বিএসএফের গুলিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্য মো. রইছ উদ্দিন নিহতের ঘটনায় আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীর বাহিনী।
বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি অনুবিভাগের মহাপরিচালক সেহেলি সাবরিন সাংবাদিকদের এথ্য জানান।
এক প্রশ্নের জবাবে সেহেলি সাবরিন বলেন, ‘গত ২৪ জানুয়ারি সিপাহী মো. রইছ উদ্দিনের মৃত্যুতে বিএসএফ আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং এ ধরনের ঘটনা রোধে বিজিবি ও বিএসএফ ভবিষ্যতে একসঙ্গে কাজ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।’
প্রসঙ্গত, গত ২২ জানুয়ারি ভোরে যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানার ধান্যখোলা সীমান্ত এলাকা দিয়ে চোরাকারবারিরা ভারত থেকে চোরাইপথে গরু আনছিল। বিষয়টি টের পেয়ে বিজিবি সদস্যরা চোরাকারবারিদের ধাওয়া দিলে তারা ভারত সীমান্তে ঢুকে পড়ে। এ সময় বিজিবি সদস্য রইস উদ্দীন ঘন কুয়াশার কারণে দলবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
প্রথমে তাকে খুঁজে পাওয়া না গেলেও বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায়, তিনি বিএসএফের গুলিতে আহত হয়ে ভারতের অভ্যন্তরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঘটনার পরপরই এ বিষয়ে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক করা হয় এবং জানা যায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই বিজিবি সদস্য মৃত্যুবরণ করেন।
গত ২৪ জানুয়ারি দুপুরে যশোরের শার্শা উপজেলার শিকারপুর এবং ভারতের গাঙ্গুলিয়া সীমান্তে লাশ হস্তান্তর করা হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফর
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ আগামী ৭ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি ভারত সফর করবেন। এ বিষয়ে মুখপাত্র বলেন, ‘সফরের সময় দুই দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ সহযোগিতা, দুইপক্ষের বাণিজ্যিক সম্প্রসারণ, কানেক্টিভিটি ও আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, সেটি প্রাধান্য পাবে।’
‘দায়িত্ব গ্রহণের পরে এটি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর’ জানিয়ে সেহেলি সাবরিন বলেন, ‘বিদ্যমান বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার মাঝে তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তিটি আলোচনা হবে বলে আমরা আশা করছি।’
তিস্তা নিয়ে চীনা প্রকল্পের বিষয়ে আলোচনা হবে কিনা, সেটি এখনও বলা যাচ্ছে না। কারণ এজেন্ডাগুলো নিয়ে এখনও কাজ হচ্ছে। ভারত যদি এ বিষয়ে বাংলাদেশের কাছে কিছু জানতে চায়, তখন আমরা বিষয়টি ভেবে দেখবো বলে তিনি জানান।
এদিকে ভারতের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই মুখপাত্র বলেন, ‘এজন্য ২০১৮ সালে ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের পক্ষে চুক্তিটি সই করে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড গত বছরের (২০ ২৩) এপ্রিলে একটি স্থায়ী আদেশ জারি করে। এর মাধ্যমে ভারত চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করতে পারবে। এ ধরনের চুক্তি করার ক্ষেত্রে যেসব শর্তাবলি বিবেচনা করা হয়, সেগুলো মেনেই এই চুক্তি করা হয়েছে।’
রাখাইন পরিস্থিতি
রাখাইনে সংঘাতের কারণে সীমান্ত পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে পড়ছে।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র বলেন, ‘রাখাইনে চলমান সংঘাত মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে এ সংঘাতের কারণে বাংলাদেশের যেন কোনও ক্ষতি না হয় এবং কোনও অনুপ্রবেশ না ঘটে, সে বিষয়ে বিশেষভাবে নজর রাখা হচ্ছে।’
মিয়ানমারে বাংলাদেশের দুটি মিশন আছে। এর একটি ইয়াংগুনে এবং অপরটি সিতুয়েতে। মিশন দুটি সার্বক্ষণিক নজর রাখছে এবং মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। এছাড়া আমাদের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে বলে তিনি জানান।