X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

চকবাজারে আগুন ছড়িয়ে পড়লে বড় ক্ষতির শঙ্কা ছিল

সুবর্ণ আসসাইফ
২৪ মার্চ ২০২৪, ২২:০০আপডেট : ২৪ মার্চ ২০২৪, ২২:০০

চকবাজারের পশ্চিম ইসলামবাগে প্লাস্টিক কারখানায় আগুনের ঘটনায় কোনও প্রাণহানি না ঘটলেও আগুন ছড়িয়ে পড়লে বড় ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা ছিল। ভবনটিতে ছিল প্লাস্টিক দানা ও প্লাস্টিক রিসাইকেল করার কেমিক্যাল। ভবনটির আশপাশে রয়েছে অর্ধশতাধিক কারখানা ও গোডাউন। যার বেশিরভাগে রয়েছে বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ। ফলে আগুন ছড়িয়ে পড়লে ঘটতে পারতো ভয়াবহ দুর্ঘটনা। এছাড়াও সরু গলির কারণে ঢুকতে পারেনি ফায়ার সার্ভিসের বড় ল্যাডারের গাড়ি। ছোট গাড়িগুলোকে কয়েকশত মিটার দূর থেকে কাজ করতে হয়েছে।

শুক্রবার (২২ মার্চ) গভীর রাতে পশ্চিম ইসলামবাগের নামাপাড়া এলাকার শহীদুল ইসলাম রোডের চারতলা ভবনটির দ্বিতীয় তলায় আগুনের সূত্রপাত হয়। ফায়ার সার্ভিস জানায়, রাত সাড়ে ৩টার দিকে সেখানে আগুন লাগে। আগুনের খবর পেয়ে রাত ৩টা ৩৫ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করে। পরপর আরও ৮টি ইউনিট যোগ দেয়। ভোর ৬টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আগুন ধরা ভবনটির আশপাশে বেশিরভাগ ভবনেই রয়েছে কেমিক্যাল, পলিথিন ও প্লাস্টিকের গোডাউন ও কারখানা। আশপাশের অধিকাংশ ভবনে রয়েছে টিনশেড। এছাড়া প্রতিটি কারখানার সামনে রয়েছে এক বা একাধিক বৈদ্যুতিক ট্রান্সমিটার। ফলে আগুন ছড়িয়ে পড়লে বড় দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির শঙ্কা ছিল।

স্থানীয় বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘সেহরির জন্য ঘুম থেকে উঠেছিলাম। এরপর শুনি আগুন আগুন চিৎকার। ভয়ে ছিলাম আগুন ছড়িয়ে পড়ে কিনা। কারণ আশপাশের কারখানা ও গোডাউনে সব দাহ্য পদার্থ। তবে আল্লাহর শুকরিয়া আগুন বাইরে ছড়ায়নি।’

সরু গলি ও অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণের কারণে আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুৃকতে বেগ পেতে হয় অপর বাসিন্দা পারভেজ বলেন, ‘শুধু এই গলিটাতেই প্রায় ৪০-৫০টা কারখানা আর গোডাউন আছে। আমরা আতঙ্কে ছিলাম আগুন ছড়ালে আমাদের সব শেষ হয়ে যাবে। এ কারণে এলাকাবাসীও যে যার মতো চেষ্টা করেছে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে। সবাই বাড়ির ট্যাংক খুলে দিয়েছে। কারণ আগুন ধরলে সব শেষ হয়ে যেতো আমাদের।’

শনিবার দুপুর ১২টা নাগাদ সরেজমিন দেখা যায়, তখনও ভবনটি থেকে বের হচ্ছিল ধোঁয়া। প্লাস্টিক পোড়া গন্ধ পুরো এলাকাজুড়ে। চারতলা ভবনটির পুরোটাজুড়েই ছিল স্পন্সের স্যান্ডেল তৈরির কারখানা। ভবনটির নিচতলা ব্যবহার হতো জুতা ও খামারের শিট তৈরি করতে। আর দ্বিতীয় তলার একাংশে ছিল গোডাউন। তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় রাখা হতো তৈরি জুতা এবং একটা অংশ ব্যবহৃত হতো প্যাকেজিংয়ের কাজে। তৃতীয় তলায় একটা অংশে শ্রমিকদের থাকার জায়গা।

স্থানীয়রা জানান, ভবন ও কারখানার মালিক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিল শহীদুল ইসলাম বাবুল। কারখানাটির নাম লৌহজং প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রি। প্রায় ২০ বছর ধরে ভবনটিতে এই কারখানা চলে আসছে। কারখানাটিতে মূলত প্লাস্টিক রিসাইকেলিংয়ের কাজ করা হয়। পুরনো প্লাস্টিক গলিয়ে তৈরি করা হয় প্লাস্টিক দানা। তা থেকে তৈরি হয় স্পন্সের স্যান্ডেল ও খামারের জন্য শিট।

আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগের উপপরিচালক মোহাম্মদ সালেহ উদ্দিন বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, পুরান ঢাকায় কোথাও আগুন লাগলে কী ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। অনেক দূরে গাড়ি রেখে এসে আমাদের কাজ করতে হয়েছে। আশপাশে কোথাও পানির সোর্স নেই। আমরা বুড়িগঙ্গায় একটা পাম্প বসিয়ে বিশেষ পানিবাহী গাড়ির মাধ্যমে এ পর্যন্ত পানি এনেছি। এছাড়া এখানে যত্রতত্র বিদ্যুতের তার ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় আগুন ছড়ানোর আশঙ্কা ছিল। কিন্তু আগুন বড় আকার ধারণ করার আগেই আমরা সবার সহযোগিতায় তা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছি।’

আগুন নেভানোর পর ফায়ার সার্ভিসের উপস্থিত সদস্যরা জানান, আধুনিক ল্যাডারবাহী গাড়ি প্রবেশের যথেষ্ট জায়গা না থাকায় সাধারণ ল্যাডারের সাহায্যেই আগুন নেভানোর চেষ্টা করতে হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত বহু এলাকায় আগুন লাগলে ছোট গাড়ি নিয়েও প্রবেশ করা তাদের জন্য দুষ্কর হয়। ঘনবসতি ও সরু গলির কারণে যেকোনও দুর্ঘটনায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয়। এখানেও একই অভিজ্ঞতা হয়েছে। গলিটি একেবারেই সরু হওয়ায় ঘটনাস্থলে গাড়ি নেওয়া সম্ভব হয়নি। কয়েকশত মিটার দূরে গাড়ি রেখেই তারা মই নিয়ে ঘটনাস্থলে যান ও পাইপের সাহায্যে পানি দিয়ে আগুন নেভানো হয়েছে।

এসব ভবনজুড়ে রয়েছে বিভিন্ন দাহ্য পদার্থের কারখানা স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কিছুক্ষণের মধ্যে ফায়ার সার্ভিস এলেও গাড়ি আনা যাচ্ছিল না ভবনটির কাছে। দূরে গাড়ি রেখেই তারা পাইপের সাহায্যে পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। তবে আগুনের তীব্রতার তুলনায় তাদের ট্যাংকারের পানি সরবরাহ যথেষ্ট ছিল না। ঘটনাস্থলের আশপাশেও পানির মজুত ছিল না। এসময় স্থানীয়রা বাসাবাড়ির ট্যাংক থেকে পানির জোগান দেওয়ার চেষ্টা করেন।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. মাহাবুব আলম বলেন, ‘প্রথমত পুরান ঢাকা পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয়নি। ফলে যেকোনও ধরনের দুর্ঘটনায় ভয়াবহতার মাত্রা কয়েকগুণ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এখানে। দ্বিতীয়ত আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক স্থাপনা বা বাণিজ্যিক এলাকায় আবাসন কোনোভাবেই উচিত না। তাহলে যারা এখানে বাণিজ্যিক অনুমোদন দিলো, কেন দিলো এটা খুঁজে বের করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এর আগেও আমরা পুরান ঢাকায় অগ্নি দুর্ঘটনা দেখেছি, যেগুলোতে প্রাণহানি ঘটেছে। কিন্তু এগুলো থেকে আমরা শিক্ষা নিইনি। কারণ, আগের ঘটনাগুলোর কারণগুলো গভীরভাবে অনুসন্ধান হয়নি, ভবিষ্যতে যেন এমন কিছু না ঘটে, তার সমাধান খোঁজা হয়নি।’

ছবি: প্রতিবেদক

আরও পড়ুন:

ভবনটির দ্বিতীয় তলা ছিল প্লাস্টিকের দানায় ঠাসা

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
ভাসানটেকে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় একে একে পরিবারের সবার মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
স্ত্রীকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছেলে, রান্নাঘরে পুড়ে মারা গেলেন মা
সর্বশেষ খবর
ভিজিএফের চাল না পাওয়া উপকারভোগীদের মানববন্ধনে হামলা
ভিজিএফের চাল না পাওয়া উপকারভোগীদের মানববন্ধনে হামলা
রাফাহ শহরে নতুন করে  ইসরায়েলি হামলায় ১৩ ফিলিস্তিনি নিহত
রাফাহ শহরে নতুন করে ইসরায়েলি হামলায় ১৩ ফিলিস্তিনি নিহত
টিভিতে আজকের খেলা (২৯ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৯ এপ্রিল, ২০২৪)
টিপু-প্রীতি হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ আজ
টিপু-প্রীতি হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ আজ
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ