X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

শিশু নেহাল হত্যা: মাকে রিমান্ডে নিতে চায় পুলিশ

আমানুর রহমান রনি
০১ মে ২০১৬, ২১:২৫আপডেট : ০১ মে ২০১৬, ২৩:১১

নিহত শিশু নেহাল সাদিকের মা ফাহমীদা মীর উত্তরখানে দাম্পত্য কলহের জের ধরে দেড় বছরের শিশু নেহাল সাদিক খুন হওয়ার ঘটনায় মা ফাহমীদা মীর মুক্তিকে রিমান্ডে নিতে চায় পুলিশ। যদিও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনি মানসিক রোগে ভুগছেন। তার চিকিৎসার প্রয়োজন। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।  সোমবার এ বিষয়ে আদালতে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
রবিবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরখান থানার (ওসি তদন্ত) পরিদর্শক রেজাউল করীম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, শিশু নিহাল হত্যার পর তার বাবা সাজ্জাদ হোসেন বাদী হয়ে উত্তরখান থানায় মাকে আসামি করে একটি হত্যামামলা দায়ের করেন। এছাড়া, মা আত্মহত্যা চেষ্টা করেছিলেন। এতে তার গলায় গুরুতর জখম হয়। আমরা তাকে চিকিৎসার জন্য ঢামেক হাসপাতালে পাঠাই। তিনি গুরুতর আহত থাকায় ওই সময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়নি। চিকিৎসা শেষে আমরা তাকে আদালতে হাজির করে দশদিনের রিমান্ড চাই। তবে আদালত তার রিমান্ডের শুনানির দিন ২ মে ধার্য করেছেন। সোমবার শুনানি হবে।
গত ১৮ এপ্রিল উত্তরখানের ৮৫৯, মাস্টারপাড়া  সোসাইটির বাসার চতুর্থ তলায় ওই শিশুটি খুন হয়। পুলিশের দাবি, শিশুটিকে তার মা হত্যা করতে পারেন। শিশুটিকে হত্যার পর মা ফাহমীদা মীর মুক্তি নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। তাকে গ্রেফতার করা হয়। শিশুটির বাবা মাকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পুলিশ পাহারায় একসপ্তাহ চিকিৎসাধীন ছিলেন মা মীম।

আরও পড়তে পারেন: যেখানে সেখানে কারখানা তৈরি করবেন না

ঢামেক হাসপাতালে সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসা শেষে মাকে জাতীয় মানসিক ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য পরামর্শ দেন ঢামেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা। এরপর তারা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন মীমকে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রেজাউল করীম বলেন, আমরা গতসপ্তাহে চিকিৎসকের কাগজপত্রসহ আদালতে তার দশদিনের রিমান্ড চাই। আদালত রিমান্ডের শুনানি স্থগিত করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। রিমান্ডের শুনানি ২ মে অনুষ্ঠিত হবে। মা বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

সাজ্জাদ ও মীম দম্পতির দুজনেরই এটি দ্বিতীয় বিয়ে। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো। তারই জের ধরে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলেই পুলিশের ধারণা।

পুলিশ জানিয়েছে, ঝগড়া হলেই মা মীমকে সাজ্জাদ ছেলে নিহালকে রেখে চলে যাওয়ার জন্য বলতেন। এ নিয়ে তার একটি ভয় ছিল। কারণ মীমের প্রথম সংসারে একটি মেয়ে আছে। ওই মেয়েকে নিয়ে তার আগের স্বামী অস্ট্রেলিয়া আছেন। মীম হয়তো ভাবছেন, এবারও তার সন্তানকে তার এই স্বামী রেখে দেবে। সেই ভয় তার ছিল।

শিশুটির চাচা সৈয়দ কবীরুল ঘটনার পর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছিলেন, আমার ছোটভাই সাজ্জাদ হোসেন উত্তরার নর্থ টাওয়ারের লেডিস কর্নার নামে একটি টেইলার্সের দোকানে কাজ করেন। সেখানে সেলোয়ার কামিজ তৈরি করতে গিয়ে ফাহমীদার সঙ্গে সাজ্জাদের পরিচয় হয়। তাদের মধ্যে সম্পর্ক হয়। এরপর তারা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। ফাহমীদার আগে একটি সংসার ছিল। তার আগের স্বামীর নাম শাহীন মাহমুদ। তারা উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরে থাকতেন। ওই সংসারে সামিয়া সুমাইয়া নামে ১১ বছরের একটি মেয়েও রয়েছে। তবে ওই স্বামীর সঙ্গে তার বিচ্ছেদের পর তিনি সাজ্জাদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। সাজ্জাদেরও এটি দ্বিতীয় বিয়ে। বিয়ের পর তারা মাস্টারপাড়ার ওই বাসায় ভাড়া থাকতেন। ২০১৪ সালের শেষের দিকে তাদের ছেলে সন্তানের জন্ম হয়।

তাদের মধ্যে প্রায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঝগড়া হতো বলে জানিয়েছেন কবীরুল। দীর্ঘদিন ধরে তাদের মধ্যে বনিবনা হচ্ছিল না। হয়তো পারিবারিক কলহের জের ধরেই এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে।

ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফাহমীদা বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছিলেন, ওই রাতে কে যেন তার দরজা খটখট করে, এরপর কী হয়েছে আমি আর জানি না।

আরও পড়তে পারেন: খালেদা জিয়া মিথ্যাবাদী ও চোর: জয়

তবে পুলিশ জানিয়েছে, রাত সাড়ে ১০টার দিকে সাজ্জাদ বাসায় গিয়ে তার ছেলের রক্তাক্ত নিথর দেহ খাটের ওপর পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার শুরু করেন। এরপর বাড়িওয়ালা ওয়াহিদুজ্জামানসহ অন্য প্রতিবেশীরা ওই বাসায় গিয়ে শিশুটিকে খাটের ওপর পরে থাকতে দেখেন। মা তার পাশেই শোয়া ছিলেন। এরপর বাড়িওয়ালা পুলিশকে খবর দিলে রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ ওই শিশুর লাশ উদ্ধার করে।

পরিদর্শক রেজাউল করিম বলেন, আমরা ধারণা করছি, নতুন ব্লেড দিয়ে শিশুটির পেট ছেঁড়া হয়েছে। কারণ, ওর বাবা যে ব্লেড দিয়ে সেভ হতেন তার দুটি ব্লেড খুঁজে পাওয়া যায়নি। আমরা অনেক খুঁজচ্ছি কিন্তু ব্লেড পাইনি। প্রথমদিকে মীম ঠিকঠাক তথ্য দিলেও এখন কোনও তথ্য দিচ্ছেন না। কোনও কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করলেই তিনি তর্ক শুরু করেন। চিকিৎসকরা তাকে মানসিক চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়ার পর তার ভেতরে এই ধরনের আচারণ লক্ষ করছি।

ফাহমীদাদের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের মির্জাপুর। তার পরিবার ঢাকায় থাকেন। তার বাবা মৃত মীর সাদাউল রহমান। মা খালেদা রহমান। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে ফাহমীদা ছোট। বড়ভাই ফায়জুল বারী মীর হাজারীবাগের ট্যানারি মোড়ের একটি বাসায় তার মাকে নিয়ে থাকেন। ছোটভাই মীর গাউসুল বারী ইতালি প্রবাসী। তবে সাজ্জাদের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর তাদের সঙ্গে আর ফাহমীদার যোগাযোগ হতো না।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নাক কান গলা বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. আরেফিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ফাহমীদা বিপদমুক্ত রয়েছেন। তার মানসিক একটু সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাকে মানসিক চিকিৎসার জন্য চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

/এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
অভিষেকে আস্থার প্রতিদান দিলেন তানজিদ
অভিষেকে আস্থার প্রতিদান দিলেন তানজিদ
এখনও উদ্ধার হয়নি পুলিশের অস্ত্র, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ
২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশে সহিংসতাএখনও উদ্ধার হয়নি পুলিশের অস্ত্র, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ
রিকশাচালকদের ছাতা বিতরণ করলেন মেয়র আতিক
রিকশাচালকদের ছাতা বিতরণ করলেন মেয়র আতিক
রেল ও সড়ক বিটের রিপোর্টারদের সংগঠনের নতুন কমিটি
রেল ও সড়ক বিটের রিপোর্টারদের সংগঠনের নতুন কমিটি
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা