X
সোমবার, ২০ মে ২০২৪
৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

প্রতি মাসে বিল দিয়েও পানি পাচ্ছেন না ৫০০ গ্রাহক

নাসির উদ্দিন রকি, চট্টগ্রাম
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:০০আপডেট : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৮:০০

চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর-পতেঙ্গা এলাকার পাঁচশত গ্রাহকের ওয়াসার পানির সংযোগ এখন গলার কাঁটা। ওইসব গ্রাহকরা সংযোগ পেলেও কখনও পানি পায়নি। অথচ তাদের নিয়মিত পরিশোধ করতে হচ্ছে পানির বিল। পানি না পেয়েও বিল পরিশোধ করা গ্রাহকরা এখন ক্ষোভে ফুঁসছেন। এসব গ্রাহকরা বলছেন, ‘বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার ওয়াসার কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অবহিত করা হয়েছে। এরপরও তারা সুরাহার কোনও উদ্যোগ নিচ্ছেন না।’ অপরদিকে ওয়াসার কর্মকর্তারা বলছেন, ‘বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বন্দর-পতেঙ্গা থানা এলাকার অধিকাংশ স্থানে এখনও পৌঁছেনি ওয়াসার সংযোগ। এরমধ্যে ২০১৯ সালে আবেদনের প্রেক্ষিতে সংযোগ পেয়েছে পতেঙ্গা থানা এলাকার প্রায় ৫০০ পরিবার। সংযোগ পেলেও পানি পাচ্ছে না পরিবারগুলো। অথচ পানি না পেয়েও নিয়মিত ওয়াসাকে বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। একেকটি পরিবারকে এ পর্যন্ত ১৮ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিল পরিশোধ করতে হয়েছে।

পতেঙ্গা থানাধীন স্টিল মিল খেঁজুরতলা এলাকার মোগল আহমেদ সোসাইটির বাসিন্দা মো. রুহুল আমিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২০১৯ সালের শেষের দিকে ওয়াসার সংযোগের জন্য আবেদন করি। এর প্রেক্ষিতে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ আমার বাসায় সংযোগ প্রদান করেন এবং মিটার লাগিয়ে দেন। তখন থেকে প্রতি মাসে বিল আসা শুরু হয়েছে। অথচ আমার বাসার সংযোগে কখনও এক ফোঁটা ওয়াসার পানিও আসেনি। এরপরও প্রতি মাসে পানির বিল আসছে। প্রথম দিকে প্রতি মাসে ৪৪০ টাকা করে বিল আসলেও এখন ৬৪০ টাকা করে আসে। পানি না পাওয়ার কারণে আমি বিল পরিশোধ করিনি। আমার প্রায় ২০ হাজার টাকা বিল বকেয়া হয়েছে বলে প্রতি মাসে মোবাইল নম্বরে এসএমএস দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়।’ 

এ প্রসঙ্গে মো. আজম খান নামে অপর এক গ্রাহক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ওয়াসার সংযোগ পেয়েছি। কিন্তু কখনও পানি পাইনি। অথচ প্রতি মাসে পানির বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। পানি না পেয়েও বিল পরিশোধ করতে হওয়ায় ওয়াসার সংযোগ এখন আমাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা একাধিকবার ওয়াসা কার্যালয়ে গিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরকেও জানিয়েছি। তিনিও বিষয়টি ওয়াসা কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন। কিন্তু এর পরও পানির সংযোগ চালু হচ্ছে না। এমনকি প্রতি মাসে বিল আসাও বন্ধ হচ্ছে না।’

এদিকে, জসিম উদ্দিন নামে আরেক গ্রাহক দিয়েছেন নতুন তথ্য। তিনি বলেছেন, ‘বন্দর, পতেঙ্গা ও ইপিজেড থানা এলাকা বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তীতে হওয়ায় এখানকার পানি অত্যন্ত লবনাক্ত। এমনকি প্রচুর আয়রনযুক্ত। এ কারণে এখানকার মানুষ টিউবওয়েলের পানি পান করতে পারেন না। এ সুযোগে দীর্ঘদিন ধরে একটি পানি বিক্রেতা চক্র গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন গাড়িতে করে ওয়াসার পানি এনে এখানে প্রতিদিন বিক্রি করা হয়। প্রতি ড্রাম পানি ২০ থেকে ২৫ টাকা করে বিক্রি করছে চক্রটি। প্রতিদিন তারা হাজার হাজার টাকার পানি বিক্রি করছে। ওয়াসার সংযোগ চালু হলে পানি বিক্রি কমে আসবে। এ কারণে আমাদের সংযোগে পানি সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে না বলে আমার ধারণা।’  

সিটি করপোরেশনের ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল বারেক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার এলাকার বেশ কিছু ওয়াসার গ্রাহক রয়েছে যাদের বাসায় সংযোগ দেওয়া হয়েছে অথচ পানি পাচ্ছেন না। বিষয়টি তারা আমাকে একাধিকবার বলেছে। আমিও ওয়াসার কর্মকর্তাদের অবহিত করেছি। অথচ এখন পর্যন্ত ওয়াসা কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। পানি না দিয়ে বিল নেওয়াটা আমার দৃষ্টিতে অন্যায়। আমার এলাকায় অধিকাংশ স্থানে এখনও ওয়াসার সংযোগ দেওয়া হয়নি।’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৪১ নম্বর দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছালেহ আহম্মদ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার এলাকার সাধারণ জনগনের ঘরে এখনও পানি পৌঁছেনি। বিষয়টি নিয়ে চসিকের সাধারণ সভায় একাধিকবার অভিযোগ করেছি। আমার অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওয়াসায় বিষয়টি করপোরেশন থেকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। অথচ চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে পানি সরবরাহ করেছে ওয়াসা। আমার এলাকার লোকদের সংযোগ না দিয়ে ওইসব এলাকায় দিয়েছে। অথচ ওয়াসার সক্ষমতা বেড়েছে। পানির উৎপাদন বেড়েছে। এরপরও সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না।’

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘উত্তর পতেঙ্গা এলাকায় এখনও ওয়াসার সংযোগ পুরোপুরি পৌঁছেনি। কিছু গ্রাহক সংযোগ পেয়েছে পানি পাচ্ছেন না বিষয়টি আমাদের জানা আছে। ওয়াসার পানির সংকট রয়েছে। এ কারণে তাদেরকে পুরোপুরি পানি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সংযোগ যেহেতু পেয়েছে সেহেতু ওয়াসার মিনিমাম সংযোগ ফি পরিশোধ করতে হবে। তা না হলে সংযোগ স্থগিত রাখার আবেদন করতে পারেন গ্রাহকরা।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘ওইসব এলাকার জন্য ওয়াসার নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। ওই প্রকল্পের কাজ শুরু হতে আরও দুই বছরের মতো সময় লাগতে পারে। প্রকল্পটি বাস্তাবায়িত হলে পতেঙ্গ, বন্দর এবং ইপিজেড এলাকার বাসিন্দারা নিয়মিত ওয়াসার পানি পাবেন।’ 

/আরআইজে/
সম্পর্কিত
ওয়াটারএইডে পৃষ্ঠপোষকতা অব্যাহত রাখবেন ব্রিটেনের রাজা
বৃষ্টিতেই কাটলো ওয়াসার পানির সংকট
বদির বিরুদ্ধে চেয়ারম্যানের জিডি
সর্বশেষ খবর
রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্তে অনিশ্চয়তা ছড়াচ্ছে ইরানে
রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্তে অনিশ্চয়তা ছড়াচ্ছে ইরানে
বার্সার রানার্সআপ হওয়ার দিনে ধাক্কা খেলো রিয়াল 
বার্সার রানার্সআপ হওয়ার দিনে ধাক্কা খেলো রিয়াল 
রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত: মধ্যপ্রাচ্যসহ আঞ্চলিক নেতাদের প্রতিক্রিয়া
রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত: মধ্যপ্রাচ্যসহ আঞ্চলিক নেতাদের প্রতিক্রিয়া
যদি প্রেসিডেন্ট রাইসি না ফেরেন, কী হবে ইরানে
যদি প্রেসিডেন্ট রাইসি না ফেরেন, কী হবে ইরানে
সর্বাধিক পঠিত
শনিবার ক্লাস চলবে ডাবল শিফটের স্কুলে
শনিবার ক্লাস চলবে ডাবল শিফটের স্কুলে
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
ভারতীয় পেঁয়াজে রফতানি মূল্য নির্ধারণ, বিপাকে আমদানিকারকরা
হিমায়িত মাংস আমদানিতে নীতিমালা হচ্ছে
হিমায়িত মাংস আমদানিতে নীতিমালা হচ্ছে
এনবিআর চেয়ারম্যানকে আদালত অবমাননার নোটিশ
এনবিআর চেয়ারম্যানকে আদালত অবমাননার নোটিশ
আগামী ৩ দিন হতে পারে বৃষ্টি, কমবে তাপপ্রবাহ
আগামী ৩ দিন হতে পারে বৃষ্টি, কমবে তাপপ্রবাহ