X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

খাদ্য নিরাপত্তা প্রকল্পের অর্থে ‘ঢাউস বিদেশ সফর’

রাশেদুল হাসান
০৭ অক্টোবর ২০২২, ২৩:০০আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০২২, ১৭:৩৫

ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী দুই জেলা নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে ১০০ কোটি টাকারও বেশি অনুদান দিয়েছে নেদারল্যান্ডস সরকার। সেই অর্থ দিয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ‘সাপোর্ট ফর প্লানিং, মডেলিং অ্যান্ড ইমপ্রুভিং ঢাকা’স ফুড সিস্টেম প্রকল্প’ হাতে নিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশন (এফএও)। প্রকল্পের প্রায় তিন বছর পেরিয়ে গেছে। দীর্ঘ এই সময়ে প্রকল্পের কোনও সুবিধাই ভোগ করতে পারেননি এলাকার বাসিন্দারা। অথচ এই প্রকল্পের টাকায় একসঙ্গে দুই দেশ সফরে গিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, এ প্রকল্পের আওতায় কর্মকর্তাদের ১০ জনের একটি দল সফর করছেন থাইল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। ১৩ দিনের সফরের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইন্টারন্যাশনাল ওরিয়েন্টেশন অ্যান্ড ট্রেনিং’। তবে সফরে যাওয়া কর্মকর্তাদের একটি বড় অংশেরই নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নেই কিংবা প্রেষণে সংশ্লিষ্ট বিভাগে এসেছেন। আর যারা প্রেষণে এসেছেন, তারা যেকোনও আবার সংশ্লিষ্ট বিভাগে ফিরে যেতে পারেন।

মাত্র পাঁচ মাস আগেই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব মোকাবিলায় ব্যয় সংকোচনে কর্মকর্তাদের অপ্রয়োজনীয় বিদেশ সফরে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। সেই নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল হলেও এমন সময়ে প্রকল্পের অর্থে এমন সফর মূল উদ্দেশ্যকে বিনষ্ট করতে পারে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানিয়েছে, তারা গত ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে এ সফরে গেছেন। আগামী ৮ অক্টোবর পর্যন্ত তারা থাইল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করবেন। তবে এই দীর্ঘ সফরে তারা সেখানে কী শিখবেন, আর তাদের শিখন কী কাজে লাগবে; সে নিয়ে কিছু বলা নেই সরকারি আদেশে।

সফরে আছেন, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য (আইন ও নীতি) শাহনেওয়াজ দিলরুবা খান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এএসএম শফিউল আজম, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম, কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সাজিয়া জামান, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব ও এ প্রকল্পের পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের ব্যক্তিগত সচিব ও সিনিয়র সহকারী সচিব আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ।

এছাড়াও আছেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইমদাদুল হক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা আবদুল হামিদ সরকার, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান সমাজসেবা ও বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা কে এম ফরিদুল মিরাজ।

এছাড়াও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবায়দুর রহমানও তাদের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় যোগদান করেছেন বলে জানিয়েছেন তার সহকর্মীরা।

মন্ত্রণালয়ের উপসচিব এ কে এম মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে বলা হয়েছে, ট্রাঞ্জিটসহ সফরের পুরো সময় তারা দায়িত্ব পালন করছেন বলে গণ্য করা হবে। এই সফরের সব খরচ প্রকল্প থেকে বহন করা হবে।

১০ কর্মকর্তার এই সফরে জায়গা পাননি কোনও স্বাস্থ্য পরিদর্শক, নেই কোনও জনস্বাস্থ্য বিশ্লেষক বা সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞ। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক জনস্বাস্থ্য বিশ্লেষক মো. গোলাম সারোয়ার বলেন, ‘এ ধরনের প্রকল্পগুলো যখন ডিজাইন করা হয় তখন দুই-চার জন সংশ্লিষ্ট লোক রাখা হয়। বাকিরা হন উচ্চ ও মধ্যম শ্রেণির কর্মকর্তা। এতে প্রকল্প যখন শেষ হয়ে যায় তখন এ থেকে দেশ ও জাতির কোনও উপকার হয় না।'

তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণত যাদের বিষয়ে জানাশোনা ও পড়াশোনা আছে, তারাই নিরাপদ খাদ্যের মডেল ও পরিকল্পনা করার জন্য প্রশিক্ষণ পাওয়া উচিত। এতে ফিডব্যাক ভালো আসে। আর এসব প্রশিক্ষণ শুধু প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের দিলে তারা গ্রহণ করার উপযুক্ত নাও হতে পারেন। আবার প্রেষণ শেষ হয়ে গেলে তাদের প্রশিক্ষণ কাজেই আসবে না। প্রশাসনিক কর্মকর্তা যারা সিস্টেমটি ধরে রাখতে পারে।’

স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব ও এ প্রকল্পের পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান সফরকারী দলের সঙ্গে দেশের বাইরে অবস্থান করায় তার মন্তব্য জানা যায়নি। অন্যদিকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীসহ দায়িত্বশীল সংশ্লিষ্ট কয়েকজনকে একাধিকবার চেষ্টা করেও এ বিষয়ে মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তাদের যে উদ্দেশ্য বিদেশে যাওয়া, তা থেকে তারা দূরে সরে গেছেন। তারা যে উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন সেটাই গৌন হয়ে পড়ছে। মুখ্য হয়ে উঠছে, যারা সফরে যাচ্ছেন বা যাদের যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে তাদের ব্যক্তিগত সুবিধা-অসুবিধা। যেটা নিয়ে কথা বলা হচ্ছে, এটাও কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; সার্বিকভাবেই প্রশাসনিক সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠিত দৃষ্টান্ত।'

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে কৃচ্ছতাসাধন ও জনগণের অর্থায়নের বিষয় আছে। যে টাকা অনুদান হিসেবে দেওয়া হয়েছে, এটা জনগণের মঙ্গলের জন্য। এটা জলে ফেলে দেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। এখানে অর্থের অপচয় হচ্ছে। কারণ যারা এ ভ্রমণে গিয়েছেন তাদের কাজের সঙ্গে মোটাদাগে এ উদ্দেশ্যের সংশ্লিষ্টতা নেই। এদিক থেকে তারা সরকারি অর্থে আনন্দ ভ্রমণই করছেন। অন্যদিকে যে উদ্দেশ্যে এটার পরিকল্পনা করা হয়েছে তাও ধূলিস্যাৎ হবে।’

/ইউএস/
সম্পর্কিত
মেয়র আতিকের হুঁশিয়ারিকোথাও এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেলে জেল-জরিমানা
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডেঙ্গু প্রতিরোধে মাসব্যাপী কর্মসূচি ডিএনসিসির
সর্বশেষ খবর
দলের সিদ্ধান্ত না মেনে ভোটে আছেন মন্ত্রী-এমপির যেসব স্বজন
উপজেলা নির্বাচনদলের সিদ্ধান্ত না মেনে ভোটে আছেন মন্ত্রী-এমপির যেসব স্বজন
টিভিতে আজকের খেলা (২৪ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৪ এপ্রিল, ২০২৪)
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক