বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের ৫৯তম জন্মদিন উপলক্ষে জাতীয় শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা-২০২২ আয়োজন করেছে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন গৌরব ’৭১।
শুক্রবার (২১ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে সকাল ১০টায় এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়, যা চলে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। চিত্রাঙ্কনের বিষয় ছিল ‘ভোরের পাখি শেখ রাসেল’। প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার পর শুরু হয় আলোচনা অনুষ্ঠান।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, কিশোরগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. জেড এম পারভেজ সাজ্জাদ, আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম।
মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘শেখ রাসেল জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র, এটা যেমন সত্য; তিনি পুরো পৃথিবীর মধ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং নিষ্ঠুর পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের নির্মম শিকারের প্রতীক হিসেবেও পরিচিত।’
অভিভাবকদের উদ্দেশ করে হানিফ বলেন, ‘জাতির পিতার নেতৃত্বে স্বাধীনতাযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির মধ্য দিয়ে এই বাংলাদেশ অর্জিত হয়েছে। এটা সবার জানা উচিত। কারণ, তরুণ প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস না জানলে বিপথগামী হতে পারে।’
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী শিশুদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমরা আজ কী বিষয়ে ছবি এঁকেছ?’ তখন বাচ্চারা বলে, ‘ভোরের পাখি শেখ রাসেল’। তিনি বলেন, ‘এই ছবি কেন এলো? এর পেছনে ইতিহাস রয়েছে।’ তিনি বাচ্চাদের আবার জিজ্ঞেস করেন, ‘শেখ রাসেলের পিতার নাম কী?’ তখন শিশুরা বলে, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’। তারপর তিনি শেখ রাসেলের বড় বোনের নাম জিজ্ঞেস করলে শিশুরা বলে, ‘শেখ হাসিনা’। শিশুদের কাছে জান, ‘শেখ হাসিনা কে?’ সঙ্গে সঙ্গে তারা বলে, ‘প্রধানমন্ত্রী’। এরপর তিনি শেখ হাসিনা জীবনে কী কী হারিয়েছেন, সেসব বিষয়ে শিশুদের জানান।
ড. জেড এম পারভেজ সাজ্জাদ বলেন, ‘আমার প্রশ্ন, শিশু রাসেলের কী দোষ ছিল? তার একমাত্র অপরাধ সে বঙ্গবন্ধুর সন্তান, জাতির জনকের সন্তান। স্বাধীনতাবিরোধীরা এ দেশের স্বাধীনতা মেনে নিতে না পেরে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নির্মম এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। আজও স্বাধীনতাবিরোধীদের ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। কাজেই এ বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’
আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘শিশু রাসেলের মতো যারা গর্জে উঠতে পারে, তাদেরও নিঃশেষ করে দিয়েছে স্বাধীনতাবিরোধীরা। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে এই ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে।’
অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম বলেন, ‘জাতির পিতার সঙ্গে ছোট্ট রাসেলকে ঘাতকরা নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। এই হত্যার বিচার পেতে আমাদের ২১ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে।’ রঙের তুলির মধ্য দিয়ে শিশুদের শেখ রাসেল জানানোর এই প্রয়াস অব্যাহত থাকবে, এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন কুষ্টিয়া-১ আসনের সংসদ সদস্য সারওয়ার জাহান বাদশাহ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিব, বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল হক সরকার।
আলোচনা সভা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। প্রতিযোগিতাটি তিন ভাগে অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৬০০ প্রতিযোগী অংশ নেয়। তাদের মধ্যে প্রত্যেক বিভাগ থেকে ১০ জন করে মোট ৩০ জনকে পুরস্কৃত করা হয়।
‘ক’ বিভাগে থেকে প্রথম হয় রায়েরবাজার উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরাধ্য বড়াল, দ্বিতীয় শপ্তক দাশ এবং তৃতীয় উদয়ন উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অভিনব সৌমিক দে।
‘খ’ বিভাগে থেকে প্রথম হয় ভিকারুন্নেসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের জারিফা তাসনীম, দ্বিতীয় আজিজ ফাউন্ডেশনের আনিশা সন্তনী ও তৃতীয় ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রকৃতি মনোলীনা রায়।
‘গ’ বিভাগ থেকে প্রথম হয় বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ স্কুল অ্যান্ড কলেজের তাজিয়া তাহসীন, দ্বিতীয় ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাহদিয়াত আদিবাহ এবং ওয়েস্ট ইংলিশ হাইস্কুলের আরফান হোসেন আমান।
পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট, মুক্তিযুদ্ধের বই ও সনদ প্রদান করা হয়। এ ছাড়া অংশগ্রহণকারী প্রত্যেককে মুক্তিযুদ্ধের বই ও সনদ প্রদান করা হয়।