X
বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪
২৫ বৈশাখ ১৪৩১

কেমন চলছে ঢাকা উত্তর সিটির স্মার্ট পার্কিং ব্যবস্থা?

জুবায়ের আহমেদ
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২১:২৮আপডেট : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২২:১৯

রাজধানীতে গাড়ির মালিকদের অন্যতম সমস্যা হলো যানবাহন পার্কিংয়ের জায়গার অভাব। অনেক বড় বড় ভবনেও পার্কিং সুবিধা না থাকায় বাধ্য হয়ে রাস্তায় যেখানে সেখানে গাড়ি রাখতে বাধ্য হন অনেকে। কেউ এলোমেলো করে রাস্তায় গাড়ি পার্ক করলে বিশৃঙ্খলা যেমন তৈরি হয়, বন্ধ হয়ে যায় স্বাভাবিক চলাচল। বিশেষ করে রাজধানীর বিভিন্ন ব্যস্ত এলাকায় ও শপিং সেন্টারের সামনে  এই সমস্যার কারণে ভোগান্তি পড়তে হয় অন্যান্য যান চালকদের। সড়কে গাড়ি রাখলে নিরাপত্তার ঝুঁকি যেমন আছে, ট্রাফিক পুলিশের জরিমানাও খেতে হয়।

গাড়ি পার্কিংয়ের সমস্যা সমাধানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ডিজিটাল এক পদ্ধতি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করে। গুলশান এলাকায় ছয় মাসের জন্য চালু হয় অ্যাপভিত্তিক ‘স্মার্ট অন স্ট্রিট পার্কিং’ ব্যবস্থা। গতবছর ৮ নভেম্বর চালু হওয়া এই পার্কিং ব্যবস্থার তিন মাস এরইমধ্যে পার হয়েছে। এই গত তিন মাসে এই ব্যবস্থা সন্তোষজনক সাড়া পেয়েছে বলে জানিয়েছে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ।

অন স্ট্রিট পার্কিং অ্যাপ

এই অ্যাপভিত্তিক সেবা চালু করার জন্য ডিএনসিসিকে সহায়তা করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে গঠিত ল অ্আন্ড অর্ডার কোঅর্ডিনেশন কমিটি (এলওসিসি)।

যেভাবে কাজ করে ‘স্মার্ট অন স্ট্রিট পার্কিং’ ব্যবস্থা

‘স্মার্ট অন স্ট্রিট পার্কিং’ সুবিধা পেতে গাড়ি চালকদের ‘ডিএনসিসি স্মার্ট পার্কিং’ নামের অ্যাপটি ডাউনলোড করে রেজিস্ট্রেশন করে নিতে হবে। অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোর এবং আইফোনে অ্যাপ স্টোর থেকে ডাউনলোড করা যাবে। এই অ্যাপের মাধ্যমে গাড়িচালকরা দেখতে পাবেন তার আশপাশে কোথায় গাড়ি পার্কিংয়ের নির্ধারিত স্থান রয়েছে এবং সেখানে কোনও জায়গা খালি আছে কি না। অ্যাপ ছাড়াও রাস্তায় ‘অন স্ট্রিট পার্কিং’ লেখা সাইনবোর্ড দেখেও গাড়ি চালকরা বুঝতে পারবেন কোথায় স্মার্ট পার্কিংয়ের সুযোগ থাকছে।

পার্কিংয়ের জন্য গাড়ি ও বাইকের ক্ষেত্রে আলাদা সময় অনুযায়ী সার্ভিস চার্জ নির্ধারণ করা আছে। এই ফির অর্থ ‘ডিএনসিসি স্মার্ট পার্কিং’ অ্যাপে গিয়ে মোবাইল ব্যাংকিং, মাস্টার বা ভিসা কার্ড থেকে পরিশোধ করা যাবে৷ এছাড়া ‘স্মার্ট অন স্ট্রিট পার্কিং’ এর অর্থ পরিশোধের জন্য আলাদা কার্ড রয়েছে যা ইসলামী ব্যাংক থেকে সংগ্রহ করতে হয়। এই কার্ড থেকে পজ মেশিনের মাধ্যমে টাকা আদায় করবে ওইখানে দায়িত্বরত কর্মীরা।

অ্যাপের মাধ্যমে নির্ধারিত জায়গায় পার্কিংয়ের ক্ষেত্রে প্রাইভেটকার, জিপ ও মাইক্রোবাসের জন্য প্রথম ২ ঘণ্টায় ৫০ টাকা, এর পর তৃতীয় ঘণ্টা আরও ৫০ টাকা ফি দিতে হবে এবং চতুর্থ ঘণ্টা থেকে প্রতি ঘণ্টার জন্য ১০০ টাকা করে দিতে হবে। মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে প্রথম ২ ঘণ্টা ১৫ টাকা, তৃতীয় ঘণ্টা ১৫ টাকা এবং চতুর্থ ঘণ্টা থেকে প্রতি ঘণ্টার জন্য ৩০ টাকা করে ফি বা সার্ভিস চার্জ হিসেবে দিতে হবে। সকাল ৮টা থেকে রাত ১০ পর্যন্ত এই চার্য প্রযোজ্য। ১০টার পর আর চার্জ নেওয়া হবে না। শুক্রবার ও অনান্য ছুটির দিন পার্কিং সম্পূর্ণ ফ্রি।

পার্কিংয়ের ফি সংগ্রহ করছেন এক কর্মী (ছবি: বাংলা ট্রিবিউন)

পরীক্ষামূলকভাবে গুলশানের ৪৬, ৫২, ৫৮, ৬২, ৬৩, ৬৪ ও ১০৩ নম্বর সড়ক, আউটার কাঁচাবাজার ডিআইটি সার্কুলার রোড এবং গুলশান-২ ইনার সার্কুলার রোডে মোট ২৭২টি গাড়ি ও বাইক পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করেছে ডিএনসিসি। এসব স্থানে অ্যাপে নিবন্ধন করে নির্দিষ্ট ফি পরিশোধের মাধ্যমে গাড়ি পার্কিং করা যাচ্ছে। এই পাইলট প্রকল্পটির ফলাফলের ওপর নির্ভর করে পরবর্তীতে ঢাকার আরও ২৯টি স্থানে পার্কিং ব্যবস্থা চালু করা হবে বলে জানিয়েছে ডিএনসিসি।

স্মার্ট অন স্ট্রিট পার্কিং উদ্বোধনকালে ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, এই ধরনের উদ্যোগ বাংলাদেশে প্রথম। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান সিএলডিপি (কমার্শিয়াল ল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম) এর আওতায় মিয়ামি সিটি থেকে বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়ে এই উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। পর্যায়ক্রমে উত্তর সিটির প্রতিটি এলাকায় এটি বাস্তবায়ন করা হবে।

সাড়া কেমন

জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন বলেন, ‘স্মার্ট অন স্ট্রিট পার্কিং’  ব্যবস্থায় আমরা ভালো রেসপন্স পাচ্ছি। এটি সুশৃঙ্খল পদ্ধতি, তাই এর প্রতি মানুষের আগ্রহও বাড়ছে। এই পার্কিং ব্যবস্থায় গাড়ির নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য লোক নিয়োগ করা আছে। আর পার্কিংয়ের জন্য নির্ধারিত স্থান হওয়ায় পুলিশের জরিমানার কোনও ভয় নেই। গাড়ির মালিকরা গাড়ি পার্কিং নিয়ে নিশ্চিত থাকেন।

‘স্মার্ট অন স্ট্রিট পার্কিং’এ তিন মাসে ১৩ হাজার গাড়ি পার্ক হয়েছে। ডিএনসিসির নথিতে দেখা যায় চালু হওয়ার পর থেকে গত তিন মাসে এই অ্যাপের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার গাড়ি পার্ক করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ গাড়ি ও ৩০ শতাংশ বাইক। এতে আয় হয়েছে ৭ লাখ টাকা। প্রতিনিয়তই ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানায় ডিএনসিসি। ‘ডিএনসিসি স্মার্ট পার্কিং’ অ্যাপে এই পর্যন্ত ২২ হাজার মানুষ নিবন্ধন করেছেন।

পার্কিংয়ে সহয়তা করছেন এক কর্মী (ছবি: বাংলা ট্রিবিউন)

পার্কিং স্পটে দ্বায়িত্ব থাকা কর্মীরা বলেন, এখনও অধিকাংশ নতুন যারা স্মার্ট পার্কিং সম্পর্কে জানছেন। যারা জানেন তাদের নতুন করে কিছু জানাতে হয় না। নিজেরাই গাড়ি পার্ক করে রাখেন।

নতুন পার্কিং ব্যবস্থা নিয়ে যা বলছেন গাড়ি চালকরা

সম্প্রতি গুলশানে ‘স্মার্ট অন স্ট্রিট পার্কিং’ এর নির্ধারিত স্থানগুলো ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সব পার্কিং স্পটেই গাড়ি রাখা। প্রত্যেক পার্কিং স্পটে দুই-তিনজন করে কর্মী নিয়োগ করা আছে। যারা গাড়ি পার্কিংয়ে সহয়তা করছেন, গাড়ি দেখে রাখছেন এবং সার্ভিস ফি নিচ্ছেন। পার্কিং স্লট ব্যবহার করা গাড়ি চালকরা এই ব্যবস্থাকে সুশৃঙ্খল পদ্ধতি বলে উল্লেখ করছেন।

উত্তরা থেকে আসা মিজানুর হাসান বলেন, আজ প্রথম এই পার্কিং সম্পর্কে জানলাম। ব্যবস্থাটা ভালো লেগেছে। কিছু টাকা খরচ হলেও নানা পেরেশানি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। ভিড়ভাট্টা আছে এমন এলাকায় গেলে গাড়ি কোথায় পার্ক করবো এই একটা অনিশ্চয়তা ছিল। এখন মোবাইলেই দেখা যাচ্ছে কোথায় জায়গা খালি আছে। এখন একটু দূরে গাড়ি রাখলেও চিন্তা নাই। এইখানে লোক আছে। সময়ও বেঁচে যাচ্ছে।

সব সময় জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে রিফাত নামে আরেক চালক বলেন, গুলশান-২ এ কাজে আসলে এখন পার্কিং নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। এই পার্কিংয়ের ব্যবস্থাটা ভালো করেছে। তবে এখন সব সময় সব পার্কিং জোনে জায়গা পাওয়া যায় না। একটা রোডের একপাশ এই পার্কিং ব্যবস্থার আওয়তায় থাকলেও আরেক পাশে কিন্তু মানুষ যেনতেনভাবে গাড়ি রেখে দিচ্ছে। এতে ভোগান্তি কিন্তু দূর হয় নাই। তাই পুরো রাস্তাটা যেন এই পার্কিং ব্যবস্থার আওতায় আনা হয়। আর পার্কিং স্পট আরও বাড়ানো দরকার।

গুলশান-২ এর আউটার কাচাবাজার রোড দখলে (ছবি: বাংলা ট্রিবিউন)

এখনই বেদখল

পরীক্ষামূলক ‘স্মার্ট অন স্ট্রিট পার্কিং’ এর ১১টি স্থানের প্রত্যেকটিতে ১২ থেকে ৫২টি পর্যন্ত গাড়ি রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে সবগুলো স্থানে গাড়ি রাখার সুযোগ হচ্ছে না। পার্কিংয়ের গাড়ি রাখার স্থানে হকার দাঁড়িয়ে, কোথাও পুরো গাড়ি পার্কিং এলাকা অন্য কারও দখলে চলে গেছে।

গুলশান-২ এর আউটার সার্কেলের ৫২ নম্বর রোডের পার্কিং স্পট ঘুরে দেখা যায়, ৪১টি স্লটের তিনটিতে ফুচকা বিক্রেতা দাঁড়িয়ে। এদিকে আউটার সার্কেল রোডের কাঁচাবাজার রোডের পুরো পার্কিং এলাকা বেদখল। পার্কিংয়ের কোনও কর্মী নেই এদিকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী বলেন, কাঁচাবাজারের দিকে আমাদের লোক নাই। ওইটা দখল করে রাখছে বাজারের লোকেরা। বিভিন্ন জিনিসপত্র রেখে জায়গাটা আটকানো। এছাড়া কিছু ভ্রাম্যমাণ হকারও পার্কিংয়ের জায়গা দখল করে রাখেন বলে জানান দ্বায়িত্বে থাকা একাধিক কর্মী।

/এফএস/
সম্পর্কিত
এবার কি ফুটপাত দখলমুক্ত হবে?
মহাখালী বাস টার্মিনাল এলাকায় অবৈধ দোকান উচ্ছেদ
তাপপ্রবাহে বিক্রি হচ্ছিল ‘নকল স্যালাইন’, এ রকম ঘটনার তথ্য চাইলেন হারুন
সর্বশেষ খবর
জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত উৎসব শুরু আজ থেকে
জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত উৎসব শুরু আজ থেকে
আজিজ মোহাম্মদসহ ৯ জনের মৃত্যুদণ্ড চায় রাষ্ট্রপক্ষ, খালাসের দাবি আসামিপক্ষের
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যাআজিজ মোহাম্মদসহ ৯ জনের মৃত্যুদণ্ড চায় রাষ্ট্রপক্ষ, খালাসের দাবি আসামিপক্ষের
প্রথম জেলা শাখা হিসেবে নোয়াখালীতে উন্মুক্ত লাইব্রেরির যাত্রা শুরু
প্রথম জেলা শাখা হিসেবে নোয়াখালীতে উন্মুক্ত লাইব্রেরির যাত্রা শুরু
ফ্রিজের আয়ু বাড়বে এই ৫ টিপস মানলে
ফ্রিজের আয়ু বাড়বে এই ৫ টিপস মানলে
সর্বাধিক পঠিত
শনিবারে স্কুল খোলা: আন্দোলন করলে বাতিল হতে পারে এমপিও
শনিবারে স্কুল খোলা: আন্দোলন করলে বাতিল হতে পারে এমপিও
‘চুন্নু স্বৈরাচারের দোসর’, বললেন ব্যারিস্টার সুমন
‘চুন্নু স্বৈরাচারের দোসর’, বললেন ব্যারিস্টার সুমন
এক লাফে ডলারের দাম বাড়লো ৭ টাকা
এক লাফে ডলারের দাম বাড়লো ৭ টাকা
অনিবন্ধিত মোবাইল ফোন বন্ধের বিষয়ে যা বলছে বিটিআরসি
অনিবন্ধিত মোবাইল ফোন বন্ধের বিষয়ে যা বলছে বিটিআরসি
হামাসের সংশোধিত প্রস্তাব গাজায় যুদ্ধবিরতি অচলাবস্থা ভাঙতে পারে: যুক্তরাষ্ট্র
হামাসের সংশোধিত প্রস্তাব গাজায় যুদ্ধবিরতি অচলাবস্থা ভাঙতে পারে: যুক্তরাষ্ট্র