জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) মাধ্যমে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদ গ্রহণের অভিযোগ তোলা হয়েছে সংসদীয় কমিটিতে। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য ও স্বতন্ত্র এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল লতিফ সিদ্দিকী এ অভিযোগ তোলেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, কমিটির আগের বৈঠকে (১২ জুন অনুষ্ঠিত) এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। বুধবার (১০ জুলাই) অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আগের বৈঠকের কার্যবিবরণী তুলে ধরা হয়।
ওই বৈঠকে কমিটির সদস্য লতিফ সিদ্দিকী জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলেরর মাধ্যমে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ গ্রহণের অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, জামুকা ২০১৭ সালে যাচাই-বাছই করে নতুন মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রণয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এর ফলে ২০১৬ সালে যারা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না, এখন দেখা যাচ্ছে— তারা বীর মুক্তিযোদ্ধা। এদের কেউ কেউ এই সংস্থার (জামুকার) সঙ্গে সম্পর্ক করে ভুয়া সনদ তৈরি করেছেন বলে অভিযোগ আছে। এতে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ হচ্ছে না বলেও তিনি অভিযোগ তোলেন। তিনি মন্ত্রণালয়কে সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেন।
কমিটির সদস্য শাজাহান খান বলেন, স্বাধীনতার এত বছর পরে নতুন করে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা তৈরি সহজ নয়। মুক্তিযোদ্ধা যাছাই-বাছাই কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্তদের অন্যতম শাজাহান খান বলেন, যাছাই-বাছাই করতে গিয়ে এমন অবস্থার সম্মুখীন হতে হয় যে, আমরা তাদেরকে চিনি না। জমিজমার বিরোধের জেরে এক ভাই অন্য ভাইয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার দৃষ্টান্ত তুলে ধরে তিনি বলেন, এক চাচা ও ভাতিজার সাক্ষাৎ গ্রহণকালে চাচা তার ভাতিজার (মুক্তিযোদ্ধা ভাইয়ের ছেলে) বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে চাচা হজ করতে যাওয়ার আগে এসে আমাদের বলেন যে, তিনি মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন। তার ভাই মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন। তার ভাতিজা সত্য বলেছিল। ভাতিজার সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ থাকায় মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। তিনি জামুকাকে আরও স্বচ্ছ ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার পরামর্শ শাহাজান খান।
উল্লেখ্য, শাজাহান খান একাদশ জাতীয় সংসদে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন। ওই সময় তিনি রাজাকারদের তালিকা প্রকাশের উদ্যোগ নেন। এজন্য নিজেকে সভাপতি করে একটি সাব-কমিটিও গঠন করেন। পূর্ণাঙ্গ না হলেও আংশিক তালিকা প্রকাশ করবেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত ওই তালিকা আর প্রকাশিত হয়নি।
কমিটির সভাপতি মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের সভাপতিত্বে বুধবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটি সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হক, শাজাহান খান ও মাহফুজা সুলতানা অংশগ্রহণ করেন।