X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

‘ম্লান’ বইমেলার মান পরের বারে ফিরবে কি

উদিসা ইসলাম
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০২আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:৩৬

মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা প্রায় শেষ পর্যায়ে। এই শেষ সপ্তাহের যে কয়দিন আছে, পাঠকরা লিস্ট ধরে ধরে বই কিনবেন। মূলত প্রাতিষ্ঠানিক কাজের বইগুলো এই সময় কেনার চল আছে, বলছেন প্রকাশকরা। তবে এবারের মেলাও শেষ হচ্ছে অনেক অভিযোগ আর মানহীনতার গল্প নিয়ে। স্বল্প আলো, অপরিকল্পিত স্টল, ধুলা, বৃষ্টির পরে কাদা আর সবচেয়ে বড় যে অভিযোগ— খাবারের বিশাল বিশাল রেস্টুরেন্ট। আর এসব কারণে বইমেলার যে আবহ, তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ পাঠক-দর্শনার্থীদের। আর আয়োজক বাংলা একাডেমি বলছে, খাবারের দোকানের দরকার আছে, তবে এগুলো যেন পাঠকদের বিরক্তি সৃষ্টি না করে, সেজন্য মেলার একপাশে রাখা আছে। আর প্রাকৃতিক কারণে যে অভিযোগগুলো তৈরি হয়েছে, সেগুলোতে চেষ্টা থাকলেও বাজেটের কারণে অনেক কিছু করা সম্ভব হয়নি।  

গত বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরের পর থেকে কয়েক দফায় হালকা ও মাঝারি বৃষ্টি হওয়ায় শুক্রবার সকালে মেলাপ্রাঙ্গণ ছিল কর্দমাক্ত। এমনকি সকালেও কোথাও কোথাও পানি জমে ছিল। নিয়মানুযায়ী এদিন সকালে শিশুপ্রহর থাকায় বেশ বেগ পেতে হয়েছে অভিভাবকদের। বেশকিছু স্টলে ডিসপ্লে থেকে গতকাল ভিজে যাওয়া বই তুলে রাখা হয়েছে। এমনকি পানি যেন স্টলের মধ্যে না ঢোকে, সেজন্য বালতি বসিয়ে পরিস্থিতি সামলাতে দেখা গেছে কোনও কোনও স্টলে। সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাসে মৌসুমের প্রথম বৃষ্টি শুরু হয়, অথচ প্রতিবারই একই ভোগান্তিতে পড়তে হয় প্রকাশকদের।

পানি আটকানোর জন্য স্টলে বসিয়ে রাখা হয়েছে বালতি (ছবি: প্রতিবেদক)

এই ভোগান্তি নিয়ে কথা বলতে গিয়েই বেরিয়ে এলো অভিযোগের ঝাঁপি। কিন্তু কেউ মুখ খুলছেন বটে, পরিচয় প্রকাশ করবেন না শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন। কেননা, তারা বাংলা একাডেমির আয়োজনের সমালোচনা করছে জানলে একাডেমি কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাবে তা নিয়ে শঙ্কিত। প্রকাশকরা বলছেন, এবারের মেলা এতো এলোমেলো, শিশু চত্বর এতো ঘিঞ্জি করে দেওয়া হয়েছে; রাত নামলেই এতো ম্লান লাগে মেলাপ্রাঙ্গণ। ঝলমলে ভাবটা নেই। সেলফি তুলবেন, খেয়ে-দেয়ে বাসায় ফিরবেন পাঠক, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এরকম দৃষ্টিকটু সাইজের খাবার দোকান, চারপাশে বিরিয়ানির সুগন্ধ আর প্লাস্টিকের লাল-নীল চেয়ার মাঠজুড়ে ছড়িয়ে দিয়ে একদম নান্দনিক ব্যাপারটাই হারিয়ে গেছে। আমরা সমালোচনা করি, যাতে করে এসব বিবেচনায় নিয়ে পরেরবার আর এমনটা না হয়। এটা নিন্দা করা নয়, এই বিষয়টি একাডেমিকে বুঝতে হবে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে মেলা আসার পরে মেলাপ্রাঙ্গণকে পরপর চার বছর গুছিয়ে দিয়েছিলেন স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝর। গত দুই বছর ধরে  তিনি কাজটি আর করছেন না। মেলায় ব্যবসা হবে, কিন্তু ব্যবসার জন্য মেলা বসালে কী হবে— তা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, মেলার পরিকল্পনা করা মোটেই ছোট কোনও কাজ না। যারা সৃজনশীল, যারা পরের প্রজন্মকে ভালোবাসেন, তারা কাজটি গুছিয়ে করতে চাইবেন। বইমেলা একটা জরুরি জিনিস ছিল, সেটাকে যা বানানো হলো বা হচ্ছে, সেটা থামানো দরকার।

তিনি বলেন, ‘আমি চেষ্টা করেছিলাম, এই প্রক্রিয়ায় তরুণদের কীভাবে যুক্ত করা যায়। তারপর আমাকে পরিকল্পনা কমিটিতে না দিয়ে নজরদারি কমিটিতে থাকতে বলা হয়। এতে আমিও বুঝলাম, আমার কাজ শেষ।’

বইমেলার একপাশে বসানো হয়েছে খাবারের দোকান (শুক্রবার সকালে ছবি তুলেছেন প্রতিবেদক)

মাসজুড়ে মেলায় খাবারের স্টল নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। শুক্র ও শনিবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে মেলা চলে বিকাল ৩টা থেকে। শেষ হয় রাত ৮টায়। কেউ যদি মেলায় পুরোটা সময় থাকেন, তাদের জন্য বিরিয়ানির সুব্যবস্থা করা কতটা জরুরি— সেই প্রশ্নও উঠেছে। ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের গেট দিয়ে মেলা প্রাঙ্গণে ঢুকতে পুরো মাঠ জুড়ে খাবারের দোকান পার হয়ে তবে যেতে হবে বইয়ের কাছে। খাবারের মাঠে ভারী খাবারের বিশাল যজ্ঞ। যারা দেশবিদেশের মেলা ঘুরে দেখেছেন তাদের অভিজ্ঞতা হলো, খাবার থাকবে, কফি চা থাকবে কিন্তু সেটা এরকম ‘বিয়েবাড়ি স্টাইলে’ থাকলে খুবই দৃষ্টিকটু।

প্রকাশক খন্দকার সোহেল বলেন, আমাদের আশেপাশের দেশগুলোর দিকেও যদি তাকাই বইমেলার জায়গাটা খুবই পরিকল্পিত হয়। খাবারের ব্যবস্থা থাকবে কিন্তু সেটা খুব ছোট ছোট করে। যারা পরিকল্পনাটা করেন তারা এক্সপার্ট না, প্রতি বছর তারা এক্সপেরিমেন্ট করেন। আজ মেলায় কাদায় হাঁটা যায় না। প্রশ্ন হলো, প্যাভিলিয়ন বা স্টলের জন্য যে টাকা একাডেমি নেয়, তার বিপরীতে আমাদের কী দেয়?

মেলা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব ড. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, খাবার নিয়ে গতবার অনেক বেশি অভিযোগ ছিল বলে এবার পেছনের যে মাঠ সেখানে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেকে বলছেন ফাস্টফুড হালকা নাশতা থাকলেই হতো। আমরা সেই চেষ্টা করেছি কিন্তু নামি-দামি দোকানগুলো নিজেরাই আসতে চায়নি। যারা অভিযোগ করেছেন যে, মেলায় মানুষ বই না কিনে খেতে আসেন, তারা ঠিক বলছেন না। এখানে এমন কোনও হাইজিন খাবার বিক্রি হয় না, যে মানুষ পরিকল্পনা করে এই খাবার খেতে মেলায় আসবে। তবে মেলার একটা অংশ সংকুচিত হয়ে গেছে এটা আমি মানছি। যদিও এর জন্য বাংলা একাডেমি দায়ী নয়। পুস্তক মালিক সমিতির অনুরোধে স্টলগুলোকে সব এক জায়গায় রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। 

সামান্য বৃষ্টিতে বইমেলায় জমে গেছে পানি (শুক্রবার সকালে ছবি তুলেছেন প্রতিবেদক)

পরিকল্পনায় কারা ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলা একাডেমির নিজস্ব কাঠামো আছে। আমরা তাদেরই কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি। মেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চলে আসার পরে কয়েকবার বাইরে পরিকল্পনা করতে দেওয়া হয়েছে। তাতে মেলা বিস্তৃত হয়েছে বটে কিন্তু যারা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের দিকের মাঠে ছিলেন, সেই প্রকাশকরাই জায়গাটিকে ‘ভাষানচর’ নাম দিয়েছিলেন এবং তারা ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল বলেও অভিযোগ করেছিলেন। সেসব বিষয় মাথায় নিয়ে আমরা নিজেরাই পরিকল্পনা করেছি। 

মেলায় প্রতিবারই বৃষ্টি হলে চলাচলের অযোগ্য হয়ে যায়, বই ভিজে যায় এগুলো বন্ধের ব্যাপারে ভাবা হয় না কেন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আজ সকাল থেকেই পানি সরানোর চেষ্টা করা হয়েছে। বাংলা একাডেমিকে মাঠটি এক মাসের জন্য দেওয়া হয় এবং এবারও মাত্র এক সপ্তাহ আগে দেওয়া হয়েছে। ফলে মাঠ নিয়ে কাজ করার উপায় আমাদের থাকে না। আর পুরো মাঠে ইট বিছিয়ে দিতে ১ কোটি টাকার বেশি খরচ হবে, যা বহনের ক্ষমতা আমাদের নেই।’

/ইউএস/
সম্পর্কিত
ইট-পাথরের নগরীতে একটুখানি প্রশান্তির খোঁজে
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
সর্বশেষ খবর
হেলিকপ্টারের সিটে বসতে গিয়ে পড়ে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
হেলিকপ্টারের সিটে বসতে গিয়ে পড়ে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
রাজধানীর ১০ থানায় কিশোর অপরাধ বেশি: ডিএমপি কমিশনার
রাজধানীর ১০ থানায় কিশোর অপরাধ বেশি: ডিএমপি কমিশনার
বলিউডে কোণঠাসা প্রিয়াঙ্কা!
বলিউডে কোণঠাসা প্রিয়াঙ্কা!
বংশালে ছাদ থেকে পড়ে শিশুর মৃত্যু
বংশালে ছাদ থেকে পড়ে শিশুর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম