X
শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩
১০ চৈত্র ১৪২৯

রাজধানীতে বিক্রি হচ্ছে জমজমের পানি

আতিক হাসান শুভ
২৭ জানুয়ারি ২০২৩, ১৭:০০আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০২৩, ১৮:৫২

মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম পানি হচ্ছে জমজম কূপের পানি। পবিত্র কাবাঘর থেকে ২১ মিটার দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত এই জমজম কূপ। হজ বা ওমরাহ পালন করতে গেলে এই পানি পান ও ওজু-গোসলের জন্য ব্যবহারের সুযোগ পান দূরবর্তী এলাকার মানুষ। ফেরার সময়ও তারা এই পানি নিয়ে আসেন পরিবার-পরিজনের জন্য। সৌদি আরবে ব্যবহারের সময় বা দেশে আনার সময় ৫ লিটারের সিল করা বোতলের জন্য ১০ রিয়াল করে দিতে হলেও ছোট বোতল এবং খোলা পানির জন্য কোনও টাকা দিতে হয় না। তবে জমজমের এই পানি বিক্রি হচ্ছে রাজধানীতে। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম মার্কেট এলাকায় এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন অন্তত আড়াইশ’ আতর-টুপি-গোলাপজল ব্যবসায়ী। লিটারপ্রতি অন্তত সাড়ে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন জমজমের পানি।

সরেজমিন দেখা যায়, বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের আশপাশে বেশ চওড়া দামে বিক্রি হচ্ছে জমজম কূপের এই পবিত্র পানি। তবে জমজমের পানি বিক্রির বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলতে নারাজ ব্যবসায়ীরা। কীভাবে এই জমজমের পানি সংগ্রহ করা হয়েছে? বছরব্যাপী কীভাবে জমজমের পানি বিক্রি করা হয়? কত দামে বিক্রি করা হচ্ছে? জমজমের পানির সঙ্গে সাধারণ পানি মেশানো হচ্ছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাব দিতে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

বায়তুল মোকাররমের নিচতলার দোকানদার মো. হারুন (৬৫) বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমি হাজিদের উন্নতমানের এহরামের কাপড়, টাওয়ালসহ জায়নামাজ, আতর, টুপি ইত্যাদি বিক্রি করি। এর পাশাপাশি জমজমের পানি বিক্রি করি। জমজমের পানির অনেক চাহিদা। কিন্তু আমরা সেই অনুযায়ী চাহিদা মেটাতে পারি না। আমরা হজ করতে যাওয়া মুসল্লিদের সঙ্গে কথা বলে তাদের পর্যাপ্ত সম্মানি দিয়ে জমজমের পানি সংগ্রহ করি।

মো. হারুন বলেন, আমরা ইনটেক বোতলে পাঁচ লিটার জমজমের পানি ৩৬০০ টাকা বিক্রি করি। তবে কত টাকা করে পানি কেনা হয়েছে তা বলতে অস্বীকৃতি জানান এই বিক্রেতা।

কেউ আবার পাঁচ লিটার বোতল খুচরা বিক্রি করেন না। কয়েকজন বিক্রেতা জানান, হাজিরা হজ শেষে নিয়ে আসেন এই জমজমের পানি। এই পানি আবার সবসময় পাওয়া যায় না। আমাদের আগে থেকেই অর্ডার দিয়ে রাখতে হয়। তখন আমরা সেই অনুযায়ী জমজমের পানি সংগ্রহ করি।

জমজমের পানি বিক্রি করা আরেক দোকানদার মোহাম্মদ উল্লাহ (৪০) বলেন, বায়তুল মোকাররম এলাকায় জমজমের পানি অন্তত দুই আড়াইশ’ দোকানদার বিক্রি করে। তবে কেউই রেগুলার বিক্রি করতে পারে না। অনেকে হাজিদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে জমজমের পানি সংগ্রহ করে। আবার অনেকে বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে পানি সংগ্রহ করে। আমরা তাদের সম্মানি দেই। পরবর্তীতে আমাদের খরচ আর দোকানের খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জমজমের পানি বিক্রি করি।

তিনি আরও বলেন, সৌদি আরব থেকে জমজমের পানি পাঁচ লিটারের বোতলে করে আনা হয়। কেউ এটা একসঙ্গে বিক্রি করেন, আবার কেউ খুচরা বিক্রি করেন। তবে খুচরা বিক্রি করলে মাঝে মধ্যে ঝামেলায় পড়তে হয়। দুই-একজন দোকানদারের কারণে অনেকে বিশ্বাস করতে চান না এটা যে জমজমের পানি। এখানে প্রায় সব দোকানেই ২৫০ মিলি জমজমের পানি তিনশ’ থেকে সাড়ে তিনশ’ টাকা খুচরা দরে বিক্রি করা হয়। পাইকারিতে পরিচিত মানুষের কাছে দুই আড়াইশ’ টাকার মধ্যে সেল দেওয়া হয়।

বায়তুল মোকাররমের পাশেই মোবারক আলী নামের এক ব্যবসায়ী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, অনেক দোকানদার একবার পাঁচ লিটার জমজমের পানি এনে সারা বছর খুচরা বিক্রি করে। তারা জমজমের পানির সঙ্গে সাধারণ পানি মিশিয়ে বিক্রি করে। সামনে জমজম পানির একটা বোতল রেখে দেয়, তারপর ওই বোতল দেখিয়ে ব্যবসা করে। এটা নিয়ে কয়েকবার ঝামেলাও হয়েছে। খুচরা কিনলে তো সাধারণ মানুষ আর বোঝে না কোনটা আসল জমজমের পানি আর কোনটা ভেজাল। তবে এমন বাজে কাজ খুব কম দোকানদার করে। যাদের ভেতর ইসলামের ন্যূনতম জ্ঞান আছে তারা কখনও এমন জঘন্য কাজ করতে পারে না।

জমজমের পানি কিনতে আসা মাওলানা ইসহাক বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ভূপৃষ্ঠের শ্রেষ্ঠ পানি জমজম। যেই উদ্দেশ্যে জমজমের পানি পান করা হবে তা পূরণ হবে। যদি রোগমুক্তির জন্য তা পান করা হয় তাহলে মহান আল্লাহ তাকে সুস্থ করে দেবেন। আমরা এটা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। তাছাড়া এর আগে অনেক উপকার হয়েছে। এর ফলাফলও পেয়েছি। জমজম থেকে পানি পানকারী ব্যক্তির জন্য সুন্নত হলো পুরোপুরিভাবে জমজমের পানি ইবাদত মনে করে পান করা উচিত। কিন্তু এর যে দাম সেই জন্য আসলে তৃপ্তি সহকারে খাওয়া যায় না। আমরা সাধারণত জমজমের এই পানি কঠিন রোগবালাই থেকে মুক্তি পেতে দোয়া পড়ে খেয়ে থাকি।’

হাদিসে জমজমের পানি পানের কিছু উল্লেখযোগ্য আদব-কায়দা রয়েছে। যেমন—কিবলামুখী হওয়া, বিসমিল্লাহ বলা, তিন শ্বাসে পান করা, পরিতৃপ্ত হওয়া এবং শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলা ইত্যাদি। জমজমের পানি পান করার সময় একটি বড় কাজ হলো দোয়া করা।

জমজমের পানি বেচাকেনার বিষয়ে রাজধানীর গুলিস্তান পীর ইয়ামেনী জামে মসজিদের খতিব ও মারকাজুশ শাইখ আরশাদ আল মাদানী মাদ্রাসা ঢাকার প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম (প্রিন্সিপাল) ইমরানুল বারী সিরাজী বলেন, জমজমের পানির বেচাকেনা জায়েজ ও বৈধ। ইসলামি শরিয়ার মূলনীতি হচ্ছে, যেকোনও বৈধ মালিকানাধীন বস্তুর বেচাকেনা জায়েজ ও বৈধ। যখন কোনও ব্যক্তি হাদিয়া স্বরূপ জমজমের পানি পান, তখন তিনি মালিক হয়ে গেছেন। মালিকানার জিনিসের বেচাকেনা ইসলামি শরিয়তে বৈধ আছে।

/এফএস/এমওএফ/
সর্বশেষ খবর
জাবিতে মারধরের ঘটনায় ৫ শিক্ষার্থী বহিষ্কার
জাবিতে মারধরের ঘটনায় ৫ শিক্ষার্থী বহিষ্কার
লন্ড‌নে ইফতা‌রের দোকা‌নে উপ‌চে পড়া ভিড় বাংলা‌দেশিদের
লন্ড‌নে ইফতা‌রের দোকা‌নে উপ‌চে পড়া ভিড় বাংলা‌দেশিদের
রোজা ফরজ হওয়ার ইতিহাস
রোজা ফরজ হওয়ার ইতিহাস
বালুভর্তি ট্রাকচাপায় ২ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
বালুভর্তি ট্রাকচাপায় ২ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
সর্বাধিক পঠিত
৭০ বছর বয়সে এসে বিয়ে করলেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক
৭০ বছর বয়সে এসে বিয়ে করলেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক
অস্ট্রেলিয়ান নায়িকার সঙ্গে হোটেলে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন শাকিব
আদালতে দেওয়া জবানবন্দিঅস্ট্রেলিয়ান নায়িকার সঙ্গে হোটেলে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন শাকিব
শনিবার খোলা থাকবে ব্যাংক
শনিবার খোলা থাকবে ব্যাংক
স্বামীকে হত্যার জন্য ৫০ হাজার টাকায় খুনি ভাড়া করেন স্ত্রী, কাজ শেষে দেন ৫০০
স্বামীকে হত্যার জন্য ৫০ হাজার টাকায় খুনি ভাড়া করেন স্ত্রী, কাজ শেষে দেন ৫০০
রোজার নিয়ত কী, কীভাবে করবেন?
রোজার নিয়ত কী, কীভাবে করবেন?