বিশ্বের বড় রাষ্ট্রের স্বার্থের সংঘাতে বাংলাদেশ ভূরাজনীতির শিকার বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা। তারা বলেন, বাংলাদেশে যদি কোনও মাঝারি জনসমর্থিত রাজনৈতিক দল থাকতো তাহলেও এদেশে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ এত সহজে হতো না। একই সঙ্গে রাজনৈতিকদলগুলো যাই করুক জনগণ যেন আগামী নির্বাচন বর্জন না করে সেদিকেও মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। তাদের মতে, আগামী নির্বাচনে কোনও রাজনৈতিক দলের ভোট কারচুপি কিংবা বর্জনের সুযোগ নেই।
শনিবার ( ১৫ জুলাই) বনানীর ঢাকা গ্যালারিতে এডিটরস গিল্ড আয়োজিত “নির্বাচন নিয়ে ভূরাজনীতি” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তারা এসব কথা বলেন। এডিটরস গিল্ডের সভাপতি মোজাম্মেল বাবু গোলটেবিল বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন।
বৈঠকে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও রাষ্ট্রদূত শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, পৃথিবীতে ভূরাজনীতি নতুন কিছু না। আমরা ভূরাজনীতি সৃষ্টি করি না। অন্যরা করে। আমরা তার একটি অংশ হয়ে আছি। হয়তো কখনও ডেকেও আনি। কিন্তু এধরনের পরিস্থিতি না হলে আমাদের জন্য ভালো হয়। আমরা সব সময় শান্তির পক্ষে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এর আগেও বিদেশিরা আমাদের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করেছে, তখন কিন্তু আমরা কোনও কথা বলেনি। এর আগে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুজাতা সিং আসলেন এবং সরাসরি নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করলেন। আমরা টেনে নিয়ে আসছি।
সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমেদ বলেন, ভূরাজনীতির কথা বলার সময় একটা বিষয় খেয়াল করা উচিত আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ, আমাদের রাজনীতি, আমাদের নির্বাচন— এগুলো আমাদের ব্যাপার। আমরা যখন বলি ভূরাজনীতি এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করছে তখন আমরা আমাদেরকে ছোট করি।
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, আমরা কেউই ভূরাজনীতির বাইরে না। কমনওলথের ডেলিগেশন এখানে আসতে দেখেছি, জাতিসংঘের ডেলিগেশন আসতে দেখেছি। যখন যে ক্ষমতায় থাকে সেই আনে। আমি মনে করি না এলেই ভালো। আমাদের দেশে যদি এভারেজ জনসমর্থিত একটা সরকার থাকতো তাহলে বিদেশিরা এভাবে আসতে পারতো না। কিন্তু আমরা সেই মানটা রাখতে পারি নাই। আমরা এভাবে নিজেদের ছোট করছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. সাদেকা হালিম বলেন, নির্বাচন আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় হলেও তা আর অভ্যন্তরীণ বিষয় থাকছে না। আমাদের ভৌগলিক অবস্থানের কারণে দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় যে তিনশ কোটি মানুষ আছে, বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে সেই তিনশো কোটি মানুষের রাজনীতি অর্থনীতি ব্যবসা-বাণিজ্য সামাজিক বিষয়ে প্রভাব বিস্তার করা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের একটা স্বার্থ আছে, সেটা হচ্ছে অর্থনীতি ও সিকিউরিটি। ভারতের একটা গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারেস্ট আছে, সিকিউরিটি। চীনের একটা স্বার্থ আছে সেটা চীন ও আমেরিকার স্বার্থের মুখোমুখি, সাংঘর্ষিক।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের সাধারণ সম্পাদক বদরুল আলম চৌধুরী ও দৈনিক আমাদের নতুন সময়ের ইমেরিটাস সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান।