পাবনার ওএসডি ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. কে এম আবু জাফরের পদোন্নতির তদবির করতে গিয়ে সচিবালয়ে আটক হয়েছেন ডেমরার জাকির হোসেন নামের এক ব্যক্তি। রবিবার (৫ মার্চ) বিকালে সচিবালয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দফতরের এ ঘটনায় তার এপিএস মীর মোশারফ হোসেন রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
মন্ত্রণালয়ে আটক দালাল জাকিরকে থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম পাবনার ডেপুটি সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিলেও পরে পাবনার সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্সের সুপারিশে ছাড় দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে পাবনার সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম পারভেজ পিন্সের সঙ্গে রাতে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলা টিবিউনকে বলেন, ‘আমি মন্ত্রীকে সুপারিশ করছি ডেপুটি সিভিল সার্জেনের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্য। কারণ তিনি নিরীহ লোক, দালল চক্রের হাতে শিকার হয়েছেন।’
জানা গেছে, ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা.কে এম আবু জাফর তার স্টোরকিপার হাসানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তদবিরের জন্য জাকির নামের ওই দালালকে নিয়ে রবিবার দুপুরে সচিবালয়ে আসেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পাস নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এপিএস মীর মোশারফ হোসেনের কক্ষে অবস্থান নেন ডা. জাফর। আর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পাস নিয়ে সচিবালয়ে ঢোকেন দালাল জাকির হোসেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এপিএস-এর কক্ষে এসে যশোর অঞ্চলের জেনারেল কমান্ডিং অফিসার (জিওসি) মেজর জেনারেল মতিউর রহমানের নাম উল্লেখ করে ডা. জাফরের তদবিরের জন্য কথা বলেন দালাল জাকির। এক পর্যায়ে মেজর জেনারেলের খোঁজখবর জানতে চান এপিএস। তখন দালাল জানান, ‘স্যার এখন গণভবনে বসেন।’ গণভবনে মেজর জেনারেলের কার্যালয় শুনেই সন্দেহ হয় এপিএস-এর। বিষয়টি যাচাই করতে যশোর ক্যান্টমেন্টে খোঁজ নিয়ে তিনি জানতে পারেন, মতিউর রহমান নামে এখন কোনও জিওসি নেই। আগে এই নামে একজন জিওসি ছিলেন।
এরপরই পুলিশকে খবর দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এপিএস। কিছুক্ষণের মধ্যে সচিবালয়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের সহকারী কমিশনার কামরুন নাহার ফোর্স নিয়ে হাজির হন। এরপর সেখানে আসেন সচিবালয় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) রাজিব।
আটক দালাল জাকির হোসেন পুলিশের জেরার মুখে বলেন, ‘মুন্সীগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শরিফুল ইসলামের কথা মতো সচিবালয়ে এসেছি। তিনিই আমাকে মেজর জেনারেল মতিউর রহমানের তদবির নিয়ে পাঠিয়েছেন। তিনিই আমাকে জানিয়েছেন, মেজর জেনারেল গণভবনে বসেন। আমি পোশাকে পুঁতি, কাচসহ বিভিন্ন বস্তু বসানোর কাজ করি। সচিবালয়ের পাস সংগ্রহ করেছি বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জিলানীর মাধ্যমে।’
দালালের বক্তব্যের পর জিলানী নামের ওই কর্মকর্তাকে পুলিশ হাজির করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এপিএসের কক্ষে। দালালকে পাস সংগ্রহ করে দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন তিনি।
মুন্সীগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগাঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শরিফুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক শক্তি আছে, সেনাবাহিনীর কোনও কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে তদবির করবো কেন?’
এদিকে পাবনার ওএসডি ডেপুটি সিভিল সার্জন বাংলা ট্রিবিউনবে ডা. কে এম আবু জাফর বলেছেন, ‘আমার স্টোরকিপার হাসানের মাধ্যমে জাকির হোসেনের সঙ্গে পরিচয় হয়। আমার সমসাময়িক অনেকেই ভারপ্রাপ্ত হিসেবে সিভিল সার্জনের দায়িত্ব পেয়েছেন। আমার পদোন্নতি আটকে আছে। তাই না বুঝে দালালের মাধ্যমে মেজর জেনারেল মতিউর রহমান পরিচয় দেওয়া একজনের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু কখনও যাচাই করে দেখিনি তিনি মেজর জেনারেল কিনা।’
/এসএমএ/জেএইচ/আপ-এআর/