জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘অঞ্জলি লহ মোর’ ম্যুরাল ভাঙচুরের প্রতিবাদে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ১২০ জন সংস্কৃতিকর্মী, কবি, লেখক, সাংবাদিক ও প্রগতিশীল নাগরিক।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) কবি ও সাংবাদিক গিরীশ গৈরিক এবং কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক শামস সাইদের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত ম্যুরাল ‘অঞ্জলি লহ মোর’ প্রশাসনিক নির্দেশে ভেঙে ফেলা হয়েছে জানতে পেরে, আমরা- দেশের বিভিন্ন অঙ্গনের সংস্কৃতিকর্মী, কবি, লেখক, সাংবাদিক ও প্রগতিশীল নাগরিকরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ। শিল্পকর্মটি শিল্পী মণীন্দ্র পালের নির্মিত এবং তা প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী মুনমুন আহমেদের নাচের মুদ্রা থেকে অনুপ্রাণিত। এটি সাধারণ কোনও শিল্পকর্ম নয়, আমাদের ললিতকলার ধারক এবং সৃষ্টি ও স্রষ্টার মধ্যকার চিরায়ত মানবিক সেতুবন্ধের প্রতীক। একইসঙ্গে নারীর মানবিক সাধ্য ও শক্তির প্রকাশ। এ ধরনের একটি শিল্পবস্তুর ধ্বংস-সাধন আমাদের সংস্কৃতি ও মানবিক চেতনায় আঘাত হানার শামিল।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, ঐতিহাসিক এবং শিল্প-সংস্কৃতির প্রতীক ও স্থাপনা ধ্বংসের অপধারা চলমান। আমরা বিশ্বাস করি, এগুলো মূলত অপরাজনীতি ও ক্রমশ ঘনীভূত হতে থাকা ধর্মের নামে উগ্রবাদী আচরণের ফল। নিকট সময়ে আমরা মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের স্মারকগুলো, স্বকীয় ধারার মরমীবাদ চর্চার প্রতীক মাজার-দরগা, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও বিভিন্ন কালপর্বে সংঘটিত ঐতিহাসিক বিদ্রোহ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভাস্কর্য, ম্যুরাল, নান্দনিক শিল্পকর্ম এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত প্রত্নসম্পদ কাছারি বাড়িতে হামলাসহ আরও অসংখ্য ধ্বংসযজ্ঞ লক্ষ্য করেছি। আমরা মনে করি, এসব অপযজ্ঞ আমাদের ঐহিত্য ও অস্তিত্বের পরিপন্থিই শুধু নয়, একইসঙ্গে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও বিশ্ববাসীর সামনে আমাদের জাতিগত লজ্জার অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে। আমরা এ-ও মনে করি যে, প্রাগ্রসর দেশ গড়ার পথে এবং সভ্য, সহনশীল, সংস্কৃতমনা জাতি হিসেবে বিশ্বের কাছে সুপরিচিত হওয়ার পথে এটি বড় ধরনের অন্তরায়। সম্মিলিতভাবে আমরা এ ধরনের সব অপচর্চার নিন্দা জ্ঞাপন করছি।