X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

নানা চ্যালেঞ্জের ভেতর দিয়ে আমরাও বেড়ে উঠছি

জুলফিকার রাসেল
১৩ মে ২০২৩, ০০:০১আপডেট : ১৩ মে ২০২৩, ০০:০১

বাংলা ট্রিবিউন এ বছর দশম বর্ষে পদার্পণ করেছে। আসলে যেকোনও গণমাধ্যমের জন্য প্রতিটি দিনই গুরুত্বপূর্ণ। একটু একটু করে তার অভিজ্ঞতার ঝুলি পূর্ণ হতে থাকে। বাংলাদেশের গণমাধ্যমের নানা চ্যালেঞ্জের ভেতর দিয়ে আমরাও বেড়ে উঠছি।

২০২০ সাল থেকে করোনা মহামারি আমাদের থমকে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। অর্থনৈতিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের কোভিড-১৯ মোকাবিলার নীতি এবং সঠিক ব্যবস্থাপনায় ভ্যাকসিন কার্যক্রমে আমরা ঘুরে দাঁড়াচ্ছিলাম। কিন্তু আবার এসে প্রবেশ করলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। সত্যি বলতে, পর পর দুটি আঘাত পেয়ে এখন সারা দেশেই চলছে সাশ্রয়ের চেষ্টা। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও বারবার বলছেন সাশ্রয়ী হতে। গণমাধ্যম এর বাইরে নয়। তাই আমাদেরও সাশ্রয় নীতির পথে হাঁটতে হচ্ছে।

গণমাধ্যম নিয়ে কিছু কথা বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয়, আমরা গণমাধ্যমকর্মীরা ভালো নেই। এটা যে শুধু বাংলাদেশের সমস্যা তা নয়, এটি সারা বিশ্বের সমস্যা। সারা বিশ্বেই রাজনৈতিকভাবে গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করার একটা প্রক্রিয়া চলমান। অনেক চাপ ও বাধা উপেক্ষা করে আমাদের কাজ করতে হয়। আমাদের দেশে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট সাংবাদিকতাকে কঠিন করে তুলেছে। এটা নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। সাংবাদিকদের নির্বিঘ্নে তার দায়িত্ব পালনের জন্য এই আইনটি নিয়ে আরও গভীরভাবে ভাবতে হবে, না হলে ভবিষ্যতে অবাধ তথ্যপ্রবাহে অনেক বাধা আসবে।

অন্যদিকে, অর্থনৈতিক বিষয়টা আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে সামনে হাজির হচ্ছে। সাশ্রয়ের হিসাব আমাদের বিজ্ঞাপনদাতাদেরও কষতে হয়, ব্যবসায় যদি আকাঙ্ক্ষিত মুনাফা না আসে তবে তারা বিজ্ঞাপনে আর কত খরচ করতে পারবেন?

আমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে ক্ষমতা গ্রহণ করেছিল। সবাই সরকারের এই স্লোগানকে সাধুবাদ জানিয়েছিলাম। সবাই স্বপ্ন দেখেছিল ইন্টারনেট, মোবাইল যোগাযোগ, প্রযুক্তি পণ্যের ব্যবহার বাড়বে এবং ডিজিটাল সেবাগুলো ব্যাপকভাবে সুবিধার আওতায় আসবে। আকাঙ্ক্ষিত অনেক অর্জন পালক হিসেবে যুক্তও হয়েছে। ইন্টারনেট পৌঁছে গেছে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে, মানুষের হাতে হাতে মোবাইল ফোন। বিটিআরসির সর্বশেষ তথ্যমতে, ইন্টারনেটের গ্রাহক সংখ্যা এখন ১২৫ মিলিয়ন, মোবাইল গ্রাহক ১৮২ দশমিক ৬১ মিলিয়ন। এই বিস্তারই বলে দেয়, সারা দেশে ডিজিটাল কনটেন্ট পড়া ও দেখার গ্রাহক তৈরি হয়েছে। এই গ্রাহকদের সামনে বস্তুনিষ্ঠ কনটেন্ট দায়িত্বশীলতার সঙ্গে দিতে পারে মূলধারার গণমাধ্যমগুলো।

আমরা জানি, পুরো করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে ফেইক নিউজ কীভাবে আধিপত্য বিস্তার করেছিল। ক্লিক বাইট কিংবা অনলাইন থেকে অর্থ উপার্জনের প্রতিযোগিতায় অনেক ব্যক্তি কিংবা নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান ভুয়া কনটেন্ট দিয়ে ব্যবসা করার চেষ্টা করে গেছে। একমাত্র অনলাইন গণমাধ্যমই ছিল, যারা ক্রমাগত এই নামসর্বস্বদের সঙ্গে লড়াই করেছে। আমরাই পাঠকদের সামনে সত্য তথ্যটি তুলে ধরেছি। চেষ্টা করেছি দেশের একজন মানুষও যেন বিভ্রান্ত না হয়। ক্লিক পেয়ে অর্থ উপার্জনের চেষ্টা আমাদের ছিল না, ছিল সত্য সন্ধানের চেষ্টা। অথচ দেখা যাবে ওই নামসর্বস্বরা ক্লিক পেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে লাখোপতি কিংবা কোটিপতি হয়ে গেলো, অথচ মূলধারার অনলাইন গণমাধ্যম, যারা সঠিকতায় মনোযোগী ছিল, তারা পড়লো আর্থিক অনটনে। এটি অত্যন্ত দুঃখের একটি বিষয়। আমরা সবাই জানি, অনলাইন গণমাধ্যম এখনও সরকারি বিজ্ঞাপন থেকে বঞ্চিত। ডিজিটাল বাংলাদেশ স্বপ্ন বাস্তব করে দেওয়া সরকার কেন সরকারি বিজ্ঞাপনের ডিজিটাল ভার্সন তৈরি করছে না- সেটি আমারও প্রশ্ন। আশা করি খুব দ্রুত এই সিদ্ধান্তে আসবে সরকার। এতে মূলধারার অনলাইন গণমাধ্যমগুলো কিছুটা আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে। কারণ, অনলাইনে যারা সংবাদ পড়ছেন, তাদের সেবা দেওয়ার অন্যতম কারিগর আমরা।

বাংলা ট্রিবিউন গত ৯ বছর ধরে পাঠকদের কথা বিবেচনা করে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আর্থিক সংকট কিংবা মহামারি কোনও কিছুই আমাদের দমাতে পারেনি। এজন্য অবশ্যই বাংলা ট্রিবিউনের সব কর্মীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তাদের শ্রম, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নেই আজ পাঠকের প্রিয় বাংলা ট্রিবিউন। এই লম্বা পথচলায় যারা বাংলা ট্রিবিউনে কাজ করে গেছেন কিংবা যারা এখন সঙ্গে নেই, তাদেরও এই সফলতায় অবদান আছে। তাদের সবাইকে মনে পড়ে। এমনকি কয়েকজন সহকর্মী আমাদের ছেড়ে ওপারে চলে গেছেন। তাদেরও সর্বক্ষণ আমরা স্মরণ করি।

আমাদের বিজ্ঞাপনদাতাদের প্রতি শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা। বিশ্বব্যাপী এই সংকটকালেও তারা বাংলা ট্রিবিউনের পাশে আছেন, এটি সত্যিই অসাধারণ একটি বিষয়। কথা দিতে পারি, বাংলাদেশের গণমাধ্যমে বাংলা ট্রিবিউন তার নিরপেক্ষতা, সততা ও নিষ্ঠা বজায় রেখে কাজ করে যেতে পারবে।

লেখক: সম্পাদক, বাংলা ট্রিবিউন

/এসএএস/ইউএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
বাংলাদেশ ব্যাংকে সংবাদকর্মীদের প্রবেশে বাধা: উদ্বিগ্ন টিআইবি
ডিইউজে নির্বাচনে সভাপতি পদের মীমাংসা মামলার শুনানি ২৫ এপ্রিল
শিশু অধিকার বিষয়ে মিডিয়ার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ: স্পিকার
সর্বশেষ খবর
নিগারের একার লড়াই বৃথা গেলো, হারে শুরু বাংলাদেশের
বাংলাদেশ-ভারত টি-টোয়েন্টি সিরিজনিগারের একার লড়াই বৃথা গেলো, হারে শুরু বাংলাদেশের
জ্যাকসের ব্যাটিং তাণ্ডবে গুজরাটকে উড়িয়ে দিলো বেঙ্গালুরু
জ্যাকসের ব্যাটিং তাণ্ডবে গুজরাটকে উড়িয়ে দিলো বেঙ্গালুরু
‘বিএসটিআইর হালাল সনদ নিয়ে রফতানিতে কেউ বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন না’
‘বিএসটিআইর হালাল সনদ নিয়ে রফতানিতে কেউ বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন না’
চট্টগ্রামসহ পাঁচ জেলার ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার
চট্টগ্রামসহ পাঁচ জেলার ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে
মিয়ানমারে গিয়ে সেনা ট্রেনিং নিলেন ২ রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে ঢুকলেন বুলেট নিয়ে