্দরবন ও এশিয়ার হাতির ডিওরামা দর্শকদের বিশেষভাবে আকর্ষণ করে।

ছবি: জাতীয় জাদুঘর ওয়েবসাইট

কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে জাদুঘরে দলবেঁধে পরিদর্শন করতে চাইলে রয়েছে ব্যবস্থা। এই কাজটি করে থাকে জাদুঘরের শিক্ষা শাখা। এই শাখাটিসহ  গ্রন্থাগার, ডিসপ্লে, আলোকচিত্র, শ্রুতিচিত্রণ, প্রকাশনা ও মিলনায়তন শাখা মিলিয়ে রয়েছে জনশিক্ষা বিভাগ। এই বিভাগটি  প্রদর্শক প্রভাষক সেবা, স্কুল শিক্ষা কার্যক্রম, বিশেষজ্ঞ বক্তৃতা, সেমিনারসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত শিশু-কিশোরদের নানা প্রতিযোগিতা ও বছরব্যাপী বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে থাকে।

ছবি: জাতীয় জাদুঘর ওয়েবসাইট

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের সংরক্ষণ রসায়নাগার ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের কিউরেটরিয়াল বিভাগগুলো থেকে বিভিন্ন সময়ে পাঠানো নিদর্শনের বৈজ্ঞানিকভাবে সংরক্ষণ ও পুনরানয়নের কাজ সম্পাদন করা এই বিভাগের মূল লক্ষ্য। এ বিভাগের সব কর্মকর্তা সংরক্ষণ বিজ্ঞানের ওপর উচ্চতর বৈদেশিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। সংরক্ষণ রসায়নাগার বিভাগ বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের নিদর্শন ছাড়াও এর শাখা জাদুঘরসমূহের নিদর্শন ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা জাদুঘরের নিদর্শন সংরক্ষণ কাজে সহায়তা প্রদান করে থাকে। এ বিভাগ নিদর্শনের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে আর্দ্রতা, তাপমাত্রা, ক্ষতিকর আলোকরশ্মি, ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ এবং বায়ুমণ্ডলীয় গ্যাস নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করে থাকে।

জাদুঘরটি শনিবার থেকে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। আর শুক্রবার ছুটির দিনে খোলা থাকে বিকাল ৩টা রাত ৮টা পর্যন্ত। সাপ্তাহিক বন্ধ বৃহস্পতিবার। 

ছবি: জাতীয় জাদুঘর ওয়েবসাইট

জাদুঘরের বিদ্যুৎ বিল, মেইনটেনেন্স খরচ বাড়ার কারণে গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে জাদুঘরের টিকিট পূর্ণ বয়স্কদের ২০ টাকা থেকে ৪০ টাকা, শিশুদের ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা করা হয়। তবে টিকিটের এই বাড়তি দাম দর্শনার্থীদের পরিদর্শনে কোনও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারেনি। দর্শনার্থী ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জাদুঘরের এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মকর্তা বলেন, টিকিটের দাম বাড়ালেও দর্শক কমেনি। বরং আরও বাড়ছে ক্রমান্বয়ে। 

জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক কামরুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সব ধরনের সরকারি নির্দেশনা মেনেই জাতীয় জাদুঘরের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ অপচয় রোধে সরকারি নির্দেশনা মানা হচ্ছে।

/ইউএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
ওঠানামা করছে মুরগির দাম, বাড়ছে সবজির
শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে
সর্বশেষ খবর
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
কান উৎসব ২০২৪জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া