X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীর খ্যাতনামা তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের কারণ কী

ওবাইদুর সাঈদ, ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি
১২ মার্চ ২০২৩, ২৩:৫৯আপডেট : ১২ মার্চ ২০২৩, ২৩:৫৯

আধিপত্য বিস্তার, ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব, একে অপরকে টিজ করা, হেয় করা, নিজের প্রতিষ্ঠানকে বড় করে দেখানোসহ নানা কারণে সংঘর্ষে জড়ায় ঢাকা, আইডিয়াল ও সিটি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ছোটখাটো বিষয়ে বড় বড় সংঘর্ষে জড়িয়েছে তারা। এসব সংঘর্ষে কিশোর গ্যাং জড়িত থাকতে পারে বলে মনে করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশ।

তিন কলেজের অবস্থান

প্রতিবেশীর মতো অবস্থান রাজধানীর ঢাকা, সিটি ও আইডিয়াল কলেজের। তিনটি কলেজই রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকায়। কলেজ তিনটিই নামকরা। প্রথমটি সরকারি, বাকি দুটো বেসরকারি। প্রতিবেশী হলেও এদের মাঝে নেই কোনও মেলবন্ধন। বিগত কয়েক বছরে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষে জড়িয়েছে এই তিন কলেজের শিক্ষার্থীরা।

সংঘর্ষ চলাকালে সায়েন্স ল্যাব এলাকা কী কারণে সংঘর্ষ

অনেক বছর ধরেই তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মারামারি হয়ে আসছে। তবে এখন সেই ছোটখাটো মারামারি বড় আকার ধারণ করেছে। তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আধিপত্য বিস্তার, জুনিয়র কর্তৃক সিনিয়রকে ধাক্কা দেওয়া, সালাম না দেওয়া, সিগারেটের ধোঁয়া দেওয়া, অপরকে কটূক্তি করা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে উসকে দেওয়াসহ নানা কারণে প্রায়ই এই কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে জড়ায়। ঢাকা কলেজের প্রিন্সিপালের অভিযোগ—এই কলেজে ভর্তি হতে না পারা শিক্ষার্থীরা এসব মারামারিতে বেশি জড়ায়। মারামারিতে কিশোর গ্যাংয়ের প্রভাব থাকতে পারে বলে মনে করেন ঢাকা কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষরা। এছাড়া শিক্ষার্থীদের বয়স ১৮-এর নিচে হওয়ায় পরিণতির চিন্তা না করে কাজ করা, অভিভাবকদের অসচেতনতাও সংঘর্ষের কারণ বলে মনে করেন সিটি কলেজের অধ্যক্ষ।

সংঘর্ষের সূত্রপাত

ঢাকা কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ২০০৫-২০০৬-এর দিকেও দেখেছি, তখনও এমন ছোটখাটো ঝামেলা লাগতো। তবে কখনোই তা মারামারিতে রূপ নিতো না। তবে ইদানীং মারামারিগুলো বিরাট আকার ধারণ করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে নগণ্য বিষয়কে বড় করে প্রচার করার মাধ্যমে, ছোট বিষয়কে মুহূর্তে ছড়িয়ে দিয়ে সংঘর্ষে রূপ নিচ্ছে। সংঘর্ষে বাইরে থেকে ইন্ধন দেওয়া হয়। এর পেছনে কিশোর গ্যাংও জড়িত থাকতে পারে বলে মনে করেন তিনি। একটি পক্ষ থাকে, ছোটখাটো বিষয়েও শিক্ষার্থীদের উসকে দেয়।’

সংঘর্ষকালে মিরপুর রোডে পুলিশের অবস্থান কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংঘর্ষগুলো মূলত তিন কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মধ্যে হয়ে থাকে। গত  তিন বছরে বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৯ বার সংঘর্ষে জড়ায় তিন কলেজ। ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন এই তিন কলেজের অধ্যক্ষরা। ঢাকা কলেজ অধ্যক্ষ দাবি করেন, সবসময় আমরা বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। সাম্প্রতিক ঘটনায় ৭ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের পরিবারকে ডাকা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা অভিভাবকদের নিয়ে বিভিন্ন সময় মিটিং করি। সেই মিটিংয়েও সব অভিভাবককে নিয়মিত পাওয়া যায় না।’

আইডিয়াল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘বিগত সময় বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। কিছু শিক্ষার্থীকে টিসি (ট্রান্সফার সার্টিফিকেট) দেওয়া হয়েছে। ক্লাসের পূর্বে শিক্ষকদের দিয়ে মোটিভেশনাল বক্তব্য দেওয়াচ্ছি। ছাত্ররা যাতে দলবেঁধে ঘুরতে না পারে, সে বিষয়ে তদারকি করছি।’

সিটি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক বেদার উদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই মারামারিতে আমাদের বাচ্চারা ছিল না। বিভিন্ন পত্রিকায় এসেছে সিটি কলেজও জড়িত ছিল— এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা ভুয়া। যারা নিউজ করেছে তারা আন্দাজে করেছে। পূর্বে কিছু সংঘর্ষে সিটি কলেজের কিছু শিক্ষার্থী জড়িত ছিল। আমরা আগে থেকেই ক্লাসে স্মার্টফোন নিয়ে ঢোকা নিষিদ্ধ করেছি। ফলে শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে সংঘর্ষে জড়াতে পারছে না। নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ক্লাসের প্রথম দিনেই অভিভাবকদের চিঠি দিয়ে বিভিন্ন নির্দেশনা দিচ্ছি।’

রাজধানীর খ্যাতনামা তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের কারণ কী কমিটির কী অবস্থা

নিউমার্কেট এলাকায় থাকা ৬টি কলেজ নিয়ে একটি সমন্বিত টিম ছিল। কলেজগুলো হলো— ঢাকা, সিটি, আইডিয়াল, ওয়েস্টার্ন (আগে কাটাবনে ছিল এখন নেই), পিলখানার মুন্সী আব্দুর রউফ ও নুর মোহাম্মদ কলেজ। প্রতিটি কলেজ থেকে ৬ জন শিক্ষক ও ২ জন পুলিশ নিয়ে গঠিত টিম সপ্তাহে ৬ দিন কলেজগুলোতে যাতায়াত করতো। বিশেষ বিশেষ কলেজগুলো এটিকে নিয়মিত না করায় অন্য কলেজগুলো আগ্রহ হারায়। ফলে ভেস্তে যায় সমন্বিত টিম।

ঢাকা কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহাদাত শান্ত বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার আইডিয়াল ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা আমাদের একটি বাস ভাঙচুর করে। পরে আমরা মিছিল নিয়ে আইডিয়ালের সামনে গেলে ভেতর থেকে ইটপাটকেল ছোড়ে। পরে একটু মারামারি হয়। রবিবার আমাদের ৩ জন শিক্ষার্থীকে মারধর করে আইডিয়ালের শিক্ষার্থীরা। এরপর মারামারি লাগে।’

সিটি কলেজের বাণিজ্য বিভাগের একাদশের শিক্ষার্থী আলভী রহমান বলেন, ‘এই মারামারিতে আমাদের কলেজ ছিল না। কী কারণে ঢাকা ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা মারামারি করেছে, তারাই ভালো বলতে পারবে। তবে পত্রিকায় দেখেছি, বাস ভাঙাকে কেন্দ্র করে মারামারি হয়েছে।’

নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক আইডিয়াল কলেজের মানবিক বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলেন, বুধবার নিউ মার্কেটের ওভারব্রিজে ঢাকা কলেজের ড্রেস পরা ও কিছু নর্মাল পোশাকের শিক্ষার্থী আমাদের ২ জনকে  মারধর করে। আমি কারণ জানতে চাইলে আমাকেও মারতে আসে। পরে পুলিশ আমাদের পাঠিয়ে দেয়। বৃহস্পতিবার আইডিয়ালের একদল উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থী আগের দিনের ঘটনার  প্রতিশোধ নিতে ঢাকা কলেজের বাসে ঢিল মারে। পরে ওরা এসে আমাদের নামফলক খুলে নিয়ে যায়।

রাজধানীর খ্যাতনামা তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের কারণ কী যা বলছে পুলিশ

ডিএমপি রমনা বিভাগের নিউমার্কেট জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহেন শাহ মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তিন কলেজের ঘটনাগুলো ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা থেকে প্রাতিষ্ঠানিকে রূপ নেয়। তৃতীয় পক্ষের ইন্ধন আমাদের কাছে মনে হয় না। তবে এটা যদি চলে, তাহলে অপরপক্ষ তো সুযোগ নেবেই। আমরা কলেজগুলোর সঙ্গে নিয়মিত মিটিং করছি। ঢাকা কলেজে করেছি, বাকি কলেজগুলোর সঙ্গেও করবো।’

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সায়েন্সল্যাব এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন
ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ
ঢাকা ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
সর্বশেষ খবর
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল
শিবনারায়ণের চোখে আলো দেখছেন মশিউর ও কালাম
শিবনারায়ণের চোখে আলো দেখছেন মশিউর ও কালাম
ঢাকার কোথাও হালকা বৃষ্টি, কোথাও ঠান্ডা ঝোড়ো হাওয়া
ঢাকার কোথাও হালকা বৃষ্টি, কোথাও ঠান্ডা ঝোড়ো হাওয়া
সূর্যকুমারের ছক্কায় সেঞ্চুরি ও মুম্বাইয়ের জয়
সূর্যকুমারের ছক্কায় সেঞ্চুরি ও মুম্বাইয়ের জয়
সর্বাধিক পঠিত
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস