নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনকে ঘিরে বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ১১০ জন বিশিষ্ট নাগরিক। তারা বলেছেন, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর কমিশন ও এর প্রতিবেদন পুরোপুরি বাতিল করার জোরালো দাবি পেশ করছে কোনও কোনও সংগঠন এবং ব্যক্তি যা সকল নারীর প্রতি অপমানসূচক, বিদ্বেষমূলক এবং ব্যক্তিগত আক্রমণ।
সোমবার (১২ মে) গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে এসব বলা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই দাবির শুরুটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হলেও দ্রুত কয়েকটি রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও গোষ্ঠী সভা-সমাবেশ করে আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ে এ বিষয়ে প্রতিবাদ করছে। সব নারীর প্রতি অপমানসূচক, বিদ্বেষমূলক, অকথ্য ভাষায় গালাগাল করার পাশাপাশি ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি নারীদের ওপর সহিংসতার উসকানিও দেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের বিবেচনাবর্জিত দাবি এবং প্রতিবেদনকে কেন্দ্র করে কমিশনের সদস্য ও নারীর প্রতি অযাচিত আক্রমণের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কমিশনের প্রতিবেদনের নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে আদর্শিক অবস্থানসহ বিভিন্ন কারণে জনমনে ভিন্নমত থাকতে পারে। তবে সেসব বিষয়ে গঠনমূলক আলোচনা ও বিতর্কের নিশ্চিত সুযোগ এখানে রয়েছে। তা না করে বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন সম্পূর্ণ বাতিলের দাবি শুধু অযৌক্তিক নয়, এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যেকোনও বিষয়ে কোনও গোষ্ঠীর দ্বিমত থাকতেই পারে। সে ক্ষেত্রে বিদ্বেষপূর্ণ, সহিংসতাপূর্ণ বা হুমকিস্বরূপ না হয়ে শ্রদ্ধার সঙ্গে, যৌক্তিক উপায়ে উপস্থাপন করা সম্ভব। কিন্তু তা না করে অগণতান্ত্রিক উপায়ে ভয়ভীতি সৃষ্টির অপকৌশল গ্রহণ তীব্রভাবে নিন্দনীয়।
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ‘পশ্চিমা বিশ্ব’ থেকে আমদানি করা বলে এমন অভিযোগের বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, এই অভিযোগ ‘আমাদের আদর্শিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতার’ সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন। প্রতিবেদনে পরিষ্কার উল্লেখ আছে, বিদ্যমান আইন, নীতি, তাত্ত্বিক ও মাঠ গবেষণার ফলাফল ও উপাত্ত পর্যালোচনা ছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ের অংশীজনসহ সাধারণ মানুষের মতামতও নেওয়া হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে এসব সভা আয়োজনে অংশ নিয়েছেন প্রশাসন ও মহিলাবিষয়ক অধিদফতরের কর্মকর্তারা।
বিবৃতিতে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের দেওয়া সুপারিশগুলোর ওপর বিস্তারিত ও গঠনমূলক আলোচনা করে একটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে সরকারকে সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানানো হয়। কমিশনের প্রস্তাব ও এর সদস্যদের প্রতি অপমানজনক ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিন্দা জানানোর পাশাপাশি যারা বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করছে, তাদের বিরুদ্ধেও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।