X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

‘বিগো অ্যাপে’ টাকা পাচারের নেপথ্যের ঘটনা তদন্তে সিআইডি

রিয়াদ তালুকদার
১১ অক্টোবর ২০২২, ২২:০০আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০২২, ২২:০০

‘বিগো লাইভ’নামে সিঙ্গাপুরভিত্তিক অ্যাপের মাধ্যমে আপত্তিকর কনটেন্ট ছড়িয়ে দুই কোটি বাংলাদেশি ব্যবহারকারীর কাছে থেকে ২০ মাসে ১০৯ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। সিআইডির অনুসন্ধান বলছে, হাতিয়ে নেওয়া এই টাকার বেশিরভাগ বিদেশে পাচার করেছে প্রতিষ্ঠানটির সদস্যরা।

সিআইডি সূত্র জানায়, বিগো লাইভ অ্যাপের মাধ্যমে অসামাজিক কার্যক্রমে জড়িত চীনা ব্যবসায়ীর সঙ্গে আরও কেউ জড়িত রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অসাধু উপায়ে আয় করা টাকা পাচারের পাশাপাশি অন্য কোনও সংগঠন বা ব্যক্তির পকেটে এই টাকা ঢুকেছে কিনা, সেটাও তদন্ত করছে সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।

সিআইডি বলছে, বিগো লাইভ অ্যাপের বিষয়ে ৩-৪ মাস ধরে তদন্ত করা হয়। পরে গত ২৫ সেপ্টেম্বর সিআইডি সাইবার ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশন বিভাগের তদন্ত কর্মকর্তা সোহেল রানা বাদী হয়ে এ বিষয়ে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করেছেন। এতে আসামি করা হয়— বিগো বাংলা অ্যাপ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক চীনা নাগরিক ইয়ো জিও,এস এম নাজমুল হক, আরিফ হোসেনসহ দুটি প্রতিষ্ঠানকে। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো— বিগো বাংলা লিমিটেড ও মনসুন হোল্ডিং লিমিটেড। এছাড়া ১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

সিআইডির তদন্তে ওঠে এসেছে— বিদেশি নাগরিক হয়েও বাংলাদেশের দুটি ব্যাংকে ‘বিগো’র নামে ও নিজের নামে লেনদেন করতেন বিগো বাংলা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চীনা নাগরিক ইয়ো জিও। ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত তদন্ত করে সিআইডি বলছে—  ২০ মাসে প্রতিষ্ঠানটি হাতিয়ে নিয়েছে ১০৯ কোটি টাকা। এরমধ্যে ৭৯ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময় ব্যাংক থেকে তোলা হয়েছে আর ও ১৪ কোটি টাকা। বাংলাদেশের ২টি ব্যাংকে থাকা অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। এই দুটি অ্যাকাউন্টে বর্তমানে ২৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা জমা রয়েছে। এসব টাকার বিষয়ে আদালত নির্দেশনা দেবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, বিগো বাংলাদেশ নামের প্রতিষ্ঠানটি অর্থপাচারের জন্য মনসুর হোল্ডিং লিমিটেডের গেটওয়ে ব্যবহার করেছে, যেটি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পেমেন্ট সিস্টেম অপারেটর হিসেবে নিবন্ধন নয়।

বর্তমানে মামলার তদারকির দায়িত্বে থাকা সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিগো বাংলা লাইভ অ্যাপের বিষয়ে  সাইবার শাখা তদন্ত শেষে মামলা করেছে। এখন আমরা তদন্ত করছি। উপার্জিত টাকা কোথায় গেলো, কাদের অ্যাকাউন্টে গেলো, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর পেছনে অন্য কোনও মহলের যোগসূত্র রয়েছে কিনা সে বিষয়েও তদন্ত চলমান রয়েছে।’

যেভাবে টাকা হাতিয়েছে বিগো

যে কেউ বিগো লাইভ অ্যাপের ব্যবহারকারী হিসেবে নিজের স্মার্টফোনে ইনস্টল করে এর কার্যক্রমের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারছেন। লাইভে আসা অশ্লীল অঙ্গভঙ্গিতে থাকা নারীদের কোনও কমেন্ট করতে বা অভিবাদন জানাতে ভার্চুয়াল মুদ্রা ‘ডায়মন্ড’ এবং ‘বিনস’ কিনতে হয়। এগুলোর ভিন্ন ভিন্ন দাম রয়েছে। ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০০ টাকায় কিনতে হয় ভার্চুয়াল ডায়মন্ড এবং বিনস। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমের এসবের পেমেন্ট করতে হয়। মূলত এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে নেগোশিয়েট করে চলে আসছিল এই অবৈধ ব্যবসা। আয়ের একটি ভাগ পেতো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরগুলো। এছাড়া আরেকটি ভাগ চলে যেতো লাইভে এসে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করা ও সেক্স চ্যাটের অফার দেওয়া নারীদের কাছে। এই নারীদের আলাদা টার্গেট বেঁধে দিতো বিগো লাইভ অ্যাপের সংশ্লিষ্টরা।

বিগো লাইভ অ্যাপের ব্যবহারকারী কারা

জানা গেছে, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী থেকে বয়স্করাও সাময়িক মানসিক বিনোদন পেতে ব্যবহার করছে  বিগো অ্যাপ। যা  বর্তমান প্রজন্মের জন্য বেশ ক্ষতিরও কারণ। বিগো অ্যাপ ব্যবহারকারীর তালিকায় প্রবাসীরাও রয়েছেন। সিআইডির তথ্যমতে, দুই ধরনের আইডির মাধ্যমে এই অ্যাপটি পরিচালিত হয়। ব্রডকাস্টার নামে একটি আইডি চালায় এসব তরুণ-তরুণী, যারা অশ্লীল বিনোদন দিয়ে থাকে। আর অন্য আইডিটি চালায় ব্যবহারকারীরা, যারা ভার্চুয়াল ডায়মন্ড ও বিনস কিনে বিনোদিত হয়। এই দুটি অ্যাপ ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ সিআইডির।

যে উপায়ে টাকা পাচার

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যবহারকারীদের ভার্চুয়াল ডায়মন্ড ও বিনস কেনার টাকা বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মার্চেন্ড এজেন্টদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতো বিগো বাংলা লাইভ অ্যাপের সংশ্লিষ্ট দেশি-বিদেশি নাগরিক। এরপর সেই টাকা রাজধানীর গুলশানে এইচএসবিসি ও প্রাইম ব্যাংকের শাখায় বিগোর দুটি অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়। পরে এই টাকা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। এছাড়া বিগোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক চীনা নাগরিক ইয়ো জিও বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ থেকে অন্য দেশে যাবার সময়েও অবৈধ পন্থায় টাকার বিনিময়ে বিপুল সংখ্যক ডলার পাচার করেছে।

যাদের কাছে গেছে বিগোর টাকা

বিগো বাংলার কর্মকর্তা আরিফ হোসেনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয় এক কোটি ২৬ লাখ টাকা। পরে সেই টাকা থেকে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়ো জিও-কে এক কোটি ২৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানের আরেক কর্মী নাজমুল হকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও মোবাইল ব্যাংক নম্বরে জমা থাকা ৬৩ কোটি টাকাও ইয়ো জিও-কে দেওয়া হয়। এছাড়া এজাহারভুক্ত আসামিদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট যাচাই করে টাকা লেনদেনের তথ্য পেয়েছে সিআইডি।

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
লাইভ স্ট্রিমিং অ্যাপ বিগো ও লাইকির মাধ্যমে অর্থপাচার
সর্বশেষ খবর
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
বন ও বনভূমি রক্ষায় কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে হবে: পরিবেশমন্ত্রী
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
বাজারে এলো বাংলা ভাষার স্মার্টওয়াচ ‘এক্সপার্ট’
বাজারে এলো বাংলা ভাষার স্মার্টওয়াচ ‘এক্সপার্ট’
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ