ঢাকা শহরে রাস্তার পাশ দিয়ে ফুটপাত থাকলেও বেশির ভাগই চলাচলের অনুপযোগী। হয় হকাররা পসরা সাজিয়ে বসেন, না হয় ফুটপাতের ওপর দোকান থাকে। রেস্তোরাঁর চুলার একটি অংশ এসে ফুটপাত দখল করে বসেছে—এমন দৃশ্যও বিরল নয়। ফুটপাতের এই চেহারা যেন গা-সওয়া হয়ে গেছে রাজধানীবাসীর। বলতে গেলে এটা এক অঘোষিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। কেউ নিকটতম স্থানে হেঁটে চলে যেতে চাইলেও ফুটপাতের এই ভিড় দিয়ে সেই সাহস করেন না।
রাজধানীর শুক্রাবাদ ফ্লাইওভারের সিঁড়ি যেখানে নামবে, সেখান থেকে রাসেল স্কয়ারের মোড় পর্যন্ত ফুটপাত ধরে পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব। গরম তেলে ভাজা হচ্ছে নানা খাদ্য, আছে চা-সিগারেটের দোকান, কিছুদূর যেতেই ফ্লেক্সিলোডের টুলসহ আরও কত কিছু! বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের পাশ ঘেঁষে গুলিস্তান মোড় হয়ে বায়তুল মোকাররম—কী নেই এখানকার ফুটপাতে? কাপড়, ফল, চশমা, সানগ্লাস, ঘড়ি, তালা-চাবি—সবকিছুই মেলে এখানে। কেবল হাঁটার জায়গাটুকু নেই।
এই পরিস্থিতিতে কয়েক দফা হকার সরানোর চেষ্টা করা হলেও নানা বাধা-বিপত্তিতে সম্ভব হয়নি। অবশেষে রবিবার আরেকটি উদ্যোগ নিয়ে কোন ফুটপাতে হকার বসতে পারবে আর কোথায় পারবে না, তা নির্ধারণ করার কাজ শুরু করা হয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মুনিরুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পদ্মা সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরুর পর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে দিয়ে যান চলাচলের পরিমাণ বেড়েছে। তাই মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে যান চলাচল ও সংশ্লিষ্ট এলাকায় জনসাধারণের চলাফেরা নির্বিঘ্ন করতে গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট থেকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ হয়ে সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্স এবং বঙ্গভবন ও মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারগামী ও ফ্লাইওভার থেকে গুলিস্তান চত্বর এলাকাক ‘রেড জোন’ ঘোষণা করা হয়েছে। এই রেড জোন থেকে সব হকার এবং ফুটপাত দখল করে অবৈধভাবে গড়ে তোলা স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আখতার মাহমুদ মনে করেন, শহরকে বাঁচাতে হলে ভাবতে হবে। সবার আগে হকারদের নিবন্ধনের ব্যবস্থা করতে হবে মনে করে তিনি বলেন, কোন এলাকায় কে বসছে, তার একটা ধারণা নিতে হবে। এরপর কোন এলাকায় কতজন বসানোর সুযোগ আছে, সেই পরিকল্পনা করতে হবে। এখানে সংখ্যাটা গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে পাঁচজন বসার জায়গা, সেখানে ১৫ জন বসলে বিশৃঙ্খলা ঠেকাবেন কী করে?
তিনি আরও বলেন, হকার ওঠানোর কথা এলে নানা সমালোচনা হয়, সেটি তখন হবে না। কেননা, এটা একটা উইন-উইন পরিস্থিতি তৈরি করে।
সমাধান তাহলে কীভাবে, প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, প্রত্যেক হকার লাইনম্যানকে টাকা দেয় দিন বা সপ্তাহ ভিত্তিতে। সে যখন টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন নম্বর নিচ্ছে, তখন তাকে আর এই বাড়তি টাকা দিতে হবে না। আর সিটি করপোরেশনও দখলমুক্ত ফুটপাত পেয়ে যাচ্ছে।
উন্নত দেশে সুনির্দিষ্ট জায়গা ও সময় থাকে হকারদের বসার জন্য। পুরো শহরজুড়ে যদি হকাররা ফুটপাতে বসে, তাহলে পরিচ্ছন্ন শহর পরিকল্পনা সম্ভব নয় বলে মনে করেন এ নগর পরিকল্পনাবিদ।