X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

সগিরা মোর্শেদকে হত্যায় চুক্তি হয়েছিল ২৫ হাজারে: ৩৫ বছর পর রায় আজ

আরিফুল ইসলাম
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২১:২৭আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০১:৫০

সগিরা মোর্শেদ থাকতেন রাজধানীর আউটার সার্কুলার রোডের বাসার দ্বিতীয় তলায়। তৃতীয় তলায় থাকতো তার ভাসুরের পরিবার। তারা প্রায়ই নিচে ময়লা ফেলতো। তা এসে পড়তো সগিরার রান্নাঘরের পেছনে ও সামনের বারান্দায়। এ নিয়ে প্রায়ই তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো। তুচ্ছ এই ঘটনায় সগিরাকে শায়েস্তা করতে সিদ্ধেশ্বরী এলাকার সন্ত্রাসী মারুফ রেজাকে ২৫ হাজার টাকা চুক্তিতে ভাড়া করা হয়।

১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই পরিকল্পনা অনুযায়ী ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সামনে দিয়ে রিকশায় করে যাওয়ার পথে ভাড়া করা মারুফ রেজার গুলিতে নিহত হন সগিরা মোর্শেদ। এ ঘটনায় রমনা থানায় হত্যা মামলা করেন তার স্বামী আবদুস ছালাম চৌধুরী।

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর আজ বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) এই মামলার রায় ঘোষণা করবেন ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ দায়রা জজ মোহাম্মদ আলী হোসাইন। গত ২৫ জানুয়ারি মামলাটির যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে শুনানির পর এই দিন ঠিক করেন আদালত।

মামলার আসামিরা হলেন নিহতের ভাসুর ডা. হাসান আলী চৌধুরী ও হাসান আলীর স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদ ওরফে শাহীন, শ্যালক আনাস মাহমুদ ওরফে রেজওয়ান এবং ডা. হাসান আলীর ভাড়াটে খুনি মারুফ রেজা ও মন্টু।

এই মামলায় আদালত ৫৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। মামলাটি প্রথমে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এ বিচারাধীন ছিল। ১৩৫ কার্যদিবসে মামলাটির নিষ্পত্তি না হওয়ায় পরবর্তীতে রায় ঘোষণাকারী আদালতে পাঠানো হয়।

১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই রমনা এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী সগিরা মোর্শেদ ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মেয়েকে আনতে যান। স্কুলের কাছেই রিকশায় থাকা অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হন। এরপর ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সগিরা মোর্শেদ মারা যান। এ ঘটনায় তার স্বামী আবদুস ছালাম চৌধুরী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে রমনা থানায় হত্যা মামলা করেন।

সগিরার স্বামীর দীর্ঘ অপেক্ষা
বাদীপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, সগিরা মোর্শেদ হত্যা মামলায় ভুক্তভোগীর পরিবার ৩৫ বছর পরে হলেও ন্যায়বিচার পেতে যাচ্ছে। দেরি হলেও মামলার বিচার শেষ হচ্ছে। আমরা বাদী ও রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছি। সাক্ষীদের জবানবন্দি সেই চিত্র উঠে এসেছে। আশা করি, এই রায় নজির সৃষ্টি করবে।

তিনি বলেন, মামলার বাদী তার স্ত্রীর হত্যার বিচার পাওয়ার জন্য যে আইনি লড়াই করে গেছেন, সত্যি তা অকল্পনীয়। বাদী এখনও লড়াই করে যাচ্ছেন। স্ত্রীর মৃত্যুর পর বাদী আর বিয়ে করেননি। তিন মেয়েকে অনেক কষ্ট করে লালন-পালন করেছেন। ধৈর্য ধারণ করে মামলাটি চালিয়ে আসছেন। মামলার বাদী ন্যায় বিচারের আশায় আছেন। আমরা মনে করি, আদালতে যেসব সাক্ষী উপস্থাপন করা হয়েছে, তার ওপর ভিত্তি করে আদালত আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেবেন। এই মামলায় সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন এই আইনজীবী।

আসামিপক্ষের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী বলেন, মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণের সময় বাদী একবারও বলেননি অভিযুক্তরাই সেই আসামি। একমাত্র ভুক্তভোগীর মেয়ে ছাড়া কেউ আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে কথা বলেননি। বাদী ও রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আশা করি এ মামলার রায়ে আসামিরা ন্যায় বিচার পাবেন।

যেভাবে খুন হন সগিরা
সগিরার ভাসুর ডা. হাসান আলী চৌধুরী আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, তিনি যখন ইস্কাটনে প্র্যাকটিস করতেন, তখন আসামি মারুফ রেজা তার রোগী ছিল। সে শহরে মাস্তানি করতো। সগিরা মোর্শেদকে শায়েস্তা করার জন্য তিনি তাকেই ভাড়া করেন। তার সঙ্গে ২৫ হাজার টাকায় চুক্তি হয়। তাকে সগিরা মোর্শেদকে চেনানোর জন্য দায়িত্ব দেন তার শ্যালক আসানসকে।

সগিরা মোর্শেদের বড় মেয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুলে শ্রেণিতে পড়তো। তিনি মেয়েকে নিয়মিত রিকশায় স্কুলে আনা-নেওয়া করতেন। বিষয়টি ডা. হাসান আলী চৌধুরী, তার স্ত্রী শাহিন ও শ্যালক আনাস মাহমুদ জানতো। পরিকল্পনামতো হাসান আলীর কাছ থেকে টেলিফোনে বিস্তারিত জেনে নেয় আনাস। আনাস ও মারুফ রেজা মোটরসাইকেলে করে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের গেটে গিয়ে সগিরার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।

বিকাল পৌনে ৫টার দিকে সগিরা স্কুলের উদ্দেশে রওনা দেন। সগিরা সিদ্ধেশ্বরী এলাকা অতিক্রম করার সময় মারুফকে চিনিয়ে দেয় আনাস। পরে রিকশার সামনে গিয়ে মোটরসাইকেল দাঁড় করায় তারা। মারুফ সগিরার হাতের ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে স্বর্ণের বালা ধরে টানাহেঁচড়া শুরু করে। এ সময় সগিরা চিৎকার করতে থাকেন। তিনি আনাস মাহমুদকে চিনে ফেলেন।

খুনিদের চিনে ফেলেন সগিরা
সগিরা তাকে বলেন, ‘তুমি তো রেজওয়ান, তোমাকে আমি চিনি। তুমি এখানে কেন?’ এই কথা বলার পরপরই মারুফ কোমরে থাকা রিভলবার বের করে একটি গুলি করলে সগিরা মোর্শেদের ডান হাতে লাগে। পরে দ্বিতীয় গুলি করলে সগিরার বুকে বিদ্ধ হয়। এরপর আসামিরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

১৯৯১ সালের ১৭ জানুয়ারি মন্টু নামে একজনকে আসামি করে চার্জশিট দেয় পুলিশ। আদালতে বিচার শুরু হয়। সাক্ষ্য গ্রহণের এক পর্যায়ে সাক্ষীরা মারুফ রেজা নামে এক ব্যক্তি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে জানান। আদালত পুনর্তদন্তের আদেশ দেন। আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে যায় মারুফ রেজা। দীর্ঘদিন পর ২০১৯ সালে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলাটির অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। তারপর পিবিআই তদন্তে নেমে হত্যার মূল রহস্য বের করে।

২০১৯ সালের ১৬ জানুয়ারি পিবিআইয়ের পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম আদালত চার্জশিট দেন। ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।

/এনএআর/
সম্পর্কিত
অটোরিকশাচালককে হত্যার পর বস্তায় ভরে খালে ফেলে দিয়েছিল তারা: পুলিশ
শ্যালিকার সঙ্গে ‘বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক’, স্ত্রী-কন্যার হাতে বৃদ্ধ খুন
১৯ বছর পর হত্যা মামলায় স্বামী-স্ত্রীসহ ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
সর্বশেষ খবর
লখনউকে বড় হারের লজ্জা দিয়ে শীর্ষে কলকাতা
লখনউকে বড় হারের লজ্জা দিয়ে শীর্ষে কলকাতা
ন্যাশনাল ব্যাংকে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন, নিয়োগ পেলেন ১০ জন 
ন্যাশনাল ব্যাংকে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন, নিয়োগ পেলেন ১০ জন 
স্বস্তির জয়ে শিরোপার লড়াইয়ে ফিরলো লিভারপুল
স্বস্তির জয়ে শিরোপার লড়াইয়ে ফিরলো লিভারপুল
ফিলিস্তিনে যুদ্ধাপরাধে দায়ীদের জবাবদিহি চায় ঢাকা
ফিলিস্তিনে যুদ্ধাপরাধে দায়ীদের জবাবদিহি চায় ঢাকা
সর্বাধিক পঠিত
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
সব জেনেও পুলিশকে কিছু জানাননি মিল্টনের স্ত্রী
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডিবি হারুনসব জেনেও পুলিশকে কিছু জানাননি মিল্টনের স্ত্রী