রাজধানীর গোপীবাগে ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ ট্রেনে দুর্বৃত্তের দেওয়া আগুনে পুড়ে যাওয়া চারটি মরদেহের পরিচয় এখনও শনাক্ত হয়নি। আদালত থেকে অনুমতি নিয়ে উদ্ধার হওয়া চারটি মরদেহের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া নিখোঁজ চার ব্যক্তির পরিবারও তাদের ডিএনএ নমুনা দিয়ে যান আরও ১৫ দিন আগে। তবে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাওয়া মরদেহগুলোর ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে আরও সময় লাগবে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি।
সিআইডির একটি সূত্র জানিয়েছে, মরদেহগুলো এমনভাবে পুড়েছে, যার কারণে শনাক্ত করতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি সময় লাগছে। ফলে এখনই বলা যাচ্ছে না, রিপোর্ট পেতে আরও কতদিন লাগবে।
গোপীবাগ ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডে চারটি মরদেহের দাবিদার এখন পর্যন্ত চার পরিবার। তাদের দাবি অনুযায়ী, নিখোঁজ ব্যক্তিরা হলেন– আবু তালহা, চন্দ্রিমা চৌধুরী সৌমি, এলিনা ও নাতাশা জেসমি।
নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনরা দিন গুনছেন আর অপেক্ষা করছেন কখন আসবে ডিএনএ রিপোর্ট। ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের পর থেকেই নিখোঁজদের সন্ধান পেতে হাসপাতাল, রেলওয়ে, সিআইডি ও ডিবি অফিসে ঘুরছেন তারা। তবে ঘটনার ২০ দিন পেরিয়ে গেলেও নিখোঁজদের এখনও সন্ধান না পাওয়ায় তাদের কেউ কেউ ধরেই নিচ্ছেন মর্গে থাকা চার মরদেহের মধ্যে তাদের সন্তানও আছে। এমনই একজন নিখোঁজ আবু তালহার বাবা আব্দুল হক। তিনি মনে করছেন, গত ৫ জানুয়ারি রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ে তালহার মৃত্যু হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ছেলের সন্ধানে কখনও হাসপাতাল, ডিবি অফিসে, কখনও রেলওয়ে পুলিশের সঙ্গে দেখা করেছি। তারা কোনও খোঁজ দিতে পারেনি। পরে অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছি যে, ছেলে গোপীবাগে ট্রেনের আগুনে পুড়ে মারা গেছে।’
তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর সিআইডি ডিএনএ নমুনা নিয়ে অন্তত সাত দিন অপেক্ষা করতে বলেছিল। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। সিআইডি জানিয়েছে— এ বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। ডিএনএ প্রতিবেদনের পর জানতে পারবো, ছেলে বেঁচে আছে নাকি মারা গেছে।’
শুধু আবু তালহাই নয়, একই আগুনে দগ্ধ হয়ে নিহত আরও তিন জনের মরদেহ মর্গে পড়ে আছে। হাসপাতাল মর্গ সূত্র জানিয়েছে, মর্গে থাকা চারটি মরদেহের তিনটি নারীর একটি পুরুষের একইভাবে অপেক্ষায় আছেন এই তিন মরদেহের দাবিদাররাও।
ডিএনএ রিপোর্ট নিয়ে জানতে চাইলে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির ডিএনএ ল্যাবের অ্যানালিস্ট আহমেদ ফেরদৌস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মৃত চারটি শরীর এতটাই পুড়েছে যে, তা দ্রুত পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। কাজ শেষ করতে হলে আরও সময়ের প্রয়োজন। ফলে এখনই বলা যাচ্ছে না, কখন রিপোর্ট দেওয়া যাবে। বিষয়টি সময় সাপেক্ষ।
এর আগে তিনি বলেছিলেন— আদালত থেকে অনুমতি নিয়ে উদ্ধার হওয়া চারটি মরদেহের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। একইসঙ্গে নিখোঁজ চার ব্যক্তির পরিবারও তাদের ডিএনএ নমুনা দিয়ে গেছেন। তাদের রক্ত ও হাত থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পেতে ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ লাগতে পারে। তারপরও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রিপোর্ট দেওয়া হবে।
মরদেহগুলোর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেছিলেন ঢাকা রেলওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সেতাফুর রহমান। তিনি বাংলা ট্রিবিউন বলেন, ‘আমরাও অপেক্ষায় আছি, সিআইডির রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত কিছু করার নেই। মরদেহের নমুনার সঙ্গে স্বজনদের পরিচয় শনাক্তের পর সিআইডির এই রিপোর্ট হাতে আসলেই আমরা মরদেহগুলো তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করবো।’
রাজধানীর গোপীবাগে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন লাগে গত ৫ জানুয়ারি রাতে। দুর্বৃত্তের দেওয়া আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায় ট্রেনটির কয়েকটি বগি। এ ঘটনায় চার জনের মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। আহত হন অনেকে। অগ্নিকাণ্ডের খবর শুনে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে রাতেই ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন ওই ট্রেনের যাত্রীদের স্বজনরা। রাতেই আগুনের ঘটনায় সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ঘটনার পরদিন ট্রেনটির পরিচালক (গার্ড) এস এম নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।