আগামীকাল মঙ্গলবার (১৭ জুন) আবারও সচিবালয়ের বাদাম তলায় জমায়েত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম। এদিন যারা আন্দোলনে আসবে না তাদের আসতে বাধ্য করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
সোমবার (১৬ জুন) ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে ঈদের ছুটির পর ফের আন্দোলনে নামেন সচিবালয়ের কর্মচারীরা। তারা সচিবালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ ছাড়াও একজন উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দিয়েছেন।
পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, এদিন বেলা ১১টার কিছু সময় পর সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের সামনে বাদামতলায় কর্মচারীরা সমবেত হয়ে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। এরপর তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নতুন ভবনের নিচে এসে সমাবেশ করেন। তারা দুপুর পৌনে ১টার দিকে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের কাছে অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে স্মারকলিপি দেন। এ সময় কো-চেয়ারম্যান মো. বাদিউল কবির ও কো-মহাসচিব নজরুল ইসলামসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আগামীকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় সচিবালযের প্রতিটি মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা আলাদা মিছিল নিয়ে কর্মচারীদের বাদামতলায় সমবেত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ঐক্য ফোরাম নেতা নুরুল ইসলাম।
তিনি বলেছেন, আমাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যদি কেউ না আসেন তাহলে আমরা ধরে নেবো তারা ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর। এরপর যদি আমরা আলোচনার আমন্ত্রণ না পাই, তাহলে আমাদের দাবির সঙ্গে নতুন নতুন দাবি যুক্ত হবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
নুরুল ইসলাম বলেন, এই অধ্যাদেশ বাতিল করলে আমরা নীরবে ঘরে ফিরে যাবো। যদি আমাদের আগুনে জ্বালিয়ে আপনারা খেলা করতে চান, তাহলে আমরা এমন খেলা খেলবো আপনারা ঘরে ঢুকতে পারবেন না। আপনারা আমাদের সে কাজ করতে বাধ্য করবেন না।
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে এই কর্মচারী নেতা বলেন, আমরা এখনও আপনাদের রুমে ঢুকতে না দেওয়ার বা সচিবালয়ের গেট বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেইনি।
উল্লেখ্য, উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের পর সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের খসড়া বাতিলের দাবিতে গত ২৪ মে আন্দোলনে নামেন সচিবালয়ের কর্মচারীরা। কর্মচারীদের আন্দোলনের মধ্যেই ২৫ মে রাতে এই অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। অধ্যাদেশ অনুযায়ী, চার ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধের জন্য বিভাগীয় মামলা ছাড়াই শুধুমাত্র কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে যেকোনও সরকারি কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা যাবে।
অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে সর্বশেষ ঈদের ছুটির আগে তিন জুন পর্যন্ত সচিবালয়ে বিক্ষোভ করেন কর্মচারীরা। চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে সরকারের সাত জন উপদেষ্টাকে স্মারকলিপিও দিয়েছেন তারা। ১৫ জুনের মধ্যে চাকরি অধ্যাদেশ বাতিল না করলে ১৬ জুন থেকে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার হুমকিও দিয়েছিলেন কর্মচারী নেতারা।
এর মধ্যে গত ৪ জুন ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ পর্যালোচনা করে সুপারিশ দিতে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কমিটি সোমবার বিকালে প্রথম বৈঠকে বসেছে। কমিটির সুপারিশ দেওয়া পর্যন্ত কর্মচারীদের আন্দোলন কর্মসূচি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মচারীরা ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, সচিবালয় জেগেছে’, ‘মানি না মানবো না, ফ্যাসিবাদী কালো আইন’, ‘মানি না মানবো না, অবৈধ কালো আইন’, ‘ফ্যাসিবাদের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’ স্লোগান দেন।
জানা গেছে, আজ সোমবার সচিবালয়ের অভ্যন্তরে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম বলেন, সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ বাতিলের দাবিতে আমরা মাঠে ময়দানে ঘুরছি। অনেক ক্যাডার সার্ভিস থেকে অনেকেই আন্দোলনে নেমে গেছে। আমরা একটা জিনিস বুঝে গেছি, সরকার আমাদের সঙ্গে সাপলুডু খেলা খেলছে। আমরা চাইলাম মহার্ঘভাতা, পদ-পদবি পরিবর্তন, সচিবালয় ভাতা, আর সেটা ঠেকানোর জন্য সরকার করলো অভিন্ন নিয়োগবিধি। তারপর এটা নিয়ে সচিবালয়ে বিশাল হুলুস্থুল শুরু হলে সেটা আমরা থামিয়ে দিলাম।
তিনি বলেন, যদি আমাদের কথায় কান না দেন তাহলে আমরা বিভাগীয় পর্যায়ে সম্মেলন ডাকতে বাধ্য হবো। প্রজ্ঞাপনে বলা আছে, অধ্যাদেশ জারির আগে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। এ পর্যন্ত আমরা কেউ কোনও আলোচনার প্রস্তাব পাইনি। তাহলে প্রজ্ঞাপন জারির মধ্যেও লুকোচুরি আছে। আজ আমরা রোদে পুড়ে আন্দোলন করছি, আপনারা এসিতে বসে আছেন। আমার এক বন্ধু বলেছে, উপদেষ্টার দফতর, সচিবের দফতর, প্রশাসনের শাখায় খবর নেবেন তারা আমাদের মিটিংয়ে আসে কিনা। যদি না আসে আমরা ধরে নেবে তারা ফ্যাসিস্ট সরকারের আইন প্রণেতাদের সহযোগী।
নুরুল ইসলাম আরও বলেন, আমরা এগুলো দেখতে, শুনতে ও বুঝতে চাই না। আমরা শুধু দেখতে চাই এই অধ্যাদেশ বাতিল হয়েছে। আমরা সংশোধন, পরিবর্তন, পরিবর্ধন বুঝি না। আমরা শুধু বুঝি এই অধ্যাদেশ বাতিল করতে হবে। আমাদের পিছু হটার কোনও সুযোগ নেই।