২০২৪ সালের ন্যাশনাল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স পলিসি পরামর্শমূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চূড়ান্ত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
শনিবার (৩ মে) ‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস ২০২৫’ উপলক্ষে আয়োজিত ‘বাংলাদেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বক্তারা সরকারের প্রতি এ আহ্বান জানিয়েছেন।
ভয়েসেস ফর ইন্টারঅ্যাকটিভ চয়েস অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট (ভয়েস) এই ওয়েবিনারের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে সাংবাদিক, সিভিল সোসাইটির সদস্য, মানবাধিকারকর্মী, আইন বিশেষজ্ঞ, প্রযুক্তিবিদ এবং গবেষকরা অংশ নেন।
এতে বক্তব্য রাখেন এঙ্গেজ মিডিয়ার প্রতিনিধি রেজওয়ান ইসলাম, আইসিএনএল-এর আইন পরামর্শক শারমিন খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক সাঈমুম রেজা তালুকদার, ডিজিটালি রাইট-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী, ডিজিটালি রাইটসের গবেষণা সমন্বয়ক মিনহাজ আমান এবং দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার সাংবাদিক তাজুল ইসলাম।
ওয়েবিনারে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশের নিউজরুমে এআই টুলসের ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে, এতে নির্দিষ্ট কিছু কাজ অটোমেট করা যায় এবং কনটেন্ট দ্রুত প্রকাশ করা যায়, তবে প্রযুক্তিগত বিভাজন দূর করতে হবে এবং মিথ্যা সংবাদ ছড়িয়ে পড়া রোধে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।’
রেজওয়ান ইসলাম বলেন, ‘এআই গবেষণার জন্য উপকারী এবং সময় বাঁচাতে সাহায্য করতে পারে। তবে এটি একটি প্রবন্ধ লেখার কাজ করতে পারে না, কারণ এর সাংবাদিকের অভিজ্ঞতা এবং বিচারবোধ নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো— জনগণ মিডিয়ার ওপর আর বিশ্বাস রাখতে পারছে না। তাই, এআইকে ব্যবহার করে তথ্যের অপব্যবহার মোকাবিলা করা এবং ডেটা ক্রস-চেক করা জরুরি।’
সাঈমুম রেজা তালুকদার ওয়েবিনারে রাজনীতিবিদদের দ্বারা কীভাবে কিওয়ার্ড ফিল্টারিং এবং বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে কনটেন্ট শ্যাডো-ব্যানিং হয়, সে বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘এআই বিধিমালা মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে তৈরি করা উচিত। এতে স্থানীয় মূল্যবোধ এবং নীতি অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’ তিনি বাংলাদেশকে বৈশ্বিক এআই রেডিনেস ইনডেক্সে অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
মিরাজ আহমেদ চৌধুরী কপিরাইট সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘এআই-এর ক্ষেত্রে কপিরাইট সমস্যাগুলো টুল-ভিত্তিক হবে, বিশেষ করে ডেরিভেটিভ বা নকল কনটেন্ট নিয়ে।’
নিজেরা করি’র পরামর্শক শারাবন তোহুরা ইউটিউবে মিথ্যা তথ্যের প্রচারের ব্যাপারে আলোকপাত করে বলেন, ‘এ ধরনের তথ্য বয়োবৃদ্ধ মানুষদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছড়ায়, রুখতে না পারলে এটি মহামারী আকার ধারণ করতে পারে। এজন্য ডিজিটাল সাক্ষরতার প্রচার জরুরি।’
ভয়েস-এর নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদ বলেন, ‘এআই পলিসি তৈরি করতে সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী এবং সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধিদের সঙ্গে পরামর্শ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে এটি জনগণের জন্য উপযোগী হয়।’
বক্তারা বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের ক্ষেত্রে শিক্ষা এবং সচেতনতা তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ এই প্রযুক্তির সঙ্গে মিথ্যা তথ্য, ডিপফেক, পক্ষপাতিত্ব, নজরদারি জড়িত এবং সাংবাদিকদের চাকরি হারানোর ঝুঁকি বাড়ছে।