যুক্তরাজ্যে গ্রুপ-ভিত্তিক শিশু যৌন নির্যাতন, যা প্রায়শই বিতর্কিতভাবে ’গ্রুমিং গ্যাং’ নামে পরিচিত, সম্পর্কিত একটি সাম্প্রতিক স্বাধীন পর্যালোচনা অপরাধীদের জাতিগত পরিচয় সংক্রান্ত ডেটা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের দিকে নতুন করে মনোযোগ এনেছে। ব্যারনস লুইস কেসির নেতৃত্বে এই রিপোর্টে জাতিগত ও জাতীয়তা ডেটা ধারাবাহিকভাবে রেকর্ড করার ক্ষেত্রে একটি ‘বড় ব্যর্থতা’ তুলে ধরা হয়েছে। এই ত্রুটি ঐতিহাসিকভাবে কর্তৃপক্ষকে বর্ণবাদী তকমা লাগানোর ভয়ে সংবেদনশীল আলোচনা ’এড়িয়ে যেতে’ উৎসাহিত করেছে, যা কার্যকর হস্তক্ষেপকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
সম্প্রতি প্রকাশিত ব্যারনস কেসি পর্যালোচনা রিপোর্টে স্বীকার করা হয়েছে যে, যদিও সব জাতিগত পটভূমির ব্যক্তিরা শিশু যৌন নির্যাতন করে থাকে, তবে নির্দিষ্ট উচ্চ-প্রোফাইল মামলার স্থানীয় ডেটা, বিশেষ করে রথারহ্যাম, গ্রেটার ম্যানচেস্টার এবং ওয়েস্ট ইয়র্কশায়ারের মতো এলাকায়, গ্রুপভিত্তিক নির্যাতনে সন্দেহভাজনদের মধ্যে ’এশীয় জাতিগত পটভূমির পুরুষদের একটি অসামঞ্জস্যপূর্ণ সংখ্যা’ প্রকাশ করেছে। যদিও রিপোর্টে প্রায়শই বৃহত্তর শব্দ ’এশীয় জাতিগত পটভূমি’ ব্যবহার করা হয়েছে, তবে বিস্তারিত অনুসন্ধান এবং এসব মামলার আশেপাশে জনমত পাকিস্তানি এবং কিছু পরিমাণে ভারতীয় ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পুরুষদের এই নির্দিষ্ট গ্রুপভিত্তিক নির্যাতন নেটওয়ার্কের প্রেক্ষাপটে অতিরিক্ত প্রতিনিধিত্ব করার দিকে ইঙ্গিত করেছে।
ব্যারনস কেসি জোর দিয়েছেন যে, সমস্ত শিশু যৌন নির্যাতনের মামলার প্রায় মাত্র ৩৭ শতাংশ সন্দেহভাজনের জাতিগত পরিচয় রেকর্ড করা হয়, যা সামগ্রিক জাতীয় চিত্রকে উল্লেখযোগ্য ডেটা ফাঁক দ্বারা অস্পষ্ট করে রাখে। শক্তিশালী জাতীয় ডেটার এই অভাব পুরো যুক্তরাজ্যজুড়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছানোকে চ্যালেঞ্জিং করে তোলে। তবে, রিপোর্টে জোর দিয়ে বলা হয়েছে যে, নির্দিষ্ট, সু-নথিবদ্ধ মামলাগুলোর বিদ্যমান প্রমাণ একটি সরাসরি এবং স্বচ্ছ পরীক্ষার দাবি রাখে এবং যুক্তি দেওয়া হয়েছে যে ত্রুটিপূর্ণ ডেটা কিছু অপরাধীর জাতিগত পটভূমি নিয়ে উদ্বেগ খারিজ করতে ব্যবহৃত হয়েছে।
পর্যালোচনাটি একটি ’প্রাতিষ্ঠানিক দৃষ্টিভঙ্গির’ সমালোচনা করেছে, যা সামগ্রিক শিশু যৌন নির্যাতনের পরিসংখ্যানগুলোতে শ্বেতাঙ্গ অপরাধীদের ব্যাপকতাকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিয়েছে, যা গ্রুপভিত্তিক নির্যাতনে পরিলক্ষিত প্যাটার্নগুলো থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিতে পারে। রিপোর্টে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে, এই অসম্পূর্ণ ডেটা ভুল ব্যাখ্যার জন্ম দিয়েছে এবং কিছু ক্ষেত্রে সামাজিক বিভেদ সৃষ্টিতে অবদান রেখেছে।
উল্লেখ করা জরুরি, যুক্তরাজ্যের সব শিশু যৌন নির্যাতন সংক্রান্ত জাতীয় পরিসংখ্যান নির্দেশ করে যে, বেশিরভাগ অপরাধী শ্বেতাঙ্গ, যা যুক্তরাজ্যের জনসংখ্যার বিন্যাসকে ব্যাপকভাবে প্রতিফলিত করে। উদাহরণস্বরূপ, সেন্টার অব এক্সপার্টিজ অন চাইল্ড সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ-এর একটি ২০২৫ সালের রিপোর্ট, যা বিচার মন্ত্রকের পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে তৈরি, যেখানে ৬৯ শতাংশ মামলায় জাতিগত পরিচয় রেকর্ড করা হয়েছিল, তাতে দেখা গেছে যে ৯০ শতাংশ অপরাধী শ্বেতাঙ্গ, ৫ শতাংশ এশীয়, ২ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ, ২ শতাংশ মিশ্র এবং ১ শতাংশ ’অন্যান্য’ ছিল। তবে, ব্যারনস কেসি রিপোর্ট বিশেষভাবে গ্রুপভিত্তিক শিশু যৌন নির্যাতনের স্বতন্ত্র প্রকৃতির ওপর আলোকপাত করে, যেখানে কিছু অপরাধীর জাতিগত পটভূমি একটি বিশিষ্ট এবং সংবেদনশীল আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।
রিপোর্টটি গ্রুমিং গ্যাং সম্পর্কিত একটি বিধিবদ্ধ তদন্তের জন্য দৃঢ়ভাবে সুপারিশ করেছে এবং এই ধরনের সব মামলার সন্দেহভাজনদের জন্য জাতিগত ও জাতীয়তা ডেটা বাধ্যতামূলকভাবে সংগ্রহের পক্ষে সমর্থন করেছে। স্বরাষ্ট্র সচিব ইভেট কুপার এই ’গভীরভাবে উদ্বেগজনক’ ফলাফল স্বীকার করেছেন এবং কোনও প্রতিষ্ঠান যাতে জবাবদিহি থেকে ’লুকিয়ে’ থাকতে না পারে তা নিশ্চিত করতে এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে সরকারের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন।
এই রিপোর্টটি চলমান জনমত এবং গণমাধ্যম বিতর্কের মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে সব সম্প্রদায়ের মধ্যে শিশু নির্যাতনের জটিলতাগুলোকে কোনও কুসংস্কার প্রচার না করে বা জাতিগত উত্তেজনা বৃদ্ধি না করে মোকাবিলা করার জন্য একটি সূক্ষ্ম পদ্ধতির আহ্বান জানানো হয়েছে। সামগ্রিক লক্ষ্য হলো দুর্বল শিশুদের সুরক্ষা জোরদার করা এবং তাদের পটভূমি নির্বিশেষে সব অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনা।
