পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে টানা ১০ দিন ছুটির পর আজ রবিবার (১৫ জুন) খুলেছে সরকারি অফিস। গত ৫ জুন শুরু হয়েছিল এই ছুটি। দীর্ঘ ছুটির এ সময়ে রাজধানীসহ সারা দেশে বড় ধরনের কোনও অঘটন ঘটেনি। দুয়েকটি ছোটখাটো ঘটনা ছাড়া এবার সময়টা কেটেছে স্বস্তিতে।
অবশ্য ঈদ ঘিরে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা আগেই জানিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো। তাছাড়া এই ছুটিতে রাজধানীসহ সারা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে শতভাগ আস্থার কথা জানিয়েছিলেন স্বয়ং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম।
ঈদের ছুটির সময়ে রাজধানী ফাঁকা হয়ে যায়। এসময় বেড়ে যায় চুরি-ডাকাতি ও ছিনতাই। অলি-গলিতে উৎ পেতে থাকে অপরাধীরা। আর লম্বা ছুটিতে ঘরমুখী মানুষ নানা প্রতারণা ও অপরাধের শিকার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর সেসব বিষয় সামনে এনেই সাজানো হয়েছিল নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এবার ঈদের দীর্ঘ ছুটি নিয়ে আগে থেকে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা ছিল মানুষদের মধ্যে। তবে যানজট ও ছোটখাটো কিছু ঘটনা ছাড়া কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের কারণে এবার কোথাও কোনও বড় ধরণের বিশৃঙ্খলা তৈরি কিংবা অপরাধ সংঘটিত হয়েছে এমন খবর পাওয়া যায়নি। ফলে ছুটি শেষে ঈদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে অনেকে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
সুমন রহমান (৪০)। রাজধানীতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। পরিবার সদস্যদের নিয়ে থাকেন মোহাম্মদপুর এলাকায়। কর্মব্যস্ততার কারণে দুই ঈদের ছুটি ছাড়া গ্রামের বাড়ি যাওয়ার সুযোগ হয় না তাদের। ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরে এসে তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে ঢাকা ফাঁকা হয়ে যায়, এসময় বাসায় চুরি হয়। ডাকাতির ভয় তো ছিলই। এছাড়া গত ঈদে এবং এবার কোরবানি ঈদেও তেমন কোনও ঝামেলার মুখোমুখি হইনি। আমাদের মতো যারা দূরে জার্নি করে যাত্রাপথে কোনও হয়রানির শিকার না হলেই ভালো।
মিরপুর পল্লবীর বাসিন্দা মো. জাকারিয়া বলেন, ঈদের সময় ঢাকার রাস্তাগুলো জনশূন্য থাকে। এসময় বাসায় বের হয়ে ভয়ে ভয়ে চলতে হয় কখন যে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ি। এবার নিরাপত্তা ব্যবস্থার ভালো হওয়ার কারণে সেই ভয়টা আর কাজ করছে না। এছাড়া আমাদের সচেতনতার বিষয়টিও আছে।
এদিকে বাস টার্মিনাল, রেলওয়ে স্টেশন ও লঞ্চ টার্মিনালে ছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এসব স্থানে অনিয়ম পেলেই শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়েছে অনেককে। এসময় দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাত্রীদের কাছ থেকে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিরুদ্ধে সার্বক্ষণিক অভিযান চালিয়েছে সেনাবাহিনী। কোথাও কোথাও যাত্রীদের বাড়তি টাকা ফেরত দিতেও দেখা গেছে।
পুলিশ সদর দফতর বলছে, গত ঈদুল ফিতর পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখেই উদযাপিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও ঈদুল আজহা উপলক্ষে সার্বিক দিক বিবেচনা করে সারা দেশে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। যার ইতিবাচক ফলাফল দেখা যাচ্ছে। আগামীতেও যেকোনও ইভেন্টে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন স্বাভাবিক থাকে— সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখার ইচ্ছার কথা জানান তারা।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, জনগণকে নিরাপত্তা দিতে তাদের প্রস্তুতির কোনও কমতি ছিল না। সারাদেশে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করেছেন। তারা ছুটিতে যাননি সবার নিরাপত্তা দিতে। শুধু রাজধানীর নিরাপত্তায় ৫০০ পেট্রল টিম কাজ করেছে। তারা অলিগলিতেও কাজ করছে। অনেক সময় ছোটখাটো কিছু ঘটনা ঘটে যায়, সেটিও যেন না ঘটে এসব বিষয়ে বাড়তি সতর্ক ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) এনামুল হক সাগর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সব ইভেন্টেই পুলিশের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে। গত রোজার ঈদে দেশবাসী দেখেছে নিরাপত্তা ব্যবস্থার কোনও কমতি ছিল না। যারা ফলাফল আমরা পেয়েছি। এবারও ঈদুল আজহায় নিরাপত্তা বিষয়ে আগে থেকেই প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যাত্রাপথে যেন কোনও ধরণের ঝামেলা তৈরি না হয়। মেট্রোপলিটন পুলিশ, জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, রেলওয়ে পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌ পুলিশসহ পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিটগুলো সম্মিলিতভাবে কাজ করেছে। প্রতিটি ইউনিট অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছে— যার কারণে এবারও আমরা এর সুফল পেয়েছি। আগামীতে আমরা এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চাই।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখার কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ঈদের ছুটিতে রাজধানীতে ছোটখাটো ঘটনা ছাড়া তেমন কোনও অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। খালি বাসায় চুরি হয়েছে, এমন ঘটনাও কম।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের বিগত ১১ মাসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। তিনি বলেন, দু-একটি ছোটখাটো ঘটনা ছাড়া এবারের ঈদ শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন করেছেন দেশবাসী।