গাজীপুরের শ্রীপুরে বাবা-মেয়ের আত্মহত্যার ঘটনায় নেপথ্যের ধর্ষণকারী এবং বনানীতে দুই তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে, অন্যথায় বনানী থানা ঘেরাওয়ের আলটিমেটাম দিয়েছেন বক্তারা।
বুধবার বিকালে শাহবাগে আয়োজিত এক সমাবেশে ধর্ষণ ও সহিংসতায় জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে এ ঘোষণা দেন বক্তারা।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘এ রাষ্ট্র গণবিরোধী। একটা করে ঘটনা ঘটে। আমরা বারবার এখানে এসে বিচার চাই, কিন্তু বিচার পাই না। রাষ্ট্রের পুরুষতান্ত্রিক চেতনায় যদি পরিবর্তন আনা না যায়, তাহলে এসব অপরাধের বিচার পাওয়া যাবে না। তারপরও বিচার চাইতে হবে এবং একদিন ধর্ষণমুক্ত ও নির্যাতনমুক্ত একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতেই হবে। সারাদেশে ধর্ষণ সহিংসতা প্রতিরোধে ধর্ষকদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে ছাত্র শিক্ষক লেখক শিল্পী সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মীরা এ সমাবেশে অংশ নেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, আমরা এখানে সবাই ক্ষুব্ধ এবং রাগান্বিত। প্রতিদিন দেশে ধর্ষণ হচ্ছে। কিন্তু এর বিচার হচ্ছে না।বনানীতে ধর্ষণের শিকার দুই শিক্ষার্থীর অভিযোগ নিতে দিনের পর দিন সময় ক্ষেপণ করলেন যে পুলিশ কর্মকর্তা, তাকে অবকাশ যাপনের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
এখনও পর্যন্ত রেইনট্রি হোটেলের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নেওয়া, অভিযুক্তদের সম্পর্কে জানা থাকার পরও তাদের গ্রেফতার না হওয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে সমাবেশ থেকে বলা হয়, বিচারহীনতায় ধর্ষণ বাড়ছে। তারা বলেন, বনানীতে ধর্ষণের শিকার হওয়া দুই শিক্ষার্থী মামলা করার মাধ্যমে নিজেদের প্রতিবাদ জারি রেখেছেন। তাদের এই সাহসিকতা অন্যদের বিচার চাওয়ার পথ সুগম করবে। একইসঙ্গে সাংবাদিকদের সংবাদ প্রচারে আরও সংবেদনশীল হওয়ার কথাও বলা হয় সমাবেশ থেকে।
ব্লগার আরিফ জেবতিক গাজীপুরের হযরত আলীর কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘‘কোন পরিস্থিতিতে এসে মেয়েকে নিয়ে আত্মহত্যায় বাধ্য হতে হন পিতা। আমরা ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ১৬ জন মানুষ এখানে একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ করছি, সেটাও জরুরি।’ কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, ‘আমরা এমন এক রাষ্ট্রে বাস করি যারা আইন করে বলছে, ‘তুমি বিয়ে করবে ১৮ বছর বয়স হলে। কিন্তু ধর্ষিত হলে তুমি আরও আগে বিয়ে করবে। এটাও আইন করে দিচ্ছি।’ এই রাষ্ট্র ধর্ষকদের লালন করে। একজন পিতা হিসেবে, ভাই-প্রেমিক, সন্তান-বোন হিসেবে, মা হিসেবে আমরা বারবার দাঁড়াবো। আমরা ধর্ষণমুক্ত একটা রাষ্ট্র দেখতে চাই।’’
আইন ও শালিস কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজ বলেন, ‘আমরা এখানে সবাই ক্ষুব্ধ এবং রাগান্বিত। প্রতিদিন দেশে ধর্ষণ হচ্ছে। শিশুরাও বাদ যাচ্ছে না। কিন্তু এর বিচার হচ্ছে না। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘সংসদে আইন করা হলো, ধর্ষণ হলে বিয়ে দেওয়া যাবে এবং সেই সময় যদি সেই ধর্ষক এই পণ করে যে, সে আর এমন কিছু করবে না এবং নারী উন্নয়নে কাজ করবে, তাহলে তার বিচারও হবে না। এটা আইনে রয়েছে। বলতে বাধ্য হচ্ছি, বর্তমানে আইন করে ধর্ষণকে যুক্তিযুক্ত করে তুলেছি আমরা। এর প্রতিবাদ জরুরি।’
শীপা হাফিজ আরও বলেন, ‘ক্ষোভের বিষয় হলো, ধর্ষকের পরিচয় জানছি কিন্তু তাদের বিচার পাচ্ছি না। নারী হলে তার ওপর সব অন্যায় করা যায়,এটাই যেন নিয়ম হয়ে গেছে। আমরা নারীরা কেবল নিরাপত্তা চাই। নারীকে অপমানের বিচার চাই। এই বিচারহীনতা যদি বন্ধ না হয় তাহলে সামনে কঠিন সময়।’
সমাবেশে উপস্থিত সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব সঙ্গীতা ইমাম বলেন, ‘একেকটি ইস্যু নিয়ে আমরা একত্রিত হই, কিন্তু সমাধান হয় না। এর কারণ হলো, আমরা ঘটনার মূল কারণ খুঁজে বের করি না। রাষ্ট্রকে দোষারোপ করে লাভ নেই। এখানে প্রতিবাদ করে ঘরে যদি পুরুষতন্ত্র চর্চা করি, তাহলে তো কিছু বদলাবে না।’
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকার কর্মী খুশী কবির, সাংবাদিক নেতা নাসিমুন আরা হক মিনু, ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি খান আসাদুজ্জামান মাসুম, ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বলসহ অন্যরা।
এমটি/জেএ/ইউআই/ এপিএইচ/