বকেয়া বেতন, ঈদ বোনাস ও বাৎসরিক ছুটির টাকা পরিশোধের দাবিতে রাজধানীর কাকরাইলের শ্রম ভবনের সামনে টানা তিন দিন ধরে আন্দোলন করছেন অ্যাপারেল প্লাস ইকো লিমিটেড ও টি অ্যান্ড জেড অ্যাপারেলস লিমিটেডের কয়েক হাজার পোশাক শ্রমিক।
শ্রমিকরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) রাতের মধ্যে তাদের দাবি মেনে নেওয়া না হলে বুধবার (২৬ মার্চ) থেকে গাজীপুরে মহাসড়ক অবরোধসহ কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি পালন করা হবে।
শ্রমিক নেতা মো. মাসুদ মিয়া বলেন, গাজীপুরে আমাদের মতো আরও অনেক পোশাক কারখানা রয়েছে, যেখানে কয়েক লাখ শ্রমিক কাজ করেন। আমাদের পাওনাদি পরিশোধ করা না হলে গাজীপুর অচল করে দেওয়া হবে। আমরা লাঠিসোটা হাতে রাস্তায় নামবো, আমাদের বাধা দিলে পুলিশকে কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে।
এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে শ্রম ভবনের সামনে অবস্থানরত শ্রমিকরা সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচির চেষ্টা করলে পুলিশের বাধার মুখে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এসময় শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে, যেখানে অন্তত ৫ পুলিশ সদস্যসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন।
শ্রমিকরা জানান, জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকায় তাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এক আন্দোলনকারী বলেন, আজ আমরা খালি হাতে ছিলাম, কাল কিন্তু থাকবো না। আমাদের একজন শ্রমিককে মারলে, আমরা প্রতিশোধ নেবো।
শ্রমিকদের কঠোর হুঁশিয়ারি
গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলনের কার্যকরী সভাপতি ও জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক শামীম ইমাম বলেন, শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের লড়াই নতুন নয়। আমরা বারবার বলেছি, শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা বুঝিয়ে দিতে হবে। সরকার ও মালিকপক্ষ যদি সময়মতো বেতন-বোনাস পরিশোধ না করে, তবে যে কোনও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্য তারাই দায়ী থাকবে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যেতে চাই, কিন্তু আমাদের বাধ্য করলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
টানা তিনদিন ধরে আন্দোলন
গত রবিবার (২৩ মার্চ) থেকে বিজয়নগরের শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন গাজীপুরের টি অ্যান্ড জেড অ্যাপারেলস লিমিটেড, অ্যাপারেল প্লাস ইকো লিমিটেড, রোর ফ্যাশন, স্টাইল ক্রাফট গার্মেন্টস ও ডার্ড কম্পোজিট টেক্সটাইল লিমিটেডের শ্রমিকরা। প্রায় দুই হাজার শ্রমিক এ আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন।
মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে আন্দোলনকারীরা শ্রম ভবনের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কিছু শ্রমিক সচিবালয়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশের বাধার সম্মুখীন হন। একপর্যায়ে শ্রমিকরা পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
শ্রমিকরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাতের মধ্যে দাবি মেনে না নেওয়া হলে বুধবার থেকে আরও কঠোর কর্মসূচি পালন করা হবে। তাদের দাবি— বকেয়া বেতন-বোনাস পরিশোধ করতে হবে, শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে হবে, এবং আন্দোলন দমনে সরকারের দমন-পীড়ন বন্ধ করতে হবে।
সরকার ও মালিকপক্ষ এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি, তবে শ্রম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিষয়টি সমাধানের জন্য আলোচনা চলছে।