চার দফা দাবি নিয়ে সকাল থেকেই জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন চাকরিচ্যুত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। পরে দুপুরে আন্দোলনরতদের সঙ্গে আলোচনা করতে আসেন সেনাবাহিনীর একটি প্রতিনিধি দল। বিকালে আলোচনা শেষে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলেও আন্দোলনকারীরা তা প্রত্যাখ্যান করেন। শুরু হয় উত্তেজনা। এ সময় আন্দোলনকারীরা সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি দলের গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন এবং জানিয়ে দেন, তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা রাস্তা ছাড়বেন না।
পরবর্তীতে সন্ধ্যা ৬টায় আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুরু হয় দ্বিতীয় দফা বৈঠক, যা শেষ হয় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। বৈঠক শেষে সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি দল কোনও আনুষ্ঠানিক বক্তব্য না দিয়েই সরাসরি গাড়িতে উঠে প্রেসক্লাব এলাকা ত্যাগ করেন। এ সময় আন্দোলনকারীরা জাতীয় প্রেসক্লাবের বাইরের গেটের সামনে অবস্থান নেন। পরে সেনাবাহিনী কঠোর অবস্থান নিয়ে তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। তবে এখানে কাউকে লাঠিচার্জ করা হয়নি।
সেনাবাহিনীর সদস্যরা পরে সেগুনবাগিচা সড়ক দিয়ে চলে যান। এ সময় আন্দোলনকারীরা তাদের পিছু নিলে সেনা সদস্যরা ধাওয়া দিয়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেন।
রবিবার (১৮ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘বাংলাদেশ সহযোদ্ধা প্ল্যাটফর্ম-বিসিপি’ এর আয়োজনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন চাকরিচ্যুত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। দিনব্যাপী চলে তাদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি দলের আলোচনা ও উত্তেজনা।
সন্ধ্যায় সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি দল চলে যাওয়ার পরে আন্দোলনকারীরা তাদের কর্মসূচি স্থগিত করেন। গ্রেফতারকৃত সাবেক সৈনিক নাইমুল ইসলামকে মুক্তি দেওয়ার আশ্বাস এবং বাকি তিন দফা দাবি মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি পেলে আন্দোলন স্থগিত করা হয়। তবে লিখিত আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত তারা ঢাকায় অবস্থান করবেন বলে জানান। একইসঙ্গে আগামীকাল সোমবারের (১৯ মে) মধ্যে নাইমুলের মুক্তি এবং দাবিগুলো মেনে নেওয়ার বিষয়ে লিখিত প্রমাণ না পেলে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।
সন্ধ্যায় দ্বিতীয় দফা বৈঠক শেষে চাকরিচ্যুত সেনা সদস্য মো. কামরুজ্জামান বলেন, আমরা বলেছি, আমাদের গ্রেফতার হওয়া বরখাস্ত সৈনিক মো. নাইমুল ইসলামকে মুক্তি দিতে হবে। সেনা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যেহেতু আজ অফিস সময় শেষ হয়ে গেছে এবং তাকে গ্রেফতার করে জেলখানায় পাঠানো হয়েছে, তাই আগামীকাল লেফটেন্যান্ট ইফতেখার স্যারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল তার মুক্তির বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। আজ মুক্তি দেওয়া সম্ভব নয়।
চাকরির পুনর্বহালের বিষয়ে তিনি বলেন, যাদের চাকরির মেয়াদ ১০ বছরের নিচে, তাদের চাকরি ফেরত দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে বলে জানানো হয়েছে। আর যাদের চাকরির মেয়াদ নেই, তাদের পেনশনের আওতায় আনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের প্রতি সদয়। তারা আমাদের দুটি বিকল্প দিয়েছেন। যারা ইতোমধ্যে রেকর্ডেড কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন, তাদের নতুন করে আবেদন করতে হবে না। আর যারা আবেদন করেননি কিংবা রেকর্ড সম্পন্ন হয়নি, তাদের আজ রাতের মধ্যে আবেদন করতে বলা হয়েছে। আমরা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আরিফ স্যারের বরাবর সেই আবেদনগুলো পাঠাবো। আমরা আশা করি, আজকের আলোচনা সেনা প্রধানের কাছে উপস্থাপন করা হবে।
তিনি আরও জানান, সেনাবাহিনী আমাদের লিখিত আশ্বাস দেবে এবং আমরা লিখিতভাবে জানাব যে, এই আন্দোলন কোনো রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে পরিণত হবে না। তবে দাবি আদায় না হলে আমরা আবারো আন্দোলনে ফিরব। কাল আমরা দেখব, নাইমুলকে মুক্তি দেওয়া হয় কিনা। আজ আমরা সবাই ঢাকায় অবস্থান করব। যদি মুক্তি ও দাবি নিয়ে কোনো লিখিত নিশ্চয়তা না পাই, তাহলে আবার কর্মসূচি ঘোষণা করব।
উল্লেখ্য, তাদের চার দফা দাবি হলো—
১. চাকরিচ্যুত হওয়ার সময় থেকে বর্তমান পর্যন্ত বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাসহ চাকরি পূনর্বহাল করতে হবে।
২. যাদের চাকরি পুনর্বহাল সম্ভব নয়, তাদের সরকারি সব সুবিধাসহ পূর্ণ পেনশনের আওতায় আনতে হবে।
৩. যে আইন কাঠামো ও একতরফা বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে শত শত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, সেই বিচারব্যবস্থা ও সংবিধানের ৪৫ নম্বর অনুচ্ছেদের সংস্কার করতে হবে।
৪. গ্রেফতার হওয়া বরখাস্ত সৈনিক ও মুখ্য সমন্বয়ক মো. নাইমুল ইসলামকে মুক্তি দিতে হবে।