দক্ষিণ এশিয়ার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংস্থা, সুশীল সমাজ ও স্থানীয় কমিউনিটির সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গত পাঁচ বছরে ১ কোটি ২০ লাখ কেজি (১০.২ মিলিয়ন কেজি) প্লাস্টিক বর্জ্য নদী ও সমুদ্রে পৌঁছানো থেকে রোধ করা সম্ভব হয়েছে। এই পরিমাণ প্লাস্টিকের ওজন প্রায় ২ হাজার ৫৫০টি প্রাপ্তবয়স্ক এশিয়ান হাতির সমান।
বুধবার (৪ জুন) সাউথ এশিয়া কো-অপারেটিভ এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম (এসএসিইপি)-এর বাস্তবায়নে পরিচালিত বহুদেশীয় উদ্যোগ ‘প্লাস্টিক ফ্রি রিভারস অ্যান্ড সিজ ফর সাউথ এশিয়া (প্লিজ)’ প্রকল্পের আওতায় এই সফলতা অর্জিত হয়েছে বলে জানানো হয়। জাতিসংঘের প্রকল্প সেবা কার্যালয় (ইউএনওপিএস) এই প্রকল্পে সহায়তা করেছে।
বাংলাদেশ, ভুটান, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা—এই ছয়টি দেশের অংশগ্রহণে পরিচালিত প্লিজ প্রকল্পের মাধ্যমে ৬ লাখ ২৬ হাজার কেজিরও বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য পুনর্ব্যবহার করা সম্ভব হয়েছে।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস (৫ জুন) উপলক্ষে এসএসিইপি ও প্লিজ প্রকল্পের উদ্যোগগুলো বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। এ বছরের প্রতিপাদ্য ছিল ‘বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক দূষণের অবসান’, যা পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের জন্য প্লাস্টিক বর্জ্য হ্রাস এবং ব্যবস্থাপনার জরুরি প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরেছে।
প্রকল্পটি প্লাস্টিক সম্পর্কিত নীতিমালা উন্নয়ন এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জটিলতা বোঝার লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশের পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করেছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় নারীরা অনানুষ্ঠানিক বর্জ্য সংগ্রহ কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য হারে যুক্ত, যেমন—ল্যান্ডফিল বা আবর্জনার স্তূপ থেকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য বাছাই। এই নারীদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ, প্রশিক্ষণ, শিশু যত্ন, স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক সেবার সুযোগ নিশ্চিত করতে প্রকল্পটি বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
২০২০ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে প্লাস্টিক দূষণ রোধ ও টেকসই ব্যবস্থাপনায় সমন্বিত উদ্যোগ হিসেবে এসএসিইপি ‘প্লিজ’ প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করে। ১৯৮২ সালে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর পরিবেশ উন্নয়নে গঠিত আন্তঃসরকারি সংস্থা এসএসিইপি সদস্য দেশগুলোকে টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিতে কাজ করে আসছে।
সুশীল সমাজ, বেসরকারি সংস্থা, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে প্রকল্পটি স্থানীয় বাস্তবতা অনুযায়ী কার্যকর সমাধান বাস্তবায়ন করেছে।
বাংলাদেশে জলপথে ভাসমান বর্জ্য আটকাতে ট্র্যাশ ব্যারিয়ার স্থাপন করা হয়েছে। কল্যাণপুর, রামচন্দ্রপুর খাল এবং মোহাম্মদিয়া হাউজিং রোডে রেডঅরেঞ্জ কমিউনিকেশনের উদ্যোগে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ২০০ কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য আটকানো হচ্ছে।
ভুটানে ব্যবহৃত পিইটি বোতল থেকে পলিয়েস্টার উল উৎপাদন করে তা খেলনা ও জ্যাকেটের মতো পণ্যে রূপান্তরিত করা হচ্ছে। ‘ক্লিন ভুটান’ নামের এই উদ্যোগ ইতোমধ্যে ১০ হাজারেরও বেশি বোতল পুনর্ব্যবহার করেছে।
মালদ্বীপে পুনঃব্যবহারযোগ্য কাচের বোতল ব্যবহারে উৎসাহ দিতে ১০০টির বেশি জল পরিশোধন যন্ত্র স্থাপন করেছে ‘কমিউনিটি এমপাওয়ারমেন্ট লিংকেজ (সিইএল)’। এসব যন্ত্র মাছ ধরার নৌকাতেও স্থাপন করা হয়েছে, যার ফলে প্লাস্টিক বোতলের ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
নেপালে ‘বায়োকম্প’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের প্লাস্টিককে পুনর্ব্যবহারযোগ্য যৌগিক বোর্ডে রূপান্তরের সুবিধা চালু করেছে। সেখানে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার কেজি প্লাস্টিক প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে।
পাকিস্তানের করাচিতে এখন ৬০টি ‘ইকো রিফিল স্টেশন’ চালু হয়েছে, যেখানে রান্নার তেল, শ্যাম্পু ইত্যাদি পণ্য পুনরায় রিফিল করে নেওয়া যায়। ‘দাভাম লাইফ’ নামের সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, এই উদ্যোগের মাধ্যমে ৭ হাজার কেজির বেশি একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জ্য এড়ানো সম্ভব হয়েছে।
শ্রীলঙ্কায় স্মার্ট রিসাইক্লিং বিন স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে প্লাস্টিক জমা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে মোবাইল অ্যাপে পুনর্ব্যবহারযোগ্য ক্রেডিট পাওয়া যায়, যা মোবাইল রিচার্জ ও বিল পরিশোধে ব্যবহার করা যায়।
‘প্লিজ’ হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ায় সামুদ্রিক প্লাস্টিক দূষণ রোধে বৃহত্তম উদ্যোগ। এটি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে, ইউএনওপিএসের সহায়তায় এবং এসএসিইপি’র বাস্তবায়নে পরিচালিত হচ্ছে।