২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে অনলাইন নিরাপত্তা এবং ডিজিটাল সাক্ষরতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর ২৩ লাখ মানুষের কাছে পৌঁছাতে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ‘প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ’ ও ডিজিটাল বাংলাদেশের কানেক্টিভিটি পার্টনার ‘গ্রামীণফোন’। এই ২৩ লাখ মানুষের মধ্যে নারীসহ সাড়ে ৪ লাখ তরুণ সরাসরি প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য সুবিধা লাভ করবে।
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, রবিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আলোচনা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ‘সেফ ডিজিটাল স্পেস ফর গার্লস অ্যান্ড ইয়ুথ’ শীর্ষক এ প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন— মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সিএএমপিই’র নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান, চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার (সিসিএও) হ্যান্স মার্টিন হেনরিক্সন এবং প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্টর কবিতা বোসসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।
অনুষ্ঠানে গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান বলেন, ‘কানেক্টিভিটি পার্টনার ও রেসপনসিবল বিজনেস সিটিজেন হিসেবে ডিজিটাল সাক্ষরতার মাধ্যমে কমিউনিটির ক্ষমতায়ন ও অনলাইনে তাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিশ্বাস করে গ্রামীণফোন। আমরা ২০১৪ সাল থেকে অনলাইনে নানা প্রতিকূলতা প্রতিরোধে শিশুদের সচেতন করে তুলতে এবং স্মার্ট বাংলাদেশের রূপকল্প বাস্তবায়নে জীবনের সব ক্ষেত্রে তরুণদের আপস্কিল করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছি। দেশকে ডিজিটাল করে গড়ে তোলার সঙ্গে তাল মিলিয়ে, একদম প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীসহ সব স্তরের নাগরিকের জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা দ্রুতগতিতে ডিজিটাইজেশনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। টেকসই আগামীর বাংলাদেশ গড়ার জন্য প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীসহ সব নাগরিক যেন নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে।’
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর কবিতা বোস বলেন, ‘আমাদের দেশের তরুণরা আমাদের শক্তি; তারা আমাদের কাজের মূল কেন্দ্রবিন্দু। আমরা শিশু ও তরুণদের উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের মধ্য দিয়ে একটি সমতার সমাজ গড়ে তুলতে চাই, যেখানে তারাই হবে পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি। আর এ কারণেই তাদের প্রয়োজন ডিজিটাল জ্ঞান, প্রয়োজনীয় টুলস ও দক্ষতা, যার মধ্য দিয়ে তারা সমাজে বিদ্যমান লিঙ্গ বৈষম্য নিয়ে ক্ষতিকর ধারণা ও ক্ষমতার অসম সম্পর্ককে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য সহায়ক ডিজিটাল পরিবেশ তৈরি করা, ডিজিটাল বৈষম্য কমিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও সক্ষমতা তৈরি করা এবং সবার জন্য, বিশেষ করে নারী ও তরুণদের জন্য নিরাপদ ডিজিটাল স্পেস তৈরি করতে সরকারি এবং বেসরকারি অংশীদারদের একযোগে কাজ করতে হবে। এটা আমাদের সবার দায়িত্ব।’
২০২১ সালে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতায় গ্রামীণফোন ও টেলিনর গ্রুপ বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান ও থাইল্যান্ড— এ চারটি দেশে একটি সমীক্ষা চালায়। সমীক্ষায় প্রায় ৮৫ শতাংশ বাংলাদেশি তরুণ অনলাইনে সহিংসতাকে অত্যন্ত গুরুতর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন। তাদের মধ্যে ২৯ শতাংশ নিজেরাই অনলাইনে সহিংসতার শিকার৷ করোনা মহামারি চলাকালে অনলাইন সহিংসতার হার ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কিশোরী ও যুব নারীদের মধ্যে সহিংসতার ভয় নিয়ে পরিচালিত একটি অনুসন্ধানমূলক গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশের ৫৬.৬ শতাংশ কিশোরী বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে তাদের অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়— এমন আপত্তিকর মন্তব্য পেয়েছে। এছাড়া, মোট ৭৮.৩ শতাংশ কিশোরী ও নারীর মানসিক চাপ বৃদ্ধি পাওয়া এবং মানসিকভাবে ট্রমায় ভোগার পেছনে অনলাইন হয়রানি দায়ী। ফলশ্রুতিতে, অনেকেই ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার বন্ধ করে দেন, হীনমন্যতায় ভোগেন এবং অপর ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ এড়িয়ে চলেন।
এই সমস্যগুলো সমাধানের লক্ষ্যে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল নরওয়ে, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, গ্রামীণফোন ও টেলিনর ‘সেফ ডিজিটাল স্পেস ফর গার্লস অ্যান্ড ইয়ুথ’ (এসডিএসজিওয়াই) প্রকল্পের মাধ্যমে যৌথভাবে কাজ শুরু করেছে। এই প্রকল্পটি তরুণদের, বিশেষ করে কিশোরীদের তথ্য-অনুসন্ধান জ্ঞান, যোগাযোগ, শিষ্টাচার, ডিজিটাল দক্ষতা, অনলাইন নিরাপত্তা এবং অনলাইন স্পেসে নিরাপদ ও দায়িত্বশীল আচরণ অর্জনে সহায়তা করার মাধ্যমে একবিংশ শতাব্দীর ‘ডিজিটাইজেন’ হিসেবে গড়ে তুলবে। এ প্রকল্পটির মাধ্যমে আড়াই বছরের মধ্যে ডিজিটাল জ্ঞান, দক্ষতা, সহনশীলতা ও নিরাপদ অনলাইন পরিবেশে দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে ২৩ লাখ ৫০ হাজার কিশোরী ও তরুণীদের, যাদের বেশিরভাগই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর।
এই কার্যক্রমের মাধ্যমে, তরুণদের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় দক্ষতাগুলো চিহ্নিত করা হবে এবং প্রশিক্ষণ ও পিয়ার-টু-পিয়ার শিক্ষাসহ আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক শিক্ষাপদ্ধতির মাধ্যমে তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে কিশোরী ও তরুণ জনগোষ্ঠীর উপযোগী ডিজিটাল দক্ষতার ভিত্তি গড়ে উঠবে, আচরণ ও জবাবদিহি সম্পর্কে ধারণা তৈরি হবে, যেখানে সচেতনতামূলক কমিউনিটি-ভিত্তিক কার্যক্রম ও তারুণ্য-নির্ভর ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে কমিউনিটি লিডার গড়ে উঠবে। যা শিশু ও তরুণদের শিখতে এবং ভয় ও বাধামুক্ত অনলাইন স্পেস তৈরিতে ভূমিকা রাখবে।
প্রকল্পটি শেষ হলে ডিজিটাল দক্ষতা ও অনলাইন নিরাপত্তা বিষয়ে সাড়ে ৪ লাখ কিশোরী এবং তরুণ প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জন করবে, যা ২০ লাখ মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
এই প্রকল্প বিস্তৃত পরিসরে প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কিশোরদের উপযোগী দক্ষতা প্রণয়নে কাজ করবে।
