জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় তরুণদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, তরুণদের লোভ, ক্ষমতার মোহ, আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি থেকে দূরে থেকে দেশের জন্য কাজ করতে হবে।
শনিবার (৩১ মে) ঢাকার আগারগাঁওয়ে পরিবেশ অধিদফতরে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি ইয়ুথ ক্লাইমেট কোয়ালিশনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন
বায়ুদূষণ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, এ সমস্যা মোকাবিলায় সরকার তিনটি বড় উদ্যোগ নিয়েছে— পুরনো বাস অপসারণ, ইলেকট্রিক যানবাহন চালু এবং ঢাকার চারপাশে নতুন ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ।
উন্নয়ন নিয়ে তিনি বলেন, আমরা উন্নয়ন চাই, তবে প্রকৃতিকে ধ্বংস করে নয়। জলাশয় ভরাট, পাহাড় কাটা কিংবা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অবহেলা চলতে পারে না। প্রকৃতিকে সম্মান জানিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা করতে হবে।
পলিথিন বন্ধে নাগরিক ভূমিকার কথা উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, শুধু সরকারের নয়, সবার দায়িত্ব পরিবেশ রক্ষা করা। বাজারে গেলে পাট বা কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করুন। পরিবেশ রক্ষা গণতান্ত্রিক দায়িত্ব, একার নয়।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে তিনি উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে তিনটি মডেল প্রকল্প নেওয়ার প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, টেকসই, পচনশীল ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপায়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে হবে। সিঙ্গল-ইউজ প্লাস্টিক দ্রুত নিষিদ্ধ করতে হবে।
আমিনবাজার ও মাতুয়াইলের ময়লার স্তূপ থেকে সৃষ্ট আগুন জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে আশেপাশের মানুষের ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ছে— এ সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে হবে।
গাছ সংরক্ষণ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, রাস্তা সম্প্রসারণের নামে পুরনো গাছ কাটা চলবে না। গাছ রেখে উন্নয়ন পরিকল্পনা করতে হবে। বন বিভাগ ও গণপূর্ত মিলে জাদুঘরের নকশা পরিবর্তনের মাধ্যমে গাছ রক্ষার চেষ্টা করছে— এটাই আশার বার্তা।
তিনি আরও জানান, ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি গাছ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হওয়ায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পরিবেশবান্ধব গাছ লাগানোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ, পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক জিয়াউল হক, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে ৩০০’র বেশি তরুণ জলবায়ুকর্মী অংশগ্রহণ করেন। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও এতে অংশ নিয়ে নিজ নিজ দলের পক্ষ থেকে জলবায়ু ও পরিবেশ বিষয়ে অবস্থান তুলে ধরেন এবং জানান, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের ইশতেহারে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।