X
বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪
২৬ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা ক্যাম্প: যার যার মতো ট্রমায় বসবাস

উদিসা ইসলাম
০৬ মে ২০২৩, ১০:০০আপডেট : ২৫ মে ২০২৩, ১৫:২১

দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে পাশের গ্রামে। সে কী চিৎকার। আজও  কান থেকে সেই শব্দ দূর হয়নি। তারপরে হলো কী— আমাদের গ্রামের দিকে আসার আগেই যেনো পালিয়ে যাই, সেই পরামর্শ করে বেরিয়ে পড়ি। পেটে পাঁচ মাসের সন্তান আর একটা পোটলা। পোটলায় কিছু সোনার গয়না। ভাই ছিল সঙ্গে, তার হাতে আরেকটা ব্যাগ। এই নিয়ে চলে এলাম এপারে। এই দেশে ঢোকার পরেও মনে হচ্ছিল— এখানেও চলে আসবে সন্ত্রাসীরা! এরপর পাঁচ বছর কেটে গেলো। এখনও ঘুমের মধ্যে চমকে উঠি। এখনও মনে হয়, প্রাণের কোনও দাম নেই— কথাগুলো বলছিলেন উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্প-৯ এর এক রোহিঙ্গা নারী। তিনি কথা বলতেও রাজি হচ্ছিলেন না। নাম পরিচয় কোথাও উল্লেখ হবে না বলার পরে একে একে নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া কথাগুলো বলতে থাকেন তিনি। এক পর্যায়ে ঝরঝর করে কেঁদে বলেন, এদেশে আসার পরে স্বামী ছেড়ে চলে গেছে। এখন ত্রাণের জিনিস দিয়ে চলি। সন্তানের কথা ভেবে কষ্ট হয়। সে জানলো না জীবন কত সুন্দর হতে পারতো।

ক্যাম্প ৮-ই এর এক নারী বলেন, আমিতো এখনও একটু জোরে কথা বললে হিসু করে দিই। শরীর কেঁপে জ্বর আসে। আমার এখানে দুই সন্তান আছে, স্বামী বিছানাগত। এখানকার সরকার খেতে দেয়, পরতে দেয়, কম্বল দেয়, ঘর দেয়। কিন্তু কেউতো জিজ্ঞেস করলো না— আমার ওখানে কী ছিল? কেউ তো জিজ্ঞেস করে না— আমি এখানে থাকতে চাই কিনা। আমি আমার সেই ঘরে ফিরতে চাই, যেখানে আমি বলতে পারতাম— এইটা আমার ঘর, এই জমি আমার।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প

২০২২ সালের অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে কক্সবাজারের উখিয়ায় অবস্থিত তিনটি ক্যাম্পে গিয়ে তিনটি ফোকাস গ্রুপে ৫ জন করে মোট ১৫ জন নারীর সঙ্গে নিবীড় পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এদের মধ্যে ৯ জন অন্তঃসত্ত্বা এবং ৬ জন ২০১৭ সালে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার সময়ে অন্তঃসত্ত্বা  ছিলেন। মিয়ানমান ছেড়ে পালিয়ে এসে ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে জীবন-যাপনের সময়টা নিয়ে কথা হয় তাদের সঙ্গে। একদিকে আছে নিজ ভিটেতে ফিরতে না পারার যন্ত্রণা, আরেকদিকে ভিন দেশে কোনোমতে বেঁচে থাকার চেষ্টা। এরমধ্যে সন্তান ধারণ ও লালন তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেছেন প্রত্যেকেই। তবে এই চ্যালেঞ্জ কিভাবে মোকাবিলা করবেন— সেই পদ্ধতি নিয়ে তাদের সঙ্গে কেউ কখনও কথা বলেননি। যারা দীর্ঘসময় ধরে ক্যাম্পে অধিকার বিষয়ে কাজ করছেন, তাদের দাবি— বেশিরভাগ নারী বিষণ্নতায় ভোগেন। তাদের কেউ কেউ চূড়ান্ত ডিপ্রেশনেরও রোগী। তবে এই বিষয়টি যতটা উল্লেখ হওয়া দরকার ছিল, নানা বাস্তবতায় সেই পরিমাণ সামনে আসেনি।

ক্যাম্পে সন্তান জন্মের হার

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা-ইউএনএইচসিআরের তথ্যমতে, শিবিরগুলোতে প্রতি বছর প্রায় ৩০ হাজার শিশু যোগ হচ্ছে। ইউএনএইচসিআরের হিসাবে, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে বসবাসকারী ৯ লাখ ২৩ হাজার ১৭৯ জন নিবন্ধিত রয়েছেন। এর মধ্য ৪ লাখ ৭০ হাজার ৮২২ জন শিশু। অর্থাৎ রোহিঙ্গা শিবিরের ৫১ শতাংশই শিশু। সরেজমিনে তিন ক্যাম্পের মধ্যে ক্যাম্প ৮-ই তে মেয়েশিশু ২ হাজার ১৬০, ছেলেশিশু সংখ্যা ২হাজার ২৫৯টি। ৮-ডব্লিউ ক্যাম্পে মেয়েশিশু ২ হাজার ২৮০, ছেলেশিশু সংখ্যা ২ হাজার ৪২৭টি এবং ক্যাম্প-৯ এ মেয়েশিশু ২ হাজার ৩৮৬ ও মেয়েশিশু সংখ্যা ২ হাজার ৪৫২টি।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প: যার যার মতো ট্রমায় বসবাস

ডিপ্রেশন কী, রোহিঙ্গা নারীরা জানে?

সরাসরি মানসিক সমস্যা বা ডিপ্রেশন বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত না হলেও মানসিক যন্ত্রণার সঙ্গে সম্পর্কিত রোহিঙ্গা কিছু পরিভাষা আছে, সেসব দিয়েই তারা পরিস্থিতির বর্ণনা করেন। তারা নিজের পরিস্থিতি বুঝাতে সেসব শব্দই ব্যবহার করে থাকেন। তারা সাধারণত মানসিকভাবে ঠিক না থাকাকে ‘ওয়াশান্তি’ (অশান্তি), ‘অস্থির’ বা ‘মনে শান্তি নেই’ এসব মনে করে থাকে। ডিপ্রেশন শব্দটা শুনেছেন কিনা বা এটা কী তা বুঝেন কিনা, প্রশ্নে কুতুপালং মেইন ক্যাম্পের এক নারী বলেন, ‘‘একবার এক এনজিও এসে বলেছিল ‘মেন্টাল হেলথ’ এর কথা। তারাই কথা বলার সময়ে বলেছিল— নিয়মিত দুঃস্বপ্ন দেখলে, কাজকর্মে আগ্রহ হারিয়ে ফেললে, একা মনে হলে, কোনও কাজের যোগ্য না মনে হতে থাকলে, যে মানসিক পরিস্থিতি হয়— সেটাই এটা (ডিপ্রেশন)। এরকম হলে সেন্টারে (হেলথ ক্লিনিক) জানাতে বলেছে।’’

ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল হিউম্যানিট্যারিয়ান অর্গানাইজেশন এমএসএফ ক্যাম্পের নারীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে গভীরভাবে কাজ করছে। মানসিক ইস্যু নিয়ে ক্যাম্পে কাজ করতে কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় প্রশ্নে তারা বলছে— মানসিক অসুস্থতা এক ধরনের অশুভ আত্মা দ্বারা আবিষ্ট। ধর্মীয় নেতাদের স্থানীয় চিকিৎসা পদ্ধতি ছাড়া এটার কোনও চিকিৎসা বা এই পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার সুযোগ নেই এবং তাদের মধ্যে বেশিরভাগই এই পদ্ধতিই অবলম্বন করেন। তাদের সাংস্কৃতিক বিশ্বাস, রীতি, সমাজ ব্যবস্থার কারণে ক্যাম্পে নারীদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো সংবেদনশীল ও কঠিন। বিশেষত কিশোরী ও তরুণী মেয়েদের ক্ষেত্রে খুবই চ্যালেঞ্জিং। নারীরা তাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সামনে নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্যের যন্ত্রণার কথা বলতে অস্বস্তি বোধ করেন। এছাড়া ক্যাম্পে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য আড়াল বা গোপন স্থান নেই। আবার মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে একটি বড় ধরনের ভীতিও আছে, যা নারীদের ভোগান্তির সময় কোনোরকম সাহায্য চাইতে বাধা দেয়।

এই প্রতিবেদনের জন্য যে ফোকাস গ্রুপ তৈরি করা হয়, তার ১৫ জন নারীর মধ্যে একজন ৪ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তাদের একজন বালুখালী ক্যাম্পে আলাপকালে জানান, তাকে এখনও প্রায় সারা রাত জেগে থাকতে হয়। এ কারণে তাকে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় বেশকিছু ওষুধও খেতে হচ্ছে। তিনি বলেন, সামরিক (মিয়ানমার) বাহিনী আমার বাবার কাঁধ ভেঙে দেয়। পালাতে গিয়ে আমি সারা শরীরে আঘাত পাই। সেই ব্যথা আমি এখনও অনুভব করি। বিষণ্ন লাগে আমার ঘর আমার জমি আমার এলাকার কথা মনে করে। ক্যাম্পের উঁচু জায়গায় গিয়ে আমি মিয়ানমারের দিকে চেয়ে থাকি। যদি কোনোদিন যেতে পারতাম। আমার রক্তচাপ বেশি। আমি এখনও স্পষ্ট গুলির আওয়াজ পাই।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ঝুপড়ি ঘর

কোন ধরনের ট্রমা, কেন ট্রমা?

তিন দফায় তিনটি গ্রুপের সঙ্গে আলোচনায় ট্রমার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম যেগুলো উঠে আসে, সেগুলো হলো— মিয়ানমারে চোখের সামনে ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি দেখা, নিজের আবাস ও চেনা পরিচয় ছেড়ে দেশ ত্যাগে বাধ্য হওয়া, ক্যাম্পের ছোট ঘরে একের পর এক বাচ্চা জন্ম দেওয়া, স্বামী ছেড়ে যাওয়ার নিরাপত্তাহীনতা ও  দেশে ফেরার কোনও সম্ভাবনা দেখতে না পাওয়া। মা হিসেবে ভোগান্তির জায়গাগুলো বলতে গিয়ে তারা বলেন, অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা চিন্তিত। একইভাবে সে তার অতীত জানবে না, এটা একটা ব্যর্থতা মনে হয় এবং যেকোনও সময় সহিংসতার শঙ্কা তাদেরকে স্থির হতে দেয় না। আর এসব কারণে তাদের নিয়মিত নির্ঘুম রাত, সংসার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্নতা, বিষণ্নতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

কখনও সেবা নিতে গেছেন?

নিজেদের এই না পাওয়া ও হতাশার কারণগেুলো কিভাবে সামলান, প্রশ্ন করা হলে এই মায়েদের সবাই বলেন, ‘মন খারাপ হলে, সংসারে মন না দিতে পারলে আর কী করা। এর আর চিকিৎসা কী’? ‘যে সহিংসতা আমরা দেখেছি তা মন থেকে যাবে না’। ১৫ জনের মধ্যে একজন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন মিয়ানমারে থাকাকালীন। তিনি ক্যাম্পে এসে শারীরিক চিকিৎসা নিতে গেলে মানসিক চিকিৎসা সেবা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তিনি বলেন, আমাকে আরেকজন ডাক্তারের কাছে নেওয়া হয়, তিনি আমার সব কথা শুনেছেন। কিছু ওষুধ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেসব নিয়ম করে খেতে দেয়নি তার স্বামী। কেন খেতে দেয়নি প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা কিসের ওষুধ সেটা তার (স্বামীর) কাছে পরিষ্কার না।

রোহিঙ্গাদের বাসস্থান

কেউ মানসিকভাবে খারাপ থাকলে কীভাবে সেটা সামলে ওঠেন প্রশ্নে ক্যাম্প ৮-ই এর ফোকাস গ্রুপের নারীরা বলেন, আমরা এখানে যেটুকু ভালো আছি তাহলো— পরস্পরের খোঁজ রাখা। আমাদের একজনের সঙ্গে আরেকজনের সম্পর্ক ভালো। আমাদের মধ্যে একজন শান্তিখানা (রোহিঙ্গাদের বিনোদন, মনোচিকিৎসা, যৌন নির্যাতন নিরোধে অধিকার সচেতন করে তোলার কাজ করে) থেকে জেনে এসে আমাদের নানাকিছু জানিয়েছে। সে অনুযায়ী আমরা নিজেরা ভালো থাকার চেষ্টা করি। কিন্তু যারা একটু বেশি খারাপ বোধ করে, বেশি হতাশ, তাদের ওষুধ নেওয়ার সুযোগ নেই। পরিবার এটা হতে দেবে না।

যারা সেবা দেন, তারা কী বলেন?

২০১৭ সালের আগস্ট থেকে আইওএম-এর মানসিক স্বাস্থ্য এবং মনোসামাজিক পরিষেবা (এমএইচপিএসএস) প্রোগ্রাম চলছে এবং ঘরে ঘরে গিয়ে লক্ষণগুলো চিহ্নিত করার কাজটিও তারা করে থাকেন। তারা মূলত ব্যক্তিগত কাউন্সেলিং, ইন-পেশেন্ট কেয়ার, রোগীর রেফারেল এবং কমিউনিটি মোবিলাইজেশন কার্যক্রম চালিয়ে থাকেন। কিন্তু ঠিক কতজনকে তারা সেবা দিতে সক্ষম, সে বিষয়ে কেউই কথা বলতে রাজি হননি। মানসিক স্বাস্থ্যসেবা যারা দেন, তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আইডেন্টিফিকেশনে কিছু সমস্যা আছে। মানসিক সমস্যা বলতে এই জনগোষ্ঠী ‘বিকৃত’ আচরণ করাকে বুঝে। কাউকে ‘পাগল’ মনে না করা পর্যন্ত মানসিক স্বাস্থ্যের কোনও চিকিৎসা দরকার বলে তারা মনে করে না। ক্যাম্পগুলোতে স্বাস্থ্য ক্লিনিকগুলোতে দুই- একটা জায়গা বাদে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার  কাউন্সেলিং দেন— এমন একজনের সঙ্গে কথা হয়। তিনিও নাম ও প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রতি দিন শত শত মানুষ ক্যাম্পের ভেতরের ক্লিনিকে নানা সমস্যা নিয়ে আসেন। আমাদের বাইরে যারা তাদের পরামর্শ দেন, তাদের উপসর্গ দেখে চিকিৎসক নির্ধারণ করে দেন। তারা যদি মনে করে, এই রোগীর মানসিক স্বাস্থ্যটাও দেখা দরকার, তারা আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেয়। এর সংখ্যা মোটেই কম না।

উখিয়ার ক্যাম্পগুলোতে এমএসএফ তার স্বাস্থ্যসেবা চালিয়ে আসছে এবং এই সংস্থাটি শুরু থেকে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে কাউন্সেলিং, চিকিৎসা, নানা সেশনের ব্যবস্থা করে আসছে। তাদের মেন্টাল হেলথ অ্যাক্টিভিটি ম্যানেজার ভিনিলা কাট্টামিচি বলেন, ‘আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য রোগীদের প্রায় ৬০ শতাংশই অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের মধ্য দিয়ে পাওয়া। সব মেডিক্যাল ডিপার্টমেন্টের কর্মী এবং সব আউটরিচ টিমের কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাধি, রেফারেলের মানদণ্ড এবং রোগীদের মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগে রেফার করার উপায়গুলো শনাক্ত করার বিষয়েও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যারা মাঠে কাজ করেন, তারা বিভিন্ন ঘরে ঘোরার সময় তথ্য পান এবং ক্লিনিকে রেফার করেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘মেন্টাল হেলথ আউটরিচ টিম মানসিকভাবে বিপর্যস্তদের জন্য চিকিৎসার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতামূলক সেশন করিয়ে থাকেন। কিছু রোগী আমরা পাই— তাদের আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে যারা ইতোমধ্যে আমাদের সেবা নিয়ে গেছেন।’

রোহিঙ্গাদের বাসস্থানে প্রতিবেদক

জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) এর তথ্য বলছে, ৪০টির  মতো এজেন্সি কক্সবাজারে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছে। সার্বিক কাজ বিবেচনা করে সেটাকে তারা যথেষ্ট বলতে রাজি নন। চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করতে গিয়ে তারা বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলো হয়তো একবছর বা ৬ মাসের জন্য ফান্ড পেয়েছে। সেটা শেষ হলে শূন্যতা তৈরি হয়। এরপরের ধারাবাহিকতা থাকে না। ফলে খুব বেশি কাজ হচ্ছে বলা যাবে না। প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র রেগিনা ডি লা পোরটিলাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বলেন, ‘যেটুকু করা হচ্ছে, তা যথেষ্ট বলা যাবে না। আরও  অনেক চিকিৎসক যুক্ত করতে পারলে ভালো হতো। তবে এই সময়ে আমরা সবচেয়ে ভালোটাই করছি।’ তারা মনে করেন, তাদেরকে (রোহিঙ্গা) তাদের নিজেদের দেশ ফিরিয়ে নিতে চায় না, তারা এই দেশেও গ্রহণযোগ্য না। ফলে একাকিত্ব বোধ করে। ফলে কেউ তাদের কথা শুনতে চাচ্ছে— এটা ভালো অনুভূতি দেয়। ফলে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে তথা বলাটা তাদের জন্য খুব জরুরি।’

ট্রমা কখনও একা একা সামলানো যায় না উল্লেখ করে মনোরোগ বিশ্লেষক মেখলা সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ট্রমা কাটাতে সবার জন্য একইরকম কোনও সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি নেই। যুদ্ধ, সহিংসতা, হত্যার মতো পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যারা দেশত্যাগে বাধ্য হন, তারা সহজেই সেই সৃষ্ট ট্রমা থেকে বের হতে পারবে, এটা ভাবার কোনও কারণ নেই। নিজেরা কোনও ট্রমা কাটাতে মানুষ সাধারণত তার নিজের মতো করে নতুন স্মৃতি তৈরি করে। কিন্তু সে তো জানে না, তার ডিপ্রেশনটা কোন স্তরের। সেটা বের করার জন্য একজন দক্ষ চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলার দরকার আছে। রোহিঙ্গাদের কোনও একটি বিষয় থেকে হতাশা তৈরি হয়নি। তারা সহিংসতার আই উইটনেস, তাদের জীবনে দেশত্যাগ আছে, তাদের ক্যাম্পের ওই সীমিত পরিসরে জীবন-যাপনের বাধ্যবাধকতা আছে, ফেরার নিশ্চয়তা নেই। এসব মিলিয়ে বিষয়গুলো একটু জটিল। তাদের খুবই নিয়মতান্ত্রিক কাউন্সেলিং দরকার।

মেডিসিনস সান ফ্রন্টিয়ারস (এমএসএফ) উইদাউট বর্ডারস মিডিয়া ফেলোশিপ এর অংশ হিসেবে  প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে।

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
রোহিঙ্গাদের জন্য আরও তহবিল চাইলেন প্রধানমন্ত্রী
ঢাকা উইমেনস ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হবে ২৪ মে
রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলা চালাতে ওআইসির সহযোগিতা চাইলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সর্বশেষ খবর
চাচাকে হারিয়ে চমক দেখালেন শাজাহান খানের ছেলে
চাচাকে হারিয়ে চমক দেখালেন শাজাহান খানের ছেলে
ইউক্রেন ইস্যুতে আলোচনা করতে হাঙ্গেরিতে চীনা প্রেসিডেন্ট
ইউক্রেন ইস্যুতে আলোচনা করতে হাঙ্গেরিতে চীনা প্রেসিডেন্ট
শুল্ক জটিলতায় আটকে আছে ২০ অ্যাম্বুলেন্স, আমদানিকারকদের ক্ষোভ
শুল্ক জটিলতায় আটকে আছে ২০ অ্যাম্বুলেন্স, আমদানিকারকদের ক্ষোভ
সাগরপথে ইউরোপে যাওয়ার তালিকায় ফের শীর্ষে বাংলাদেশ
সাগরপথে ইউরোপে যাওয়ার তালিকায় ফের শীর্ষে বাংলাদেশ
সর্বাধিক পঠিত
এবার কি ফুটপাত দখলমুক্ত হবে?
এবার কি ফুটপাত দখলমুক্ত হবে?
ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর ইস্যুতে ন্যাটোকে রাশিয়ার সতর্কতা
ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর ইস্যুতে ন্যাটোকে রাশিয়ার সতর্কতা
‘চুন্নু স্বৈরাচারের দোসর’, বললেন ব্যারিস্টার সুমন
‘চুন্নু স্বৈরাচারের দোসর’, বললেন ব্যারিস্টার সুমন
এক লাফে ডলারের দাম বাড়লো ৭ টাকা
এক লাফে ডলারের দাম বাড়লো ৭ টাকা
ইউক্রেনে পাঠালে ফরাসি সেনাদের নিশানা করার হুমকি রাশিয়ার
ইউক্রেনে পাঠালে ফরাসি সেনাদের নিশানা করার হুমকি রাশিয়ার