মঙ্গল থেকে বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর) পর্যন্ত টানা তিন দিন দেশব্যাপী অবরোধের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং জামায়াতের ইসলামী বাংলাদেশসহ আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল। এই কর্মসূচিকে ঘিরে সতর্ক অবস্থানে থাকার কথা জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অবরোধকে কেন্দ্র করে যান চলাচলে বাধা দিলে, জনগণের জানমালের ক্ষতি করলে বা যেকোনও ধরনের নাশকতা চালালে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, যেকোনও অপতৎপরতার সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার (২৮ অক্টোবর) শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার অনুমতি নিয়েও উচ্ছৃঙ্খলতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ এবং পুলিশ সদস্য হত্যার ঘটনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কিছুটা চাপে ফেলেছে। তবে কর্মকর্তারা এখন আর কোনও ধরনের ছাড় দিতে রাজি নন। যখনই হরতাল, অবরোধ কিংবা রাজনৈতিক সমাবেশ হবে, সেখানে সংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে অতিরিক্ত নজরদারি রাখা হবে বলে জানাচ্ছেন তারা।
কর্মকর্তাদের ভাষ্য, বিশেষ করে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ করার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরও কঠোর হবে। যারা নির্দেশনা মোতাবেক রাজনৈতিক সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে করতে পারবে, সেসব বিষয় বিবেচনায় নিয়েই অনুমতির চিন্তাভাবনা করা হবে।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচিকে ঘিরে কেউ যদি কোনও ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত কিংবা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটায়, জানমালের ক্ষতি, অগ্নিসংযোগ বা ভাঙচুরের মতো ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে, তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এরইমধ্যে দেশের সব ব্যাটালিয়নকে গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি টহল জোরদারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
একটি সূত্র বলছে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ এলাকাসহ সারা দেশে অবরোধের কারণে কোথায়, কোন কোন সড়কে, কোন কোন ধরনের সমস্যা হতে পারে, কারা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এসব বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। যান চলাচল নির্বিঘ্ন করতে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করা হচ্ছে। যেসব সড়কে বা রেলস্টেশনে আগে নাশকতার ঘটনা ঘটেছে সেসব তথ্য বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে। ওইসব ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামি কারা, তারা কোথায় রয়েছে এগুলো খুঁজে বের করতে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ এবং গোয়েন্দাদের কাজ করতে বলা হয়েছে।
সড়কগুলোতে যাতে কেউ কোনও কিছু ফেলে আটকাতে বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে সে ব্যাপারে হাইওয়ে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সড়ক মহাসড়কগুলোতে টহল বাড়ানোর পাশাপাশি একাধিক টহল টিমকে একসঙ্গে মুভ করার জন্য বলা হয়েছে।
পুলিশ সদর দফতরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিএনপির অবরোধ ঘিরে কেউ যেন কোনও ধরনের নাশকতা কিংবা অপতৎপরতার সুযোগ না পায় সেজন্য প্রতিটি পুলিশ সদস্যকে তৎপর থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে বিএনপির একটি সূত্র বলছে, ঢাকাকে জনবিচ্ছিন্ন করতে হলে অবরোধ সফল করতে হবে। ঢাকাকে সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন করা গেলেই আন্দোলনে একধাপ এগিয়ে থাকা যাবে। এ কারণে ঢাকার সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও পরিবহন চলাচল যেন না করতে পারে সে ধরনের ব্যবস্থা নিয়ে মাঠে থাকবে তারা। তবে এতে সহিংসতা সৃষ্টি হলে পরবর্তীতে অবস্থা বুঝে লাগাতার কর্মসূচি বা অন্য বিষয় আলোচনার ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন-