X
শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪
২৭ বৈশাখ ১৪৩১
মিতু হত্যাকাণ্ড

দুই ‘খুনির’ জবানবন্দি নিয়ে পুলিশের রহস্যময় রাখঢাক

জামাল উদ্দিন
২৭ জুন ২০১৬, ২২:২২আপডেট : ২৭ জুন ২০১৬, ২২:২৫

মাহমুদা খানম মিতু এসপি বাবুল আখতারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যায় জড়িত স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে দুজন। পুলিশ বলছে এরা ভাড়াটে এবং পেশাদার খুনি। তাহলে প্রশ্ন হলো কারা তাদের ভাড়া করেছে, কত টাকায় ভাড়া করেছে আর হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্যইবা (মোটিভ) কী? এই প্রশ্নগুলোর কোনোটিরই জবাব দিচ্ছে না পুলিশ। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের(সিএমপি) কমিশনার ইকবাল বাহার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘তদন্তের স্বার্থে এখন এসব প্রশ্নের জবাব দেওয়া যাবে না।’
এর আগে রবিবার সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘মিতু হত্যায় গ্রেফতার হওয়া মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম ও মো. আনোয়ার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সময় মোটরসাইকেলে যে তিনজনকে দেখা গেছে তাদের মধ্যে ওয়াসিম একজন। সে মিতুকে সরাসরি গুলি করেছে বলে আদালতে স্বীকার করেছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও অপরাধ বিজ্ঞানের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির পর জবানবন্দি থেকে আরও কিছু প্রশ্নের জবাব পাওয়ার কথা।

১.তারা কে বা কাদের নির্দেশে হত্যা করেছে?

২. কেন হত্যা করেছে? হত্যাকাণ্ডের মোটিভ কী? এবং

৩. তারা ভাড়াটে খুনি হলে কত টাকার বিনিময়ে হত্যা করেছে?

এই তিনটি প্রশ্নই করা হয় সিএমপির কমিশনার ইকবাল বাহারকে। তিনি জবাবে বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। এই হত্যায় ৭-৮ জন জড়িত রয়েছে, হত্যাকাণ্ডে পেশাদার সন্ত্রাসীরাই জড়িত। এর বেশি কিছু এখন বলা যাচ্ছে না।’

এসব প্রশ্নের জবাব জবানবন্দিতে আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন- ‘তাও বলা যাবে না। এর বেশি কিছু এখন জানতে চাইবেন না।’

চট্টগ্রাম পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্যকেও উপরের তিনটি প্রশ্ন করা হয়। জবাব প্রায় একইরকম। তিনি বলেন, ‘কার নির্দেশে ও পরিকল্পনায় মিতুকে হত্যা করা হয়েছে সেটা তদন্ত শেষেই বিস্তারিত বলা যাবে। খুনি চক্রের ভেতরে কিংবা বাইরেও পরিকল্পনাকারীরা থাকতে পারে।’

হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, ‘যদি পেশাদার বা ভাড়াটে খুনি হয় তাহলে তারা কমপক্ষে একধাপ উপরের নির্দেশদাতাদের ব্যাপারে বলতে পারবে। দূরবর্তী নির্দেশদাতাদের সম্পর্কে তাদের ধারণা নাও থাকতে পারে। আর তারা মোটিভ সম্পর্কে সবসময় নাও জানতে পারে। তবে তার আগে দেখতে হবে আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবাবন্দি আসলেই স্বেচ্ছায় না পুলিশ নির্যাতন করে নিয়েছে।’

তিনি বলেন, ’জবানবন্দি সঠিক হলে জবানবন্দি ধরে অপরাধে ব্যবহৃত অস্ত্র থেকে শুরু করে সবকিছু মিলে যাবে। আর সঠিক না হলে তা মিলান কঠিন।’

অপরাধ বিজ্ঞানের এই অধ্যাপক বলেন, ’আদালতে দেওয়া জবানবন্দি প্রত্যাহারেরও সুযোগ আছে। আজকাল অনেক জবানবন্দিই প্রত্যাহার হচ্ছে। কারণ পুলিশ নির্যাতন চালিয়ে তাদের মতো করে জবানবন্দি আদায় করে।’

যে অস্ত্রটি দিয়ে মিতুকে গুলি করেছে, স্বীকারোক্তি দেওয়া ওয়াসিম সেটাও এখনও পুলিশ উদ্ধার করতে পারেনি। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের দাবি, কামরুল ইসলাম মুসা ও এহতেশামুল হক ভোলা নামের দুজনকে ধরা গেলে এ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর আরও তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে। তাদের ধরা না গেলেও এই দুজন পুলিশের নজরদারিতেই রয়েছেন।

অন্যদিকে, মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আকতার ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হওয়ার পর শনিবার বিকাল থেকে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়ার শ্বশুর বাড়িতে অনেকটা স্বেচ্ছায় ঘরবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। গণমাধ্যম তো দূরের কথা নিকটজন ছাড়া কারও সঙ্গেই কথা বলছেন না। খিলগাঁও থানার পুলিশ পর্যায়ক্রমে ওই বাড়িতে পাহারা দিচ্ছে। এছাড়া আশেপাশে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।

বাবুল আকতার কী তাহলে নজরবন্দি? জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন কোনও মন্তব্য করতে রাজী হননি। বাবুল আকতারের অবস্থানের চারপাশে নিরাপত্তা বেষ্টনি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজী হননি খিলগাঁও থানার ওসি মইনুল হোসেনও। বলেন, ‘এ বিষয়টি এখন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দেখভাল করছেন।’

আর সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, ‘নজরবন্দি নয়, তাকে নিরাপত্তায় রাখা হয়েছে। তদন্তে যদি ভিন্নরকম কিছু বেরিয়ে আসে তাহলে সরাসরি পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। লুকোচুরির কিছু নেই।’

আর মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে আজ সোমবার দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘মিতু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজনদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজনকে ধরা হয়েছে। জড়িত অন্যদেরও গ্রেফতার করা হবে।’

গত ৫ জুন সকালে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় চট্টগ্রামের জিইসি এলাকায় গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। এরপর বাবুল আকতার বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামা তিন জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিযুক্ত আছে সিএমপি’র গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) মুহাম্মদ কামরুজ্জামান।

/এএইচ/ 

আরও খবর পড়ুন-

সত্য প্রকাশই পারে গুজবের ডালপালা ছাঁটতে

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বাংলাদেশ কাঁটাতারে ঝুলছে: গয়েশ্বর চন্দ্র
বাংলাদেশ কাঁটাতারে ঝুলছে: গয়েশ্বর চন্দ্র
চাঁদপুরে স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যায় অভিযুক্ত স্বামী যশোরে গ্রেফতার
চাঁদপুরে স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যায় অভিযুক্ত স্বামী যশোরে গ্রেফতার
নির্বাচনি প্রচারে অন্তর্বর্তী জামিন পেলেন কেজরিওয়াল
নির্বাচনি প্রচারে অন্তর্বর্তী জামিন পেলেন কেজরিওয়াল
‘এভাবে আচমকা গোল হয়ে যাবে, চিন্তাও করিনি’
‘এভাবে আচমকা গোল হয়ে যাবে, চিন্তাও করিনি’
সর্বাধিক পঠিত
দেশের ব্যাংকগুলো ধ্বংস হচ্ছে, তার উদাহরণ এনআরবিসি: জিএম কাদের
দেশের ব্যাংকগুলো ধ্বংস হচ্ছে, তার উদাহরণ এনআরবিসি: জিএম কাদের
২০ মিনিটে লালখানবাজার থেকে বিমানবন্দর, চলবে না অটোরিকশা-বাইক
২০ মিনিটে লালখানবাজার থেকে বিমানবন্দর, চলবে না অটোরিকশা-বাইক
রাশিয়াকে ঠেকাতে আরও অস্ত্র চাইলেন জেলেনস্কি
রাশিয়াকে ঠেকাতে আরও অস্ত্র চাইলেন জেলেনস্কি
সাতক্ষীরায় আম পাড়া শুরু, ২৫০ কোটি টাকা বিক্রির আশা
সাতক্ষীরায় আম পাড়া শুরু, ২৫০ কোটি টাকা বিক্রির আশা
চীন বিষয়ে বিশেষজ্ঞকে ঢাকায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
চীন বিষয়ে বিশেষজ্ঞকে ঢাকায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র