জাতীয় সংসদের সাবেক সদস্য, শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সারের সহধর্মিণী অধ্যাপক পান্না কায়সার মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। তার মেয়ে অভিনেত্রী শমী কায়সার মৃত্যুর সংবাদটি নিশ্চিত করেছেন।
পারিবারিক সূত্র জানায়, শুক্রবার (৪ আগস্ট) সকাল ১১টায় রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা যান পান্না কায়সার।
পান্না কায়সারের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক শোক বার্তায় তিনি মরহুমার রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
পান্না কায়সারের জন্ম ১৯৫০ সালের ২৫ মে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করা এই শহীদজায়া শিক্ষকতা করেছেন বেগম বদরুন্নেসা কলেজে।
১৯৯৬-২০০১ সালের জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনের এমপি ছিলেন পান্না কায়সার। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণা, গল্প-উপন্যাস মিলিয়ে বেশ কয়েকটি সাড়া জাগানো গ্রন্থের রচয়িতা তিনি। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণায় অবদান রাখার জন্য তাকে ২০২১ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
শহীদজায়া পান্না কায়সার দুই সন্তান শমী কায়সার ও অমিতাভ কায়সারকে একা মানুষ করেছেন। কিন্তু তিনি শুধু সংসার জীবনে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। তিনি শিশু-কিশোর সংগঠন ‘খেলাঘর’-এর প্রেসিডিয়াম মেম্বার ছিলেন ১৯৭৩ সাল থেকে। ১৯৯০-এ তিনি এই সংগঠনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
অধ্যাপক পান্না কায়সারের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। শোকবার্তায় তিনি বলেন, ‘পান্না কায়সার ছিলেন প্রজ্ঞা আর প্রাণশক্তির অনন্য উদাহরণ। শহীদজায়া পান্না কায়সারের মৃত্যুতে দেশ একজন মুক্তিযুদ্ধ গবেষক, লেখক ও নিবেদিতপ্রাণ শিশু সংগঠককে হারালো। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আগামী প্রজন্ম গড়ে তোলার কারিগর পান্না কায়সার তার কর্ম ও গবেষণার মধ্য দিয়ে আমাদের হৃদয়ে অমর হয়ে থাকবেন।’
পান্না কায়সারের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান, সাবেক সংসদ সদস্য এম এ আউয়াল ও মহাসচিব অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম। শোকবাণীতে তিনি বলেন, অধ্যাপক পান্না কায়সারের মৃত্যুতে মুক্তিযুদ্ধের একটি আবেগঘন সময়ের অবসান ঘটলো। ১৯৯৬-২০০১ সালের জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন পান্না কায়সার। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণা, গল্প-উপন্যাস মিলিয়ে বেশ কয়েকটি সাড়া জাগানো গ্রন্থের রচয়িতা তিনি। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণায় অবদান রাখার জন্য তাকে ২০২১ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
শিক্ষকতা, রাজনীতি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে প্রয়াত মরহুমা পান্না কায়সার আগামী দিনের বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে উজ্জ্বলতর এক নাম উল্লেখ করে শোকবাণীতে আরও বলা হয়, তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শারীরিক প্রয়াণ হলেও তার আদর্শিক মৃত্যু অক্ষয়। বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে দীর্ঘদিন তার ও তার পরিবারের ত্যাগ অমলীন হয়ে থাকবে।
এদিকে অধ্যাপক পান্না কায়সারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। শুক্রবার (৪ অগাস্ট) এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, ‘শহীদজায়া পান্না কায়সার মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত একজন আলোকিত মানুষ ছিলেন। তিনি নিজে যেমন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করতেন, তেমনি তা ছড়িয়ে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনানির্ভর আগামী প্রজন্ম গড়ে তুলতে সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন। তার এই শূন্যতা অপূরণীয়। গবেষণাকর্ম ও লেখালেখির কল্যাণে তিনি আমাদের হৃদয়ে অমর হয়ে থাকবেন।’
শোকবার্তায় ডিএসসিসি মেয়র পান্না কায়সারের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।