X
বুধবার, ১৫ মে ২০২৪
১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

আইন কমিশনের ছাদ যেন এক টুকরো স্বর্গরাজ্য

বাহাউদ্দিন ইমরান
২৭ মে ২০২৩, ১৬:৪৭আপডেট : ২৭ মে ২০২৩, ২০:১১

আকাশে চলছে মেঘ-রোদের খেলা। চারদিকে যান্ত্রিক কোলাহল। আকাশচুম্বী হয়ে আছে গায়ে গায়ে লেগে থাকা সরকারি বহুতল সব ভবন। তবে এর মধ্যে আইন কমিশন ভবনের ছাদ যেন যান্ত্রিকতাকে দূরে ঠেলে শান্ত করে রেখেছে প্রকৃতিকে। ভবনের ছাদজুড়ে গড়ে উঠেছে এক টুকরো বাগান। যেখানে ফুল-ফলসহ প্রায় তিন হাজার গাছের সমাহার। মাঝেমধ্যে পাখিরা এসে গাছের ডালে বসে জিরোয় আবার ডানা মেলে উড়ে যায় অদূরে। প্রজাপতিরাও উড়ে উড়ে মধু খেয়ে শোভাবর্ধনের কাজ করে। বারোতলা ভবনের চোখজুড়ানো ছাদটি যেন এক টুকরো স্বর্গরাজ্য।

বেড করে সাজানো অসংখ্য ফুলের গাছ

বাগানটিতে গেলে বোঝা যায়, অনেকটা শখ আর প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে এই ছাদ-বাগান। প্রকৃতি ও মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে বাগানটি গড়ে তুলেছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এ বি এম খায়রুল হক।

সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক (ফাইল ছবি)

বাগানটি ঘুরে দেখা গেছে, ভবনটির ছাদের চারপাশ সেজে আছে বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় গাছে। চলাচলের দূরত্ব ঠিক রেখে ছাদের ফ্লোরে থাকা টবগুলোতে লাগানো হয়েছে গাছ। তবে বাদ যায়নি ছাদের রেলিংও। চারপাশের রেলিংয়ের সঙ্গে মিশিয়ে ছোট গাছ লাগানোর জন্য বেড তৈরি করা হয়েছে। সেখানে শোভা পাচ্ছে হরেক রঙের ফুল আর ফলের গাছ। অর্থাৎ, বাগানজুড়ে একটি আদর্শ পরিকল্পনার প্রতিফলন ঘটেছে। আবার বেডগুলোতে টাইলস দিয়ে ভিন্ন রূপ দেওয়া হয়েছে। চাইলে যে কেউ একটু অবসরে সেখানে বসে সময় কাটাতে পারেন।

শখ পূরণ হলেও বাগানটির পরিচর্যার বিষয়টি এখনও হাতছাড়া করেননি সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক। কাজের ফুরসত মিললে নিজেই ছাদে উঠে বাগানের পরিচর্যার বিষয়টি তদারকি করেন তিনি।

বাগান ঘুরে দেখছেন আইন কমিশনের কর্মকর্তারা

বাগানটিকে ঘিরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, বাগান করার বিষয়ে ছোটবেলা থেকেই আমার আগ্রহ কাজ করতো। বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ভবনের তলা বর্ধিতকরণের সময় ২০১৮ সালে ইঞ্জিনিয়ারকে ছাদে বাগান লাগানোর মতো করে ভবনটির (আইন কমিশন) ছাদ নির্মাণ করতে বলেছিলাম। বাগানটির জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে চারা সংগ্রহ করেছিলাম। নিজের অর্থায়নেই বাগানটি সাজানো শুরু করি। যতদূর সম্ভব চেষ্টা করেছি। খামারবাড়িতে মাহমুদ নামে এক ভদ্রলোক চাকরি করতেন, শুরুর দিকে তিনিও বিনামূল্যে আমাকে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন এবং পরামর্শ দিয়েছেন।

আইন কমিশনের ছাদ যেন এক টুকরো স্বর্গরাজ্য

‘তবে খরচ সামলাতে একটু মুশকিল হয়ে যায়। অডিট বিভাগকে বলেছিলাম কীভাবে গাছের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া যায়। তারা আমাদের অন্যান্য খাতে বাজেট দেখাতে বলেছিল। মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার বেশি লাগে না। তবে প্রথম দিকে খরচটা একটু বেশি ছিল। এখন বছরে দুবার গাছ কেনা হয়। আগামী জুলাই মাস থেকে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সহযোগিতা আসবে’, বলেন তিনি।

খায়রুল হক বলেন, ‘আমি বাগানের ছবি তুলে প্রধানমন্ত্রীকেও দেখিয়েছিলাম। তিনি বেশ খুশি ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন। জীবদ্দশায় বিচারপতি আনোয়ারুল হক দুটি গাছ দিয়েছিলেন। গাছ দুটির পাশে তার নামফলক স্মৃতি হিসেবে রেখে দিয়েছি।’

ছাদে গাছ পরিদর্শনে বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (জাতি) মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার সঙ্গে আইন কমিশন ও জাতি’র কর্মকর্তারা

আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এ বি এম খায়রুল হক বলেন, ‘আইন কমিশনে যেসব বিচারপতি ও বিদেশি ব্যক্তিত্ব আসেন, তাদের সবাইকেই আমি বাগানটিতে নিয়ে যাই। তারা আনন্দবোধ করেন। আইন কমিশনের আমার যত কর্মকর্তা রয়েছেন, তারাও বাগানের পরিচর্যার বিষয়ে আমাকে বেশ সহযোগিতা করেন।’

তিনি বলেন, আবুল হোসেন নামে একজন মালি হিসেবে কাজ করছেন। কাজটি করতে এসে তার আয়ের তুলনায় লোকসানই বেশি হয়। তবে তিনি আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করেন। বর্তমানে বাগানটির এক পাশে ঘর করে প্রায় ৪০টি কবুতর রাখা হয়েছে। ফুলগুলোয় প্রায়ই মৌমাছি এসে বসে। বিকাল থেকে সন্ধ্যা নাগাদ বাগানটিতে পাখির সমারোহ হয়।’

গাছে বছরের বারো মাসেই আম পাওয়া যায়

নগরবাসীকে আহ্বান জানিয়ে সাবেক এই প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সবারই উচিত নিজের ছাদে সহনশীলতার মধ্যে রেখে ছোট ছোট গাছ রোপণ করা। এতে পরিবেশ সুন্দর হবে এবং আমাদের মানসিক প্রবৃদ্ধিও ঘটবে। ছাদ না থাকলে ঘরের বারান্দায়ও সাধ্যমতো গাছ লাগানো যেতে পারে। এতে ঘরের শিশুটিও পরিবেশকে ভালোবেসে বেড়ে উঠতে পারবে।’

জানা গেছে, কাজের অবসর পেলেই আইন কমিশন কিংবা বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে আসা প্রশিক্ষণার্থীরা ছাদে উঠে বাগানটিতে সময় কাটান, ছবি তোলেন। বাগানে থাকা বিলুপ্তি প্রজাতির গাছের প্রতিও দর্শনার্থীদের আগ্রহ বেশি থাকে।

আইন কমিশনের ছাদ যেন এক টুকরো স্বর্গরাজ্য

এ বিষয়ে আইন কমিশনের লেজিসলেটিভ ড্রাফটসম্যান (অতিরিক্ত জেলা জজ) আবেদা সুলতানা বলেন, ‘স্যারের আন্তরিকতা দেখে আমরাও গাছগুলোর যত্ন নেওয়ার চেষ্টা করি। কাজের ভিড়ে অবসর পেলে ছাদে যাই, সেখানে বাগানে ঘুরে বেড়ানোর অনুভূতি পাই। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাদ-বাগান গড়ে তোলার বিষয়ে সবার আগ্রহী হয়ে ওঠা উচিত। তাতে আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য অনেকাংশে রক্ষা পাবে।’

আইন কমিশনের ছাদ যেন এক টুকরো স্বর্গরাজ্য

যেসব গাছে পরিপূর্ণ বাগানটি
বাগানের মালি আবুল হোসেন দেখে দেখে অনেক গাছের সঙ্গে পরিচিত করিয়ে দিলেন। দেশি-বিদেশি প্রায় তিন হাজার প্রজাতির ফুল ও ফলদ গাছে সমাহার।

ফুল গাছের মধ্যে রয়েছে—শিউলি, কামিনী, বাগানবিলাশ, বেলি, জবা, মাধবীলতা, রঙ্গন, কয়েক জাতের জিনিয়া, বকুল, ম্যালবোডিয়াম, জিনিয়া, টরনিয়া, টিকোমা, দোলনচাঁপা, চন্দ্রমল্লিকা, অলকানন্দা (অ্যালমান্ডা), ল্যান্থনা, ডাইন্টাস, গাদা, পিটুনিয়া, সিলভিয়া, ক্যানাবতি, পর্তুলিকা, গোলাপ, চেরি, নয়নতারা, নীল অপরাজিতা, জুঁই প্রভৃতি।

একজন বিচারপতির দান করা গাছে নামফলক

ফলদ গাছের মধ্যে রয়েছে—বারোমাসি আম, সফেদা, আমলকী, পেয়ারা, বড়ই, জামরুল, কমলা, মালটা, ডালিম, করমচা, লেবু প্রভৃতি।

এ ছাড়া ভবনটির ছাদ থেকে অরবিলতাগাছ জড়িয়ে থাকা ভবনটির ভেতরকার সৌন্দর্য্য আরও দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে।

/এনএআর/
সম্পর্কিত
লিগ্যাল এইড পরিচালনায় অসামঞ্জস্য তুলে ধরলেন প্রধান বিচারপতি
বিচারপ্রার্থীদের প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি‘প্রমাণ-অপ্রমাণের যাত্রা সুদীর্ঘ, সেখানে জড়িয়ে আছে হাহাকার’
আপাতত মেনশন নয়, আপিল বিভাগে সিরিয়াল অনুযায়ী চলবে মামলার শুনানি
সর্বশেষ খবর
তালের শাঁস খেলে মিলবে এই ১০ উপকারিতা
তালের শাঁস খেলে মিলবে এই ১০ উপকারিতা
উপজেলা নির্বাচনে টাকা বিতরণের ভিডিও ভাইরাল
উপজেলা নির্বাচনে টাকা বিতরণের ভিডিও ভাইরাল
গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে ইসরায়েলের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকা প্রয়োজন: ব্লিঙ্কেন
গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে ইসরায়েলের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকা প্রয়োজন: ব্লিঙ্কেন
সৌরবিদ্যুতের দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় সরকার
সৌরবিদ্যুতের দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় সরকার
সর্বাধিক পঠিত
নিজের বাসায় পরীক্ষা নিয়েছিলেন কর কর্মকর্তা!
নিয়োগ বাণিজ্য করে কোটি টাকা আত্মসাৎনিজের বাসায় পরীক্ষা নিয়েছিলেন কর কর্মকর্তা!
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলির ফল প্রকাশ
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলির ফল প্রকাশ
ঢাকায় চলবে না ব্যাটারিচালিত রিকশা
ঢাকায় চলবে না ব্যাটারিচালিত রিকশা
যে কারণে রাজশাহীর তিন প্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী ফেল
যে কারণে রাজশাহীর তিন প্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী ফেল
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে খান এই ৫ খাবার
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে খান এই ৫ খাবার