আর এক সপ্তাহ পর পবিত্র ঈদুল আজহা। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের মাঝে পুরোদমে চলছে ঈদের প্রস্তুতি। সারা দেশে বসছে কোরবানির পশুর হাট। এদিকে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে জনমনে বেড়েছে উদ্বেগ। একদিনের ব্যবধানে রাজধানীতে হত্যাকাণ্ডসহ প্রকাশ্য দিন-দুপুরে একাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। ফলে ঈদ সামনে রেখে জননিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
রবিবার (২৫ মে) রাতে রাজধানীর বাড্ডার গুদারাঘাট এলাকায় গুলশান থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুল আহসান সাধনকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। একই দিন মগবাজারে প্রকাশ্য দিবালোকে চাপাতি দিয়ে আঘাত করে ছিনতাইকারীরা এক তরুণের ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এর একদিন পর গত ২৬ মে মিরপুরে দিন-দুপুরে প্রকাশ্যে ব্যবসায়ীকে গুলি করে ২২ লাখ টাকার ছিনতাই করে দুর্বৃত্তরা। প্রতিটি ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া বুধবার (২৮ মে) বিকালে রাজধানীর পল্লবীতে প্রেমের জেরে একটি বাসায় স্বামী-স্ত্রীকে হত্যার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
অপরাধ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কিছু কিছু ক্ষেত্রে সফলতা দেখা গেলেও সামগ্রিকভাবে এখনও স্থিতিশীল নয়, যে কারণে এসব ঘটনা ঘটছে।
পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, ঈদকে সামনে রেখে সারা দেশে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে পুলিশের সব ইউনিট। ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে কর্মরতদের একগুচ্ছ পরামর্শ ও নিরাপত্তা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আসন্ন ঈদুল আজহা নিরাপদে উদযাপনের লক্ষ্যে আন্তরিকভাবে কাজ করার জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর।
পুলিশের সদর দফতর জানিয়েছে, ঈদুল আজহা উপলক্ষে মেট্রোপলিটন পুলিশ, জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, রেলওয়ে পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌ-পুলিশসহ পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিটগুলো সম্মিলিতভাবে দায়িত্ব পালন করবে। কোরবানির পশু পরিবহন নির্বিঘ্ন করা, এক হাটের পশু জোর করে অন্য হাটে না নেওয়া, হাইওয়ের পাশে পশুরহাট না বসানো, জাল টাকা, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি প্রতিরোধ, মার্কেট ও শপিং মলের নিরাপত্তা প্রদানে সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিশেষ করে নৌপথে কোরবানির পশু পরিবহন ও হাটের নিরাপত্তা নির্বিঘ্ন করতে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে নৌ-পুলিশ। কোরবানির পশুর হাটকে কেন্দ্র করে নদীপথসহ হাট এলাকায় চাঁদাবাজির প্রবণতা লক্ষ করা গেলে বা এ ধরণের কোনও তথ্য থাকলে তাৎক্ষণিক জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে জানানোর জন্য হাট ইজারাদারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে নৌ-পুলিশ। পাশাপাশি চাঁদাবাজিসহ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে প্রস্তুত রয়েছে পুলিশের এই ইউনিট।
এছাড়া প্রতিবছরের মতো এবারও রাজধানীর ঈদুল আজহাকে ঘিরে নেওয়া হচ্ছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ঈদের ছুটিতে আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধের লক্ষ্যে রাজধানীতে মোবাইল প্যাট্রল, ফুট প্যাট্রল ও চেকপোস্ট বসিয়ে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হবে। গরুর হাট, শপিং মল এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থার কথা জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
ঈদকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও নগদ অর্থের লেনদেন বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। এমতাবস্থায় কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নগদ অর্থ স্থানান্তরের জন্য পুলিশের সহায়তা প্রয়োজন মনে করলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ‘মানি এস্কর্ট সেবা’ প্রদান করবে। এ ক্ষেত্রে মানি এস্কর্ট সেবা প্রত্যাশী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে যানবাহনের সংস্থান করতে হবে।
সেবা প্রত্যাশী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নিকটস্থ থানা অথবা পুলিশ কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করার জন্য পরামর্শ দিয়েছে ডিএমপি।
ডিএমপি আরও জানিয়েছে, ঈদকেন্দ্রিক বিভিন্ন পশুর হাট, বাস, রেল ও লঞ্চ টার্মিনালে থাকছে পুলিশের বিশেষ নজরদারি। সেখানে কেউ যাতে অজ্ঞান পার্টি-মলম পার্টি বা ছিনতাইয়ের শিকার না হয়, সে জন্য পোশাকের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও গোয়েন্দা নজরদারি থাকছে।
নিরাপত্তার বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) এনামুল হক সাগর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঈদুল আজহা উপলক্ষে সারা দেশের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সব বিষয় মাথায় রেখে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যদের সব জায়গায় কঠোর নজরদারি রাখতে বলা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ঈদকেন্দ্রিক বিভিন্ন পশুর হাট এবং বাস, রেল ও লঞ্চ টার্মিনালে থাকছে পুলিশের বিশেষ নজরদারি। সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে আমরা নজর রাখছি। যেকোনও ঘটনা ঘটার পরপরই আমরা অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনছি। সামনের দিনগুলোতে যাতে কোনও ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে, সেজন্য পুলিশি তৎপরতা রয়েছে।’
ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখার উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীর সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য ডিএমপির পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে। বিশেষ করে শহরের গরুর হাট, শপিং মহল— এসব এলাকা বিশেষ নজরদারির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। নগদ টাকা বহনে কোনও আশঙ্কা তৈরি হলে সঙ্গে সঙ্গে নিকটস্থ পুলিশ স্টেশনকে জানাতে বলেছি। এছাড়া ঈদে শহর থেকে গ্রামের বাড়িতে যাবেন অনেকে। এ সময়ে শহরের বাসাবাড়ি ফাঁকা পেয়ে চুরি-ডাকাতি যাতে বেড়ে না যায়, তার জন্য নগর পুলিশের সব ইউনিটকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও পোশাকে টহল পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। লঞ্চ ও বাস টার্মিনাল ও রেলওয়ে স্টেশনে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, কোরবানির ঈদে রাজধানীতে একটু নিরাপত্তা সংকট তৈরি হতে পারে। তবে এ বিষয়ে সজাগ রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঈদের সময় সবাইকে নিরাপত্তা নিয়ে সচেতন থাকারও পরামর্শ দেন তিনি। এ বছর ঢাকা মহানগরীর দুই দিকে ২০টি হাটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব হাটে যাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিকঠাক থাকে, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রতিটি হাটে পর্যাপ্ত আনসার সদস্য থাকবে।
