X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১
জাহানারা ইমামের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

আম্মা স্মরণে

উদিসা ইসলাম
২৬ জুন ২০২১, ০০:০৫আপডেট : ২৬ জুন ২০২১, ১৩:৩৩

‘একাত্তরের দিনগুলি’ গ্রন্থে উল্লেখ আছে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম ২০ নভেম্বর ১৯৭১ তারিখে তার ডায়েরিতে লিখেন- ‘ঈদের কোনও আয়োজন নেই আমাদের বাসায়। কারও জামাকাপড় কেনা হয়নি। দরজা-জানালার পর্দা কাচা হয়নি। ঘরের ঝুল ঝাড়া হয়নি। বাসায় ঘরের টেবিলে রাখা হয়নি আতরদান। শরীফ ও জামী ঈদের নামাজও পড়তে যায়নি। কিন্তু আমি ভোরে উঠে ঈদের সেমাই ও জর্দা রেঁধেছি। যদি রুমীর সহযোদ্ধা কেউ আজ  আসে এ বাড়িতে?’

একাত্তরের  এই লেখাই বলে দেয় এদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও পরবর্তীতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের লড়াইয়ে জড়িত প্রত্যেকের ‘আম্মা’ হয়ে ওঠেন জাহানারা ইমাম। আজ  ২৬ জুন আম্মার মৃত্যুবার্ষিকী।

১৯৭১ সালের ২৯ আগস্ট শাফী ইমাম রুমী ও তার বাবা শরীফ ইমামসহ বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। জাহানারা ইমারের বড় ছেলে রুমী নিজে সব স্বীকার করলো বাকিদের প্রাণে বাঁচাতে। শরীফ ইমামকে অমানুষিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে গুরুতর আহত অবস্থায় ছেড়ে দেয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। দেশ স্বাধীনের মাত্র তিন দিন আগে স্বামীকেও হারান জাহানারা ইমাম। এরপর সেই অত্যাচারী দালালদের শাস্তির পথ খোঁজেন জাহানারা ইমাম।

৯২ সালের ২৬ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নজিরবিহীন গণ-আদালতে যুদ্ধাপরাধীদের শিরোমণি গোলাম আযমের প্রতীকী বিচার হলো। এরপর জাহানারা ইমামের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়লো সারাদেশে। প্রতীকী বিচার হলো বটে, প্রকৃত বিচারের পথ তখনও মেলেনি।

শহীদ জননী জানতেন, জনগণই সকল শক্তির উৎস। আর  তাই একাত্তরের ঘাতক ও যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন’ ও ‘একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল সমন্বয় আন্দোলনের’ দায়িত্বভার তিনি বাংলাদেশের জনগণের হাতে অর্পণ করেছিলেন।

আম্মা তার শেষ চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘সহযোদ্ধা দেশবাসীগণ, আপনারা গত তিন বছর ধরে একাত্তরের ঘাতক ও যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমসহ স্বাধীনতাবিরোধী সকল অপশক্তির বিরূদ্ধে লড়াই করে আসছেন। এই লড়াইয়ে আপনারা দেশবাসি অভূতপূর্ব ঐক্যবদ্ধতা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। আন্দোলনের শুরুতে আমি আপনাদের সঙ্গে ছিলাম।’

তিনি লিখেন  ‘আমাদের অঙ্গীকার ছিল, লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত কেউ রাজপথ ছেড়ে যাবো না। মরণব্যাধি ক্যান্সার আমাকে শেষ কামড় দিয়েছে। আমি আমার অঙ্গীকার রেখেছি। রাজপথ ছেড়ে যাইনি। মৃত্যুর পথে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা কারও নেই।’

তিনি তখনই জানতেন, সেদিনের সেই আন্দোলনকে দুস্তর পথ পাড়ি দিতে হবে। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, মুক্তিযোদ্ধা, ছাত্র ও যুব শক্তি, নারী সমাজসহ দেশের সর্বস্তরের মানুষ এই লড়াইয়ে আছে। শেষবার তিনি অঙ্গীকার পালনের কথা আরেকবার স্মরণ করিয়ে দেন— ‘আপনারা আপনাদের অঙ্গীকার ও ওয়াদা পূরণ করবেন। আন্দোলনের শেষ পর্যায় পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ে থাকবেন। আমি না থাকলেও আপনারা আমার সন্তান-সন্ততিরা আপনাদের উত্তরসূরীরা সোনার বাংলায় থাকবেন।’

তার উত্তর-প্রজন্ম সেই কথা রেখেছে। ২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে এই প্রজন্ম হাজির হলেও তারা জাহানারা ইমামের আদর্শকেই সামনে রেখে এগোয়।

একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক জাহানারা ইমামের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কেন্দ্রীয়ভাবে ‘জাহানারা ইমাম স্মারক বক্তৃতা’, আলোচনা সভা এবং ‘জাহানারা ইমাম স্মৃতিপদক’ প্রদানের আয়োজন করা হয়েছে। আয়োজন হয়েছে ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের নারী সমাজের অবদান শিরোনামে ওয়েবিনার।

সংগঠনের বর্তমান সভাপতি শাহরিয়ার কবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা তাকে, তার কাজকে স্মরণ করি। এদিন সারাদিনই নানা আয়োজন রাখা হয়েছে। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, এর প্রয়োজনীয়তা জাহানারা ইমাম জনমনে গেঁথে দিতে সমর্থ হয়েছিলেন।’

১৯২৯ সালের ৩ মে ভারতের মুর্শিদাবাদে জন্ম জাহানারা ইমামের। বাবার চাকরি সূত্রে নানা জায়গায় থেকেছেন। শৈশব কেটেছে রংপুরে। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট বাবার সূত্রে বাড়িতে নিয়মিত আসতো পত্রপত্রিকা। ক্রমে জাহানারা বইয়ের জগতে ডুবে যান। ১৯৪৮ সালের ৯ আগস্ট ময়মনসিংহে বিয়ে হয় জাহানারা ইমামের। যখন তার বিয়ে হয়, তখন তিনি বিদ্যাময়ী স্কুলের শিক্ষক। ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে এমএ পরীক্ষা দিয়ে পাস করেন তিনি। ১৯৬৬ সালে যোগ দেন টিচার্স ট্রেনিং কলেজে। দুই বছর সেখানে পড়ানোর পর ১৯৬৮ সালে সেই চাকরি ছেড়ে দেন তিনি। ১৯৭১ সালে জাহানারা ইমাম তখন পুরোদস্তুর গৃহিণী। স্বামী- সন্তান হারানোর পরে নেমে আসে দুর্যোগ। বিজয়ের পরে রুমীর সববন্ধুসহ সকল মুক্তিযোদ্ধা তাকে তাদের জননী হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন। জাহানারা ইমাম নিজের কাজের মধ্য দিয়ে এই সন্তানদের কাছে শ্রদ্ধায় হয়ে ওঠেন সবার জননী, প্রিয় আম্মা।

আরও পড়ুন:

জাহানারা ইমামের ২৭তম মৃত্যুবার্ষিকীতে নানা আয়োজন

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
জাহানারা ইমামের মৃত্যুবার্ষিকীতে বাসদের শ্রদ্ধা
শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বালন
জাহানারা ইমামের ২৭তম মৃত্যুবার্ষিকীতে নানা আয়োজন
সর্বশেষ খবর
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
মোনাকোর হারে লিগ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি
বাজারে এলো বাংলা ভাষার স্মার্টওয়াচ ‘এক্সপার্ট’
বাজারে এলো বাংলা ভাষার স্মার্টওয়াচ ‘এক্সপার্ট’
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
চার বছরে আট ফ্লপ, আসছে আরও এক হালি!
জোড়া আঘাতে হায়দরাবাদকে গুটিয়ে চেন্নাইয়ের জয় রাঙালেন মোস্তাফিজ
জোড়া আঘাতে হায়দরাবাদকে গুটিয়ে চেন্নাইয়ের জয় রাঙালেন মোস্তাফিজ
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ