কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর পরিবেশ এতই অপরিচ্ছন্ন হয়ে উঠেছে যে, সেখানে দুর্গন্ধ আর মশার অত্যাচারে দিনের বেলাতেও টিকে থাকা দায়। কোথাও দাঁড়িয়ে দুদণ্ড কথা বলবেন, সেই উপায় নেই। মশা-মাছি ঘিরে ধরবে। এছাড়া আছে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা। ড্রেন, স্যুয়ারেজ লাইন, গোসলের স্থান নিয়মিত পরিচ্ছন্ন না রাখার কারণে, ভালো ব্যবস্থাপনা করে দেওয়ার পরেও দুর্গন্ধ ও মশা থেকে নিষ্কৃতি পাচ্ছেন না এখানকার মানুষেরা। রোহিঙ্গারা বলছেন, অল্প জায়গায় এত মানুষের বসবাসের কারণে এবং কিছুটা অসচেতনতার অভাবে অপরিচ্ছন্নতা বেড়েছে। ইতোমধ্যে ক্যাম্পগুলো ডেঙ্গুর হট স্পট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে ক্যাম্পগুলোর মানুষকে রক্ষা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।
এদিকে কর্তৃপক্ষ বলছে, সব ধরনের চেষ্টা তারা করছেন, কিন্তু ক্যাম্পের মানুষকে সচেতন হতে হবে।
বাংলাদেশে সাধারণত জুন থেকে ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হয়। কারণ, ওই সময়ে শুরু হয় বর্ষাকাল। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব চলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এ বছর মৌসুম শুরুর আগেই হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে সচেতনতার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। তাদের জীবন-যাপন আলাদা হওয়ায়— এ ব্যাপারে কাজও সেভাবে করা যাচ্ছে না বলে হতাশাও আছে।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘এবছর ১ জানুয়ারি থেকে ২৮ মে পর্যন্ত ১ হাজার ৬৬ জন রোহিঙ্গা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। ২৮ মে থেকে ৪ জুন পর্যন্ত আরও ৪৫ আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়। ২০২৩ সালে এ পর্যন্ত ১২৩৩টি কেস পাওয়া গেলো। এরমধ্যে ২ জনের মৃত্যুর রেকর্ড করা হয়। বর্তমানের ট্রান্সমিশন ২০২১ এবং ২০২২ সালের ধারাবাহিকতা।’
কুতুপালং ক্যাম্পে প্রবেশের মুখেই একটি বড় ড্রেনের ওপর কালভার্ট পেরিয়ে যেতে হয়। কালভার্টটির ওপর দাঁড়ালেই পানিতে হাজার হাজার মশার ডিম দেখা যায়। কিছু দূর এগিয়ে যেতে ক্যাম্প ঘেঁষে যে ড্রেন রয়েছে, সেটি নিয়মিত পরিষ্কার করা হলেও কালো দুর্গন্ধযুক্ত পানির কারণে নাকে কাপড় দিয়ে যাতায়াত করতে হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, বালুখালীর ৯ নম্বর ক্যাম্পের অবস্থা আরও খারাপ। এখানে গোসলের স্থানগুলো অতিব্যবহারে অপরিচ্ছন্ন হয়ে উঠেছে। এখানকার গোসল ও স্যুয়ারেজের পানি যে পথ ধরে যায়, সেটার গা ঘেঁষে ঘরগুলো তৈরি হওয়ার কারণে প্রচণ্ড দুর্গন্ধে ঘরে বাস করা যায় না। এখানকার এক রোহিঙ্গা সুহেল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শুরুর দিকে এসব জায়গা পরিচ্ছন্নই ছিল। কিন্তু এখন আমরা গত ৫/৬ বছরে এলাকাগুলো দূষিত করে তুলেছি। এত ছোট এলাকায় এত মানুষ, শিশুদের সংখ্যা এত বেশি— পরিচ্ছন্ন রাখার কথা ভাবা যায় না।’ এসব (ড্রেনের) পানিতে ডেঙ্গু হয় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা পরিবারগুলো পানি ধরে জমিয়ে রাখি, সেখানে ডেঙ্গু মশা জন্মাচ্ছে। নানা ধরনের পোকামাকড়ের উপদ্রবও আছে।’
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কী ধরনের ব্যবস্থা নিতে দেখেন প্রশ্নে রোহিঙ্গারা বলছেন, আশ্রয়কেন্দ্রের আশেপাশের এলাকা, ড্রেন, আবর্জনা ফেলার ডোবা এবং স্থির জলের পয়েন্টগুলোতে নিয়মিত ফগার মেশিনের মাধ্যমে ধোঁয়া দিতে দেখি। পানি জমিয়ে না রাখার বিষয়ে প্রত্যেককে সচেতন হতে বলা হয়। কিন্তু কোনোটিই কাজ করছে না। পানি জমিয়ে না রেখেও তাদের উপায় নেই।
অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার সামসুদ্দৌজা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভয় পাওয়ার পরিস্থিতি হয়েছে তা বলবো না। আমরা পরিচ্ছন্নতার জন্য তাদের নানা কিছু করতে বলছি। প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নিয়মিত নজরদারি, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সম্প্রদায় সংবেদনশীলতার মতো বিষয়গুলোতে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। এ ছাড়া বিভিন্ন পয়েন্টে (পাত্র, ছাদ, খাদ, ইত্যাদি) পানি জমে থাকা রোধ করে পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো হচ্ছে। আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা দিনরাত কাজ করছেন। তারপরও মনে রাখতে হবে, মশার প্রজনন ক্ষেত্র যদি ধ্বংস করা না যায়, এটা কিন্তু প্রাক-মৌসুম, তাহলে পুরোপুরি মৌসুম শুরু হয়ে গেলে পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক হতেই পারে। আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি।’