ডেইলি স্টার প্রকাশক ও সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেছেন, লজিক বলে যেখান থেকে প্রাপ্তি বেশি সেখানেই ফোকাস থাকা উচিত। অভিবাসীরা আমাদের বছরে ২২-২৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠান। তাহলে প্রশ্ন হতে পারে, আমরা এখানে কতটুকু বিনিয়োগ করছি এই ২২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আহরণে। প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের সরকার এই ২২-২৩ বিলিয়ন ডলার আহরণে কতটুকু বিনিয়োগ করে?
রবিবার (১৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর ডেইলি স্টার সেন্টারে ‘নবম মাইগ্রেশন মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
মাহফুজ আনাম বলেন, আমাদের জাতীয় বাজেটের দশমিক ৫ শতাংশ বরাদ্দ থাকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে। সরকারের কোনও মন্ত্রণালয় বা ডিপার্টমেন্ট অন্তত ১ বিলিয়ন ডলার আয় করে? আরেকটি বিলিয়ন ডলার আয়ের উৎস হচ্ছে তৈরি পোশাক। কয়েক ধরনের প্রণোদনা, ঋণসহ অনেক সুবিধা তৈরি পোশাক খাত পায়। আমাদের জাতীয় বাজেটের আকার ১ লাখ ৫০ হাজার কোটির মতো। সবচেয়ে কম বরাদ্দ দেওয়া হয় এই প্রবাসীদের মন্ত্রণালয়ে। এর যৌক্তিকতা কী?
তিনি বলেন, আমি মনে করি, এরকম চিন্তার পেছনে একমাত্র কারণ আমাদের মানবসম্পদকে শোষণ করা। আপনারা শুধু লোক পাঠান, কোথায় পাঠাচ্ছেন, তারা কীভাবে থাকছে, স্বাস্থ্য ঠিক থাকছে কিনা, নিরাপদ পরিবেশ কিনা— আমাদের দেখার কোনও প্রয়োজন পড়ছে না। তারা কত রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে সেটা আমাদের মূল কনসার্ন। আমরা পদক্ষেপ নেই, ব্যাংকের শাখা বৃদ্ধি করি, রেমিট্যান্সে প্রণোদনা দেই, যাতে তারা টাকাটা পাঠায়।
মাহফুজ আনাম বলেন, যারা সফল অভিবাসন করতে পারেন না, তারা কেমন পরিস্থিতির মধ্যে ফিরে আসেন? তাদের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ব্র্যাকের কর্মসূচি আছে, সরকারের কী আছে? প্রবাসীরা ২২ বিলিয়ন ডলার পাঠায়, তাদের উপেক্ষা কীভাবে করা যায়?
সাংবাদিকদের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, সাংবাদিক বন্ধুরা এ নিয়ে অনেক সুন্দর সুন্দর প্রতিবেদন করতে পারেন। তারা বাংলাদেশের নাগরিক এবং আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। তারা যদি রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ করে দেয়, তাহলে আমাদের রিজার্ভের কী অবস্থা হবে, অর্থনীতির কী হবে একবার ভেবে দেখেছেন? সুতরাং, আমি কিংবা আপনি সরাসরি অভিবাসী ইস্যুতে সম্পৃক্ত না হলেও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত। আমরা অভিবাসী ইস্যুতে প্রতিবেদন তৈরিতে যথেষ্ট শ্রম দেই না। প্রতিবন্ধকতা আছে কিছু তা সত্ত্বেও আমাদের চেষ্টা করা উচিত।
মাহফুজ আনাম বলেন, সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় বেশ কিছুসংখ্যক প্রবাসী কর্মী কাগজপত্রহীন হয়ে পড়েছেন। কারণ বাংলাদেশ দূতাবাস পাসপোর্ট সময় মতো নবায়ন করতে পারেনি। পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে গন্তব্য দেশ আপনাকে চিনবে না। দূতাবাসের দোষে পাসপোর্ট নবায়ন হয়নি। যারা আমাদের ২২ বিলিয়ন ডলার পাঠাচ্ছে, আমরা তাদের পাসপোর্ট পর্যন্ত নবায়ন করে দিতে পারছি না। আমাদের সরকার তাহলে আসলে কী করছে? কতটুকু সাপোর্ট দিচ্ছে অভিবাসীদের, এটা নিয়ে কাজ করতে পারেন। আমি মনে করি, আমাদের এবং মিডিয়ার এখানে অনেক কিছু করার আছে। এই যে ২২ বিলিয়ন ডলার যারা পাঠাচ্ছেন, তারা কিন্তু খরচটাও করছেন নিজের। সব খরচ নিজে করে তারপর বিদেশ যাচ্ছেন। আমি মনে করি, আমরা, সমাজ, সরকার কেউই তাদের জন্য যথেষ্ট কিছু করতে পারিনি।
এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও ডেলিগেশন প্রধান মাইকেল মিলার। আরও উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ শাহিন, ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ন্যাশনাল প্রোগ্রাম ম্যানেজার রেহনুমা সালাম খান, ব্র্যাকের এডুকেশন, স্কিল ডেভেলপমেন্ট এবং মাইগ্রেশন পরিচালক সাফি রহমান খান প্রমুখ।