X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কিছু সময়

পাভেল রহমান
০৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৭:৩৭আপডেট : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২০:০১

প্রণব মুখোপাধ্যায় আমার সৌভাগ্য, ফটোসাংবাদিকতার কল্যাণে আমি ভারতের অন্যতম প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। আমার আরও সৌভাগ্যের ব্যাপার হলো, পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলাটা অপ্রাসঙ্গিক হবে না, এই ক্যামেরার কারণে কমপক্ষে ১০ জন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী/প্রেসিডেন্টের ফটো কাভারেজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। তাদের সঙ্গে দেখা হয়েছে ঢাকা, দিল্লি, পাটনা, কলকাতাসহ আরও কয়েক জায়গায়। জ্যোতি বসু, লালকৃষ্ণ আদভানি, লালু প্রসাদ যাদব কিংবা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে দেখা ও কথা বলার সুযোগ হয়েছিল ভারতের কেন্দ্র থেকে দূরে-বিভিন্ন প্রদেশে। তবে তাদের কাছ থেকে কিছুটা সময় বের করে আনার বিষয়টির পেছনেও কিন্তু এই ক্যামেরার শক্তিই আমাকে কাজে দিয়েছিল। বলাবাহুল্য, এই ক্যামেরাটা গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট হওয়াটাও একটা বিষয়। শক্তির কথা বললাম এই কারণে যে, আমি যদি ওই ক্যামেরায় গণমাধ্যম ছাড়া অন্য কাজে ছবি তুলতাম, তাহলে সেই সুযোগটা আসতো না।

প্রণব মুখোপাধ্যায়কে আমি প্রথম দেখি ঢাকায়। ততদিনে তিনি দিল্লির মসনদের কাছাকাছি চলে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর শাসন আমলে বাঙালি বাবু হিসাবে তিনি আস্থাভাজন হয়ে উঠেছিলেন কংগ্রেসের ভেতরে এবং বাইরেও। সৎ নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদ হিসেবে নিজের শক্ত একটা ভিত তৈরি করতে পেরেছিলেন নিজেই।

আমার সঙ্গে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের প্রথম পরিচয় দিল্লিতে, তখন তিনি ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী। যদিও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হবার আগেও অনেকবার তাঁর কাভারেজ করেছি। কিন্তু তখন ওইভাবে তাঁর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়নি আমার। সুযোগ পাই তিনি ভারতের ডিফেন্স মিনিস্টার হওয়ার পরে। পরিচয় পর্বটাও ছিল আমার জন্য স্মরণীয়। কারণ, প্রণব বাবুর সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শ্রদ্ধেয় শেখ হাসিনা আপা। সালটা ছিল ২০০৪, আগস্টের কোনও এক সন্ধ্যায় আমরা ডিফেন্স মিনিস্টার প্রণব বাবুর সরকারি একতলা বাংলোতে হাজির হলাম। হাসিনা আপার সাথে ছিলেন তাঁর স্নেহের ছোট বোন ও বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা। শেখ রেহানার দুই মেয়ে রুপন্তি (...) আর টিউলিপ। আমি প্রতীক্ষায় ছিলাম, আমার ক্যামেরায় তাঁদের পারিবারিক ছবি ধারণ করবো বলে। আমার সঙ্গে ছিলেন শেখ হাসিনা আপার ব্যক্তিগত সচিব এন আই খান, যিনি পরবর্তীতে শিক্ষা সচিব হয়েছিলেন। তাদের ছাড়া আরও তিন জন সরকারি কর্মকর্তাও ছিলেন।

প্রণব বাবুর রিসিপশন কক্ষে আমরা পাঁচ জন পাঁচটি চেয়ারে বসা। ওই সময় প্রণব বাবুর সঙ্গে যারা দেখা করতে এসেছিলেন তাদের সেই সন্ধ্যায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কারণ, প্রতীক্ষার জন্য চেয়ারের অপ্রতুলতা ছিল ডিফেন্স মিনিস্টারের বাংলোতে। শুধু তা-ই নয়, ঘরটা এতটাই ছোট ছিল যে ৫ জনের বেশি বসার জায়গা ছিল না। ডিফেন্স মিনিস্টারের ঘরের ভেতরে যখন ছবি তোলার সুযোগ পেলাম, তখন ঘরের আসবাব দেখে আমি বিস্মিত হয়েছি। যেন সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের আসবাব সব। নেই কোনও জৌলুস, নেই কোনও বর্তমান সময়ের সাথে তাল রেখে চলার বাহুল্য চাকচিক্য। চোখে পড়লো মিসেস প্রণব, শুভ্রা মুখার্জি আর তাঁর পরিবারের আটপৌঢ় বেশভূষা।

সহজ-সরল এক জীবনযাপন দেখে মনে পড়ে গেলো বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরের বাড়ির সাধারণ সব আসবাবের কথা। দিল্লির সফদার জাং স্ট্রিটের সরকারি বাংলোতে সেই সন্ধ্যায় দুটি বাঙালি পরিবারের মিলন ছিল উষ্ণতা-আন্তরিকতায় উদ্বেলিত। সব ছাপিয়ে দুই পরিবারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের প্রকাশ ঘটেছিল পুরোমাত্রায়!

আমার জানা ছিল না বাড়ির কর্ত্রী শুভ্রা মুখোপাধ্যায়ের (মিসেস প্রণব মুখোপাধ্যায়) হাত দেখার (গণনার ) সুখ্যাতি আছে। সবার অনুরোধে সেই সন্ধ্যায় তিনি হাসিনা আপার হাত দেখতে বসলেন। অন্য সোফায় বসে কৌতূহলদীপ্ত চাহনি মেলেছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। কারও মুখে কোনও কথা নেই। শুভ্রা মুখোপাধ্যায়ের কপালে ততক্ষণে ভাঁজ পড়েছে, চিন্তার সেই ভাঁজ। সেই ভাঁজ ততক্ষণে ছড়িয়েছে সবার কপালে। আকস্মিক দুশ্চিন্তার কপালের ভাঁজ সরে শুভ্রা মুখোপাধ্যায়ের চেহারায় ফুটে উঠলো মিষ্টি হাসি। উৎফুল্ল শুভ্রা মুখোপাধ্যায় হস্তরেখায় দেখতে পেলেন হাসিনা আপার ক্ষমতা আহরণের দৃশ্য। আপার সাফল্যতার গ্যারান্টি দিয়ে বসলেন, সেই সাথে পুত্র অভিজিৎ, ইন্দ্রজিৎ আর কন্যা শর্মিষ্ঠা সবাই হাততালি দিয়ে মায়ের কথার সমর্থন জোগালেন।

অন্য সোফায় মিনিস্টার প্রণব মুখোপাধ্যায়ের চোখেমুখেও ফুটে উঠেছিল সুপরিচিত সেই হাসি, যে হাসিটি বঙ্গবন্ধু যখন পাকিস্তানের ৯ মাসের বন্দিজীবন কাটিয়ে লন্ডন হয়ে ঢাকা ফিরছিলেন, তখনকার সেই প্রশান্তির হাসিটির মতোই মধুর।

বাংলাদেশের আনন্দ বেদনায় প্রণব মুখোপাধ্যায় আমৃত্যু ছিলেন অকৃত্রিম এক বন্ধু।

/আইএ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রাজধানীতে ঝড়-শিলাবৃষ্টি
রাজধানীতে ঝড়-শিলাবৃষ্টি
৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে নির্যাতনের শিকার গৃহপরিচারিকাকে উদ্ধার
৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে নির্যাতনের শিকার গৃহপরিচারিকাকে উদ্ধার
এমপি স্ত্রীকে হারিয়ে ৬ ভোটে স্কুল কমিটির সভাপতি বদি
এমপি স্ত্রীকে হারিয়ে ৬ ভোটে স্কুল কমিটির সভাপতি বদি
পুলিশ-সাংবাদিক-আইনজীবী স্টিকারের ছড়াছড়ি, ব্যবস্থা নিতে মাঠে নেমেছে পুলিশ
পুলিশ-সাংবাদিক-আইনজীবী স্টিকারের ছড়াছড়ি, ব্যবস্থা নিতে মাঠে নেমেছে পুলিশ
সর্বাধিক পঠিত
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী