X
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
ইউপি নির্বাচন ২০১৬

হিড়িক পড়েছে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রার্থীহীনতার

এমরান হোসাইন শেখ
১২ মে ২০১৬, ০৭:২৩আপডেট : ১২ মে ২০১৬, ১৪:১৭

ইউপি নির্বাচন ২০১৬ চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিনা ভোটে জয়ের হিড়িক পড়ে গেছে। প্রথমবারের মতো দলীয় ব্যানারে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনের ধাপ যত বাড়ছে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতের সংখ্যাও তত বাড়ছে। এই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের সবাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী। বিপরীতে দেখা গেছে, সংসদের বাইরে থাকা প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির প্রার্থীহীনতাও রেকর্ড গড়েছে। দলটি ইউপি নির্বাচনের অনন্ত ১৫ শতাংশে প্রার্থী দিতে পারেনি। গত চার ধাপের নির্বাচন পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রে জানা গেছে, ইউপি নির্বাচনের প্রথম চার ধাপে অনুষ্ঠিত ২ হাজার ৬৬৯ ইউপির মধ্যে ১৫০টিতে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তারা সবাই আওয়ামী লীগের প্রার্থী। এবার প্রথম ধাপে ৭১২টি ইউপিতে ৫৪ জন, দ্বিতীয় ধাপে ৬৩৯টি ইউপে ৩৪ জন, তৃতীয় ধাপে ৬১৫টিতে ২৯ জন ও চতুর্থ ধাপে ৭০৩টি ইউপেত ৩৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া, পঞ্চম ধাপের মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনের তথ্য মতে, ৭৩৩টি ইউপির মধ্যে ২৪টি ইউপিতে একক প্রার্থী রয়েছেন। অন্যদের মতো, এই ইউপিগুলোর প্রার্থীরাও আওয়ামী লীগ মনোনীত। বৃহস্পতিবার পঞ্চম ধাপের ১২ মে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানা গেছে।

আরও পড়তে পারেন: মগবাজারে ছাত্রলীগকর্মীকে কুপিয়ে হত্যা

দেশের অতীতের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে আগের সব রেকর্ডই এবার ভেঙে গেছে। কমিশন থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা জানা গেছে, অতীতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতের রেকর্ড ছিল ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে। এরশাদ সরকারের সময় অনুষ্ঠিত ওই ইউপি নির্বাচনে ১০০ জন চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ওই সময় ওই নির্বাচনকে অস্বাভাবিক বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। এরপর কোনও স্থানীয় নির্বাচন, বিশেষ করে ইউপি নির্বাচনে বিনা ভোটে জয়ের সংখ্যাটা তেমন ছিল না। ১৯৯২ সালের ইউপি নির্বাচনে মাত্র ৪ জন চেয়ারম্যান বিনাভোটে জয়ী হয়েছিলেন। ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন ৩৭ জন। ২০০৩ সালের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় বিনাভোটে চেয়ারম্যান হয়েছেন ৩৪ জন। ২০১১ সালের নির্বাচনে এই সংখ্যা দুই অঙ্কে পৌঁছেনি বলে ওই সময় দায়িত্বে থাকা ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। অথচ এবার এক ধাপের আগেই এই সংখ্যা ১৭৪-এ পৌঁছেছে। পঞ্চম ধাপের প্রার্থিতা প্রত্যাহারসহ ষষ্ঠ ধাপ নাগাদ এই সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে যাবে বলে নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

এদিকে, বিএনপির প্রার্থীহীনতার তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রথম ‍ধাপে এ দলটির ৩৮৫টি ইউপিতে কোনও প্রার্থী ছিল না। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ১১৯টি, দ্বিতীয় ধাপে ৭৯টি, তৃতীয় ‍ধাপে ৮১টি ও চতুর্থ ধাপে ১০৬টি ইউপিতে দলটির কোনও প্রার্থী ছিল না। এছাড়া পঞ্চম ধাপের ৭৩৩টি ইউপির মধ্যে ৫৩টিতে তারা কোনও প্রার্থী দিতে পারেনি।

প্রার্থী দিতে না পারার বিষয়টিকে বিএনপির পক্ষ থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকারের ওপর দোষারোপ করা হয়েছে। দলটির পক্ষে থেকে অভিযোগ করা হয়েছে বিভিন্ন স্থানে সরকার দলীয় প্রার্থী ও প্রশাসনের ভয়ভীতির কারণে তাদের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি। কোনও কোনও স্থানে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও জোরপূর্বক তা প্রত্যাহারে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। অবশ্য এই অভিযোগের বিপরীতে কোথাও কোথাও প্রার্থী না পাওয়া বা ব্যক্তিগত লাভালাভের কারণে দলীয় মনোনয়ন নিয়েও শেষ পর্যন্ত নির্বাচন থেকে সরে যওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ সব কারণে বিএনপি একাধিক নেতাকে দল থেকে বহিষ্কারও করেছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সভাপতি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচনের ট্রেন্ড তৈরি হয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে। একদিকে একটি দলের প্রার্থীরা ভোট ছাড়াই নির্বাচিত হচ্ছেন, অন্যদিকে একটি বড় দলের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রার্থী থাকছে না। এই প্রবণতা গণতন্ত্র ও নির্বাচন পদ্ধতি ধ্বংসের দিকে নিয়ে যবে।

একক প্রার্থী ও প্রার্থীহীনতার বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, নির্বাচনে আইনগতভাবে আমাদের কোনও ত্রুটি নেই। কোথাও একক প্রার্থী থাকলে বা কেউ ভোটে না এলে আমাদের কিছু করণীয় নেই। তারপরও কোথাও থেকে যৌক্তিক অভিযোগ পেলে সেখানে ব্যবস্থা নিচ্ছি।

আরও পড়তে পারেন: রাজশাহীর ১৪৮ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কমিটি বাতিলের নির্দেশ

এর অংশ হিসেবে একাধিকস্থান থেকে মনোনয়নপত্র ক্রয় ও জমা দেওয়ার সুযোগ, কয়েকটি ইউপিতে মনোনয়নপত্র জমার সময় বাড়ানো ও কয়েকটির ভোট স্থগিত করা হয়েছে বলে জানান এই কমিশনার।

সারাদেশের ৪ হাজার ৫৪৬টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন উপযোগী ৪ হাজার ২৭৫টির নির্বাচনের উদ্যোগ নেয় কমিশন। ছয় ধাপের নির্বাচনি পরিকল্পনায় চার ধাপে ২ হাজার ৬৬৯টি ইউপির নির্বাচন ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। আর পঞ্চম ধাপে আগামী ২৮ মে ৭৩৩টি ও ষষ্ঠধাপে ৪ জুন ৭২৪টি ইউপিতে নির্বাচনের লক্ষ্যে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে।

/এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
খারকিভে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া: ইউক্রেন
খারকিভে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া: ইউক্রেন
‘অধিকার দিতে হবে না, কেড়ে না নিলেই হবে’
‘অধিকার দিতে হবে না, কেড়ে না নিলেই হবে’
ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য গ্যান্টজের পদত্যাগের হুমকি
ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য গ্যান্টজের পদত্যাগের হুমকি
উপজেলা নির্বাচনের প্রচারণায় অংশ না নিতে এমপিকে রিটার্নিং কর্মকর্তার চিঠি
উপজেলা নির্বাচনের প্রচারণায় অংশ না নিতে এমপিকে রিটার্নিং কর্মকর্তার চিঠি
সর্বাধিক পঠিত
মামুনুল হক ডিবিতে
মামুনুল হক ডিবিতে
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
‘নীরব’ থাকবেন মামুনুল, শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
‘নীরব’ থাকবেন মামুনুল, শাপলা চত্বরের ঘটনা বিশ্লেষণের সিদ্ধান্ত
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক
মোবাইল আনতে ডিবি কার্যালয়ে মামুনুল হক