চুইঝালের কথা ভাবলেই খুলনার আব্বাস হোটেলের কথা মনে পড়বে। চুইঝাল দিয়ে তাদের রান্না করা খাসির মাংসের সুখ্যাতি দীর্ঘদিনের। কিন্তু চাইলেই ঢাকা থেকে ৪১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সব সময় খুলনায় যাওয়া সম্ভব না। তবে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যালে আপনি শুধু আব্বাস হোটেলের চুইঝালই না, সারা দেশের নাম করা সব খাবারের স্বাদ পাবেন।
বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে এই ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড (বিটিবি)। চার দিনব্যাপী এই ফেস্টিভ্যালের আজ শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) শেষ দিন। শুধুমাত্র খাবারের স্বাদ নয়, মেলা উপলক্ষে চার দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকছে— গম্ভীরা, সিলেটের আঞ্চলিক গান, গাজী কালুর পট, পথ নাট্য, বাউল গান, পুঁথি পাঠ, কাওয়ালি এবং বিশিষ্ট শিল্পীদের গানের আয়োজন। বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে পর্যটক ও পর্যটনকেন্দ্রের নিরাপত্তা,আবাসন,এভিয়েশন পর্যটন খাতে কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা এবং পর্যটন শিল্পে নারীর অংশগ্রহণ, প্রত্ন-পর্যটন, খাদ্য-পর্যটন, পর্যটন ও এভিয়েশন সাংবাদিকতা, প্লাস্টিক ফ্রি সেন্টমার্টিন ইত্যাদি বিষয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
দেশের প্রত্যেক অঞ্চলের খাবারের স্বাদে বৈচিত্র্য আছে। সেজন্যই ভোজন রসিকরা খাবারের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য উপভোগ করেত ঘুরে বেড়ান বিভিন্নে অঞ্চলে। বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যালে ভোজন রসিকদের জন্য রয়েছে সব চমকপদ আয়োজন। আপনাকে সিলেট যেতে হবে না, পানসী রেস্টুরেন্টে সাতকড়া দিয়ে তৈরি বিভিন্ন খাবার পাওয়া যাচ্ছে ফেস্টে।
‘পানতোয়া’ শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি। সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর পশ্চিম তীরের এনায়েতপুর গ্রামের বাঁশতলা বাজারে পাওয়া যায় এই মিষ্টি। দুধের ছানা ঘিয়ে ভেজে বানানো হয় ‘পানতোয়া’। তারপর চিনির পাতলা রসে ডুবিয়ে রাখা হয়। জিবে জল আনা মিষ্টি পানতোয়ার স্বাদ ফেস্টিভ্যালে মিষ্টিপ্রেমীদের কাছে দারুণ আর্কষণ।
কত রকমের আচারের নাম আমরা জানি। কিন্তু কাঠালের আচার হয় ভেবেছেন কেউ? কাঠালের আচারও মিলবে বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যালে গাজীপুর জেলার স্টলে। স্থানীয় নারীরা এই আচার নিয়ে এসেছেন মেলায়। এমনকি তারা পাঙ্গাস মাছের চিপস বানিয়েও নজর কেড়েছেন দর্শনার্থীদের।
ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের দূরত্ব কত? সেই প্রশ্নে গেলাম না। ময়মনসিংহ সদর থেকে ১৬ কিলোমিটার পশ্চিমের মুক্তাগাছা না গিয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যালে মণ্ডার স্বাদ পাওয়া যাবে।
এছাড়া আছে জামতলার সাদেক গোল্লা, নরসিংদী জেলার নকশি পিঠা, নাটোরের কাঁচা গোল্লা, কুষ্টিয়ার কুলফি, পুরান ঢাকার হাজীর বিরিয়ানি, বাকরখানি, বিসমিল্লাহর কাবাব, কুমিল্লার রসমালাইসহ ৬৪টি জেলা থেকে আসা ৭০টির বেশি ঐতিহ্যবাহী ফুড স্টল। এ উৎসবে তাঁত ও জামদানি তৈরির প্রক্রিয়া দেখানো হচ্ছে।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ ছেরের বর্ণাঢ্য আয়োজনে এয়ারলাইন্স, হোটেল, রিসোর্ট, অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, ট্যুরিস্ট-ভেসেল, ট্রাভেল এজেন্ট ও বিভিন্ন ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে। অঞ্চলভিত্তিক খাবারের স্টল আছে ৭০টি। সেখানে মানুষে ভিড় লক্ষ্যণীয়। বাংলাদেশের ঐতিহ্য প্রর্দশন ছিল এ মেলার মূল লক্ষ্য।’